নারীর মর্যাদা ও সম্মান পরিপূর্ণভাবে প্রতিষ্ঠা করেছে ইসলাম। যা কুরআনে সুস্পষ্টভাবে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। ইসলামের বিরুদ্ধে বড় বড় স্লোগান দেয়া হয় যে, ইসলাম নারীকে সঠিক মর্যাদা দেয়নি বরং ঠকিয়েছে। অথচ যারা এ অপবাদ দেয়, তাদের পরিবার ও গণ্ডির মধ্যেই নারীদের মর্যাদা ও অধিকার সুরক্ষিত নয়।ইসলাম নারীকে যে মর্যাদা দিয়েছে তা অনুধাবন করতে হলে অতীতের ইউনানি সমাজ, রোমান সমাজ, ইয়াহুদি সমাজ, খ্রিস্টান সমাজ, বৌদ্ধ সমাজ, আইয়্যামে জাহেলিয়াতের সময়কালসহ হিন্দু সমাজের নারীদের অবস্থানের দিকে তাকাতে হবে।ইসলাম নারীদের যে মর্যাদা ও অধিকার দিয়েছে তার পার্থক্য নিরূপণ করতে হলে পূর্ববর্তী সব সমাজের নিয়ম-কানুনের সঙ্গে কুরআন-সুন্নাহর বক্তব্য মিলিয়ে দেখলেই তা প্রকাশ পেয়ে যাবে।আল্লাহ তাআলা পুরুষের জন্য যতগুণ ও মর্যাদা নিরূপণ করেছেন, ঠিক সঙ্গে সঙ্গে নারীদেরও সেসব গুণ ও মর্যাদায় শামিল রেখেছেন। তাদের উভয়ের জন্যই ক্ষমা ও পুরস্কারের ঘোষণা দিয়ে আল্লাহ তাআলা বলেন-‘নিশ্চয় মুসলমান পুরুষ, মুসলমান নারী, ঈমানদার পুরুষ, ঈমানদার নারী, অনুগত পুরুষ, অনুগত নারী, সত্যবাদী পুরুষ, সত্যবাদী নারী, ধৈর্যশীল পুরুষ, ধৈর্যশীল নারী, বিনীত পুরুষ, বিনীত নারী, দানশীল পুরুষ, দানশীল নারী, রোজা পালনকারী পুরুষ, রোজা পালনকারী নারী, যৌনাঙ্গ হেফাযতকারী পুরুষ,, যৌনাঙ্গ হেফাযতকারী নারী, আল্লাহর অধিক জিকিরকারী পুরুষ ও জিকিরকারী নারী-তাদের জন্য আল্লাহ প্রস্তুত রেখেছেন ক্ষমা ও মহাপুরস্কার।’ (সুরা আহজাব : আয়াত ৩৫)।আবার ইসলামের আগমনের পূর্বে একটা সময় এমন করুণ ছিল যে, কন্যাসন্তান জন্মগ্রহণ করাকে কুলক্ষণে, দুঃসংবাদ, লজ্জা এবং দারিদ্র্যতার কারণ মনে করা হতো। যে কারণে তারা তাদের সদ্য জন্ম নেয়া এসব নিষ্পাপ কন্যাসন্তানদের জীবন্ত মাটি চাপা দিতো। ওই সব লোকদের ধিক্কার জানিয়ে আল্লাহ বলেন-‘আর যখন সুসংবাদ দেয়া হয় তাদের কাউকে কন্যাসন্তানের, তার মুখমণ্ডল কালো হয়ে যায় আর সে হয় বড়ই ব্যথিত। সে মুখ লুকায় লোকদের থেকে, তাকে যে সুসংবাদ দেয়া হয়েছে তার গ্লানির কারণে। সে কি একে (জীবিত) রাখবে বেইজ্জতি সত্ত্বেও, না তাকে পুঁতে রাখবে (জীবন্ত কবর দিবে) মাটিতে। তাদের ফায়সালা কতইনা নিকৃষ্ট।’ (সুরা নহল : আয়াত ৫৮-৫৯)পরিশেষে…নিঃসংকোচে এ কথা বলা যায় যে, ইসলাম ছাড়া অন্যান্য সব সমাজেই নারীদের অবস্থান ছিল এক কথায়, পণ্য-দ্রব্যের মতো। অর্থাৎ বাজারে যেভাবে জিনিসপত্র বিকিকিনি হয়, নারীরাও সমাজে এভাবে বিকিকিনি হতো। কোনো কিছুতেই তাদের কোনো স্বাধীনতা বা ন্যূনতম মর্যাদা ছিল না।এমনকি নারীরা নিজেদের যেকোনো ধরনের জুলুম অত্যাচার থেকে মুক্ত করতে স্বেচ্ছায় নিজেদের তালাক গ্রহণের অধিকারও সংরক্ষণ করতে পারত না। ইসলাম পূর্ব আইয়ামে জাহিলিয়াতের যুগে নারীদের সামাজিক প্রয়োজনে উপহার হিসেবে অন্যের হাতে তুলে দেয়াসহ কন্যাসন্তানদের জীবন্ত কবর দেয়া হতো। এক কথায় নারীদের বাঁচা-মরা পুরুষের হাতে নিয়ন্ত্রণ হতো।এসব কিছু থেকে নারীকে মুক্তি দিতে ইসলামই সুস্পষ্ট নির্দেশনা জারি করেছে। তাদের সর্বপ্রকার অধিকার ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠা করেছে ইসলাম।আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে নারীদের অধিকার ও মর্যাদা রক্ষার আন্দোলনে সব সময় একনিষ্ঠ থাকার তাওফিক দান করুন। কুরআন ও সুন্নাহর বিধান বাস্তবায়নে নারীদের যথাযথ মর্যাদা ও অধিকার প্রতিষ্ঠায় অটল ও অবিচল থাকার তাওফিক দান করুন। ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র ও আন্তর্জাতিকভাবে নারীর মর্যাদা ও অধিকার প্রতিষ্ঠায় কুরআনের বিধান যথাযথ বাস্তবায়ন করার তাওফিক দান করুন। আমিন।এমএমএস/জেআইএম
Advertisement