খ্যাতির শিখরে উঠার প্রতিযোগিতা মানুষের সহজাত। সরকারি চাকরিতে সাফল্যের প্রতিযোগিতায় পুরুষদের পাশাপাশি নারীরাও এগিয়ে যাচ্ছে। সমাজ ব্যবস্থা আর কর্মময় জীবনের সভ্যতা যত এগিয়েছে, সেই সঙ্গে ততোই স্পষ্ট হচ্ছে, নারী বা পুরুষ নয়, কোনো ব্যক্তির কর্ম যোগ্যতার একমাত্র পরিচয় মানুষ। তাই আজ বাংলার নারীর ধূসর আকাশে সাফল্যের আলোর ধ্রুব তারা হয়ে ফুটে উঠেছে। সরকারি চাকরিতে নিয়োজিত হয়ে নীলফামারীর ডোমার উপজেলায় নির্বাহী কর্মকর্তাসহ ৫ নারী সফলতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে এলাকায় ব্যাপক সুনাম অর্জন করছে। এই পাঁচজন হলেন, ডোমার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সাবিহা সুলতানা, সহকারী কমিশনার (ভূমি) ফুয়ারা খাতুন, উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার শাকেরিনা বেগম, উপজেলা মৎস্য অফিসার শারমিন আক্তার ও উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা শাহিনুর বেগম। উপজেলার ৩২টি দফতরের মধ্যে সরকারের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ৫টি দফতরের উপজেলা পর্যায়ে এই ৫ নারী তাদের যোগ্যতা প্রমাণ করে দায়িত্ব পালন করছেন।ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা, বাল্যবিয়ে প্রতিরোধ, জমি জমা বিরোধে নিষ্পত্তি, মাছ চাষে আগ্রহ সৃষ্টি, দরিদ্র নারীদের স্বাবলম্বী হিসেবে গড়ে তোলাসহ এলাকার উন্নয়নে এই ৫ নারী এক প্রান্ত হতে অপর প্রান্ত পর্যন্ত ছুটে চলছেন প্রতিদিন। এছাড়া উপজেলা পরিষদের জরুরি সভাসহ প্রতিটি কর্মকাণ্ডে সভা সেমিনার করছেন তারা। স্বামী সংসার থাকলেও তাদের সরকারি কাজে দায়িত্ব পালনে কোনো বিঘ্ন ঘটে না।১০টি ইউনিয়ন নিয়ে ডোমার উপজেলার সাধারণ মানুষ প্রতিটি কাজে এই নারীদের সহযোগিতা গ্রহণ করেন। এই ৫ নারী কর্মকর্তারা সকলেই বিসিএস ক্যাডার।খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সাবিহা সুলতানা ২০০৮ সালের ১৩ নভেম্বর সরকারি চাকরিতে প্রবেশ করেন সহকারী কমিশনার হিসেবে। তিনি পদোন্নতি পেয়ে ২০১৪ সালের ১ জুন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও ) হিসেবে ডোমার উপজেলায় যোগদান করেন। ফুয়ারা খাতুন ২০১২ সালের ৩ জুন সরকারি চাকরিতে প্রবেশ করে পদোন্নতি পেয়ে ২০১৬ সালের ২৪ আগস্ট ডোমার উপজেলায় সহকারী কমিশনার (ভূমি) হিসেবে যোগদান করেন। এছাড়া শাহিনুর খাতুন ২০১৫ সালের ১৭ ডিসেম্বর ডোমার উপজেলায় মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা হিসেবে চাকরি শুরু করেন।শারমিন আক্তার ২০১৬ সালের ১৩ অক্টোবর উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা হিসেবে প্রথম ডোমার উপজেলায় যোগদান করেন। শাকেরিয়া বেগম ২০১৬ সালের ৪ ডিসেম্বর ডোমার উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। এই ৫ নারী কর্মকর্তা ডোমার উপজেলার স্থানীয় বাসিন্দা না হলেও সরকারি চাকরির দায়িত্ব পালন করতে এসে তারা ডোমার উপজেলাবাসীকে নিজের মতো ভেবে উন্নয়ন কর্মকাণ্ড পরিচালনা করছেন। এই ৫ নারী কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন নিয়ে উপজেলা চেয়ারম্যান আব্দুর রাজ্জাক বসুনিয়া জাগো নিউজকে বলেন, তারা অত্যন্ত আন্তরিক। তাদের দায়িত্বপূর্ণ কাজ দেখে অবাক হতে হয়। নারী হয়েও তারা দিন রাত কাজ করছেন।ডোমার পৌরসভার মেয়র মনজুরুল ইসলাম দানু জাগো নিউজকে বলেন, দেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একজন নারী। তিনি গোটা দেশ পরিচালনা করছেন। নারী নেত্রী প্রধানমন্ত্রীর মতো আজ আমরা ডোমারবাসী উপজেলা পরিষদে ৫টি গুরুত্বপূর্ণ দফতরে ৫ জন নারী কর্মকর্তা পেয়েছি। তারা তাদের প্রতিটি কাজে কর্মে সাফল্য দেখিয়ে চলছেন।ডোমার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সাবিয়া সুলতানা জাগো নিউজকে বলেন, আমি ডোমার উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছি। ডোমারের সকল পেশার মানুষজন আমাকে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সহযোগিতা করছে। যার কারণে ডোমার উপজেলার উন্নয়নে আমার কাজের গতি বাড়িয়ে দিয়েছে। অপর ৪ নারী কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলা হলে তারা বলেন, ডোমার উপজেলা হলো একটি শান্তিপূর্ণ এলাকা। এখানকার মানুষ সহজ সরল। তাদের সকলের সহযোগিতায় ডোমার উপজেলায় গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালনে কোনো সমস্যা সৃষ্টি হয় না। বরং কাজের গতি বাড়িয়ে আমরা কাজ করে যাচ্ছি।জাহেদুল ইসলাম/এএম/জেআইএম
Advertisement