মেয়েরা ঘরে বাইরে দুই জায়গাতেই ভালো করতে পারে। আর এ দুটির সমন্বয়ের জন্য অবশ্যই দরকার। এ পরিবেশ বজায় রাখতে আমাদের সকলকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। এখন সিভিল প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন, সামরিক বাহিনী থেকে শুরু করে সর্বত্রই মেয়েরা নিজেদের জায়গা করে নিচ্ছে। কোথাও বৈষম্য করার সুযোগ নেই। করা যাবেও না বলে মন্তব্য করেছেন হবিগঞ্জের জেলা প্রশাসক সাবিনা আলম। বিশ্ব নারী দিবস উপলক্ষে জাগো নিউজের সঙ্গে একান্ত আলাপচারিতায় তিনি তুলের ধরেন নিজের জীবনের সফলতার চিত্র।জেলার সর্বোচ্চ কর্মকর্তার চেয়ারে নিজেকে আসীন করতে পেরে গর্ববোধ করেন জানিয়ে তিনি বলেন, এ জায়গা থেকে মানুষের জন্য কাজ করার অনেক সুযোগ আছে। আমি সে সুযোগ পেয়েছি। তা কাজে লাগিয়ে মানুষের মনে জায়গা করে নিতে চাই। আমাকে দেখে অনেকেই উৎসাহ বোধ করে। তা দেখে আমি আরও বেশি উৎসাহিত হই।নিজের শিক্ষাজীবনের চিত্র তুলে ধরে জেলা প্রশাসক সাবিনা আলম বলেন, নিজ জেলা ঠাকুরগাঁওয়েই শিক্ষার হাতেখড়ি। প্রাইমারি পড়েছেন ঠাকুরগাঁও পিটিআই স্কুলে। ঠাকুরগাঁও সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক ও ঠাকুরগাঁও সরকারি কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেন। পদার্থ বিদ্যায় স্নাতক ও স্নাতকত্তর দুটোই করেছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। দু’টোতেই ছিল প্রথম বিভাগ। শিক্ষাজীবনে কোথাও তাকে বেতন দিতে হয়নি। কারণ প্রাইমারি থেকে শুরু করে সম্মান পর্যন্ত সব সময়ই তার ছিল স্কলারশিপ। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি হওয়ার পর প্রথমে তাকে কেউ চিনতো না। প্রথম বর্ষের পরীক্ষাতেই তিনি প্রথম বিভাগ পান। এতেই সবাই তাকে চিনে যায়। আর তা থেকে আরও অনেক বেশি অনুপ্রেরণা পান তিনি। অনার্স এবং মাস্টার্স দুটোতেই প্রথম বিভাগ পান। সে থেকে আরও ভাল কিছু করার স্বপ্ন দেখেন তিনি।নিজের সফলতার অনুপ্রেরণা সম্পর্কে জানতে চাইলে ডিসি সাবিনা আলম জানান, মা-বাবাই তার সব স্বপ্নের মূল অনুপ্রেরণা। মা ছোটবেলা থেকেই স্বপ্ন দেখাতেন। কখনই ভাই-বোনদের মধ্যে পার্থক্য করেননি। উভয়কেই সমানভাবে দেখতেন। সমান অনুপ্রেরণা দিতেন। সমানভাবে স্বপ্ন দেখাতেন। তিনি বলেন, আমিও ছেলে মেয়ের মাঝে পার্থক্য করি না। আর সন্তানের সাফল্যের নেপথ্যে মূল ভূমিকাই থাকে মা-বাবার। বৈষম্য না করলে সন্তানরা অবশ্যই সফল হবে।হবিগঞ্জে জেলা প্রশাসক হিসেবে যোগদানের পর থেকে অন্তহীন সফলতা রয়েছে সাবিনা আলমের। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সফলতার মাঝে রয়েছে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিশুদের জন্য মিড ডে মিল (দুপুরে বিদ্যালয়ে খাবারের ব্যবস্থা করা) চালু করা। ইতোমধ্যেই জেলার ৪৪৮টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এ মিড ডে মিল চালু করা হয়েছে। আগামী জুন মাসের মাঝে তা শতভাগ করার লক্ষ্য নিয়েছেন বলে জানান তিনি। তার সময়েই বাল্যবিয়ে মুক্ত করা হয়েছে এ জেলাকে। ইভটিজিং রোধে নিয়েছেন কঠোর অবস্থান। ইতোমধ্যে তা নিয়ন্ত্রণেও নিয়ে এসেছেন। পুরো জেলা স্যানিটেশনের আওতায় আনতে জোর প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। গ্রামগঞ্জসহ সর্বত্র নারীদের উন্নয়নে নিয়েছেন নানা কার্যক্রম। তাদের সচেতনা বৃদ্ধির লক্ষ্যে বিভিন্ন উপজেলায় ঘুরে তাদের নিয়ে মতবিনিময় করছেন। কর্মক্ষেত্রে কোথাও কোনো বাধার সম্মূখিন হননি বলেও জানান তিনি।এক ছেলে ও এক মেয়ের জননী এ জেলা প্রশাসক তুলে ধরেন নিজের সংসার জীবনের কথাও। জানান, মেয়ে উত্তরা মাইলস্টোন কলেজে এইচএসসি পড়ছে। আর ছেলে রাজুক উত্তরা মডেল কলেজের নবম শ্রেণির ছাত্র। তার স্বামী বদরে মুনির ফেরদৌস নোয়াখালীর জেলা প্রশাসক হিসেবে কর্মরত আছেন। ইতোমধ্যে তিনি যুগ্ম সচিব পদে পদোন্নতি পেয়েছেন। শুধু নিজের কর্মক্ষেত্র নয়, সংসার জীবনেও তিনি যথেষ্ট সফল। দু’টোই তিনি যথেষ্ট দক্ষতার সঙ্গে সামাল দেন।নতুন প্রজন্মের জন্য তার কি বলার আছে তা জানতে চাইলে মহিয়সী এ নারী জানান, প্রথমেই লক্ষ্য ঠিক করতে হবে। লক্ষ্য ঠিক রেখে সব বাধা অতিক্রম করে এগিয়ে যেতে হবে। এর কোনো বিকল্প নেই। এখন আর থেমে থাকার সুযোগ নেই। মেয়েরা যেমন ঘরে, তেমনি বাইরে। সব কাজেই পারদর্শী। লক্ষ্য ঠিক থাকলে দুই জায়গায়ই তারা ভালো করতে পারে।এফএ/আরআইপি
Advertisement