৮ মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবস। সারা বিশ্বে এই দিবস পালিত হয় জমকালো আয়োজনের মধ্য দিয়ে। দিবসটি উদযাপনের পেছনে রয়েছে নারী শ্রমিকের অধিকার আদায়ের সংগ্রামের ইতিহাস। পরে সিদ্ধান্ত হয় নারীদের সম-অধিকার দিবস হিসেবে দিনটি পালিত হবে। দিবসটি পালনে এগিয়ে আসে বিভিন্ন দেশের সমাজতন্ত্রীরা। ১৯১৪ খ্রিষ্টাব্দ থেকে বেশ কয়েকটি দেশে ৮ মার্চ নারী দিবস পালিত হয়। বাংলাদেশ ১৯৭৫ সাল থেকে নারী দিবস পালন করছে।নারী দিবস পালন করলেও আদৌ কি নারীরা সম-অধিকার পাচ্ছে? নারীদের অধিকার নিয়ে কথা বলতে গেলেই প্রথমে প্রশ্ন আসে, ‘তুমি মেয়ে, তুমি কখনোই এই কাজ পারবে না। মেয়েরা সব কাজ পারে না।’ এই মতাদর্শ আদিকাল থেকেই লালিত হচ্ছে। একটি শিশুর জন্ম একটি পরিবারের জন্য অনাবিল আনন্দ বয়ে আনে। পরিবারে প্রথম সন্তান হোক কিংবা জ্যেষ্ঠ সন্তান। আনন্দের মাত্রা সবখানেই সমান থাকে। কিন্তু এই আনন্দের মাঝেও কখনো কখনো ভেদাভেদ থাকে। আর এই ভেদাভেদটা সৃষ্টি হয়, যখন পরিবারে কন্যাসন্তানের আগমন ঘটে। পরিবারে সবার আনন্দ থাকলেও কন্যাসন্তানের ভবিষ্যৎ নিয়ে নানা চিন্তার সৃষ্টি হয়।ছেলেসন্তান এবং মেয়েসন্তানের পার্থক্য আজ নতুন নয়। যদিও অনেকাংশেই এখন ভেদাভেদের তারতম্য কমেছে। কালের বিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে চিন্তার নতুন রূপ ধারণ করেছে পুরনো অভ্যাসের আড়ালে। এখন একটি কন্যাশিশুর আগমনে পরিবারের মানুষের মুখে ও মনে আনন্দের ব্যাপার কাজ করলেও সঙ্গে সঙ্গে জন্ম নেয় অসংখ্য চিন্তা। শিশু বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বড় হতে থাকে এই চিন্তাগুলো। আকারে ও পরিসরে বড় হওয়ার সঙ্গে ব্যাপারগুলো দাগ কাটতে থাকে সেই শিশুসন্তানটির কোমল মনের উপর এবং এই ব্যাপারগুলো কেবল দাগই কাটে না বরং একটা নির্দিষ্ট জায়গা করে নেয়। যা তাকে ভবিষ্যতে নিজেকে সাবলম্বী করতে পদে পদে বাধার দেয়াল ডিঙাতে হয়।ছোটবেলা থেকেই কন্যাশিশুটি বুঝতে পারে, তার জন্য এই পৃথিবীতে প্রত্যেক ক্ষেত্রেই স্থান ভাগ করে দেয়া আছে। হোক তা বাড়ি বা খেলার মাঠ কিংবা পাঠশালা। আর এই প্রতিবন্ধকতাগুলোকে সঙ্গে নিয়ে যখন কন্যাশিশুটি বড় হতে থাকবে, তখন তার মধ্যে গুটিয়ে যাবে তার প্রতিভা, তার মতামত প্রকাশের ভাষা ও নেতৃত্বদানের ক্ষমতা। শহরে এই বাধাগুলো ধীরে ধীরে কেটে গেলেও গ্রামে এই বাধা উপেক্ষা করতে পারছে না কোনো নারী, কন্যাশিশু কিংবা বালিকা। অথচ একজন মানুষ হিসেবে নিজেকে সর্বশ্রেষ্ঠভাবে গড়ে তুলতে মতামত প্রকাশের স্বাধীনতা দরকার সবচেয়ে বেশি।আগেই বিজ্ঞানীরা প্রমান করেছেন, শিশুরা যার সঙ্গে বড় হবে সেটাকেই সে অনুকরণ করবে। মানুষ প্রাণীর সঙ্গে বসবাস করলে তার আচরণ হবে ওই প্রাণীর মতোই। বিখ্যাত চলচ্চিত্র মুগলি কিংবা টারজানে আমরা তা দেখেছি। তাই একটি কন্যাশিশু যখন বড় হতে হতে দেখে যে তার আগের প্রজন্মের মেয়েরা কিছু বাধা পেরিয়ে বড় হচ্ছে; তখন তার মস্তিষ্কে সে বাধাগুলো অনুকৃত হতে থাকে। আর এমনটি না হলে শিশু ভুগবে সিদ্ধান্তহীনতায়। জীবনের ছোট ছোট কাজে সে সিদ্ধান্ত নিতে হিমশিম খাবে। তার মধ্যে কাজ করবে অজানা ভয়। নিজেকে গুটিয়ে রাখতে অভ্যস্ত হবে সবসময়ের জন্য।শিশুকালের গণ্ডি পেরিয়ে যে শিশুটি পা দেয় এক নতুন পৃথিবীতে। যা তার জন্য সবচেয়ে কঠিন সময়, আর এই সময় তার প্রতি তার পরিবারের এ অনাকাঙ্ক্ষিত আচরণ তার মধ্যে আরো ভয় বাড়িয়ে দেবে। নিজের চাহিদা এবং চাওয়া কিংবা মনের কথাগুলো পরিবারের কারও সঙ্গে ভাগাভাগি না করাতে সে ভুগবে সিদ্ধান্তহীতায় যা তাকে কোনো খারাপ পথে টেনে নিতে সহায়তা করে।ধীরে ধীরে সময়ের সঙ্গে পা ফেলে একজন কন্যাশিশু থেকে বালিকা এবং তা পেরিয়ে রূপ নেয় পূর্ণাঙ্গ নারীতে। আর এই সময় তার মনে নতুন করে যোগ হয় কর্মক্ষেত্রের প্রতিবন্ধকতা। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই একজন নারীকে তার কর্মক্ষেত্রে সব স্বাধীনতাকে বলি দিতে হয়। কর্মক্ষেত্রে নতুন করে যোগ হয় নিরাপত্তার চিন্তা। একজন নারী বলে কর্মক্ষেত্রে তাকে সব কাজে সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হয় না। এতে একজন নারী কর্মক্ষেত্রের প্রতি আস্থা হারিয়ে ফেলে। মনের অঢেল ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও অনেক ক্ষেত্রে নারীরা পিছিয়ে, অথচ একজন নারী তার মতানুসারে কর্মক্ষেত্রে কাজ করতে পারলে সেখানে সে সফল হবে খুব সহজেই। মন থেকে করা একটি কাজে থাকে অদম্য ইচ্ছা আর নতুন চেতনা। যা মানুষটিকে করে সৃজনশীল ও কাজটিকে করে সফল।তাই শুধু একজন নারী হিসেবে নয়, মানুষ হিসেবে তাকে উচিত পরিবারের পূর্ণ স্বাধীনতা দেওয়া, তার উপর আস্থা রাখা। তবে স্বাধীনতা দেওয়ার পর বুঝতে হবে সে নারী কোন খারাপ পথে যাচ্ছে কিনা। সেই ক্ষেত্রে তার মতামতগুলো গুরুত্বের সঙ্গে গ্রহণ করা এবং তার মতামতকেও অন্যান্য সদস্যের মতো করে সমগুরুত্ব দেওয়া। তার সঙ্গে বন্ধুসুলভ আচরণ করা। বিশেষ করে মা’কে তার কন্যাশিশুর পাশে থাকাটা গুরুত্বপূর্ণ। তবেই একজন নারী হতে পারবেন সফল এবং দেশ ও পরিবারের জন্য কল্যাণকর সদস্য।এসইউ/জেআইএম
Advertisement