বিশেষ প্রতিবেদন

‘বাংলাদেশ নারী উন্নয়নে পিছিয়ে থাকতে পারে না’

বিশ্বের ক্ষমতাধর নারীর তালিকায় যে দেশের প্রধানমন্ত্রীর নাম রয়েছে, সে দেশ নারীর উন্নয়নে পিছিয়ে থাকতে পারে না।দৃঢ়তার সঙ্গে কথাগুলো বলছিলেন সাইদা মুনা তাসনিম। যিনি সফলতার সঙ্গে পালন করছেন থাইল্যান্ডে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতের দায়িত্ব। এছাড়া প্রজ্ঞার সঙ্গে নেতৃত্ব দিচ্ছেন জাতিসংঘের এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অর্থনৈতিক ও সামাজিক কমিশনে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি হিসেবেও।দীর্ঘ ২৪ বছরের চাকরি জীবনে দায়িত্ব পালন করেছেন কূটনীতির নানা অঙ্গনে। নন ট্রাডিশনাল ও কৌশলগত বিষয়ে একের পর এক দক্ষতার স্বাক্ষর রেখে চলা অভিজ্ঞ এই কূটনীতিক বাংলাদেশের জন্য ব্যতিক্রমী এক উদাহরণ বটে।আন্তর্জাতিক নারী দিবসে জাগো নিউজের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, ২০১৬ সালে প্রভাবশালী ফোর্বস ম্যাগাজিনের করা বিশ্বের ক্ষমতাধর ১০০ নারীর তালিকায় ৩৬তম অবস্থানে রয়েছেন শেখ হাসিনা। বিশ্বের অন্যতম ক্ষমতাধর এই প্রধানমন্ত্রীর দেশের নারীরা কেন পিছিয়ে থাকবে।তিনি বলেন, কিছুদিন আগেও মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ হিসেবে বাংলাদেশকে ভিন্ন চোখে দেখা হতো। তবে চিরাচরিত প্রথা ভেঙে সে দেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাই এখন নারীর ক্ষমতায়নে বিশ্বের কাছে রোল মডেল।তার মতে, প্রধানমন্ত্রীর মতই দেশের প্রত্যেক নারীকে নন ট্রাডিশনাল কাজে উৎসাহিত হতে হবে।কীভাবে সেটা সম্ভব এমন প্রশ্নের উত্তরে দীর্ঘ কূটনীতিক জীবনে নন ট্রাডিশনাল কাজের উদাহরণ দেন রাষ্ট্রদূত মুনা। তিনি বলেন, ‘নন ট্রাডিশনাল’ কাজ বা পদগুলো নারীর জন্য নয় বলে একটা পুরুষতান্ত্রিক ধারণা সমাজে রয়েছে। সেই শৃঙ্খল থেকে বেরিয়ে আসতে হবে নারীদেরকেই। অবদান রাখতে হবে কৌশলগত অর্থনৈতিক সিদ্ধান্তে। তবেই আমূল পাল্টাবে এই সমাজ।জাতিসংঘের এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অর্থনৈতিক ও সামাজিক কমিশনে স্থায়ী প্রতিনিধি হিসেবে প্রথম নারী এই কূটনীতিক থাইল্যান্ডে বসেই বিশ্ব অঙ্গনে বাংলাদেশের সাফল্যগুলোকে তুলে ধরে যাচ্ছেন নানা কূটনৈতিক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে।তার কাছে, শুধুমাত্র প্রতিনিধি হিসেবে দায়িত্ব পালন নয়, আঞ্চলিক নীতি নির্ধারকের ভূমিকায় বাংলাদেশকে নেতৃত্বের স্থানে আনাই প্রথম লক্ষ্য। লাল সবুজ পতাকাকে নতুন উচ্চতায় আনতে অবিরাম কাজ করে যাচ্ছেন এই নারী।সম্প্রতি জাতিসংঘের এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অর্থনৈতিক ও সামাজিক কমিশনে প্রথমবারের মত ব্লু ইকোনমি ইস্যুতে একটি রেজুলেশন পাশ হয়েছে। যার নেতৃত্বে ছিলো বাংলাদেশ। রাষ্ট্রদূত মুনার ঐকাত্মিক চেষ্টা আর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতায় এই রেজুলেশনে সমর্থন দিয়েছে ভারতের মত দেশ। যাদের কাছ থেকে বিরাট সমুদ্র সীমানা জয় করেছে বাংলাদেশ। এই তালিকায় রয়েছে অস্ট্রেলিয়াও।শুধু তাই-ই নয়, আসছে মে মাসের বৈঠকেও এশিয়ান হাইওয়ের সংশোধনী চেয়ে এশিয়া প্যাসেফিক ইনফরমেশন সুপার হাইওয়ে করার প্রস্তাব দেবে বাংলাদেশ। পুরো প্রক্রিয়াটি খুব জটিল ছিল জানিয়ে মুনা বলেন, একাধিক মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সমন্বয় করেই এই সংশোধনী প্রস্তাব আনা হচ্ছে।এ ধরনের অসংখ্য কৌশলগত কাজের অর্জন জমা হয়েছে রাষ্ট্রদূত মুনার সফলতার খাতায়। দেশ সেবার এমন সুযোগ প্রতি মুহুর্তে কাজে লাগাতে চান তিনি।রাষ্ট্রদূত মুনা বলেন, লাল সবুজ পতাকার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাতে দেশে সেবার বিকল্প নেই। এখানে নারী-পুরুষ সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। চিরাচরিত পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।এশিয়ান ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির (এআইটি) ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য সাইদা মুনা তাসনিমের প্রচেষ্টায় প্রতিষ্ঠানটিতে বঙ্গবন্ধুর শেখ মুজিবের নামে চেয়ার প্রতিষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। সেখানে প্রতিবছর দেশের একজন স্কলার এনার্জি বিষয়ে গবেষণা করার সুযোগ পাবে।বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) থেকে পাশ করে প্রকৌশল পেশাকে বেছে নিলেও তৎকালীন অতিরিক্তি সচিব বাবার আগ্রহে পাবলিক সার্ভিস পরীক্ষায় বসেন মুনা তাসনিম। বিসিএস একাদশ ব্যাচে মেধা তালিকায় দ্বিতীয় হয়ে তিনি পররাষ্ট্র ক্যাডারে যোগ দেন ১৯৯৩ সালে। জেপি/এমএমজেড/আরআইপি

Advertisement