বিশেষ প্রতিবেদন

দেশের প্রথম নারী ট্রেনচালক ছালমার গল্প

ছালমা খাতুন। দেশের  প্রথম নারী ট্রেনচালক। প্রচলিত পেশার বাইরে ছালমা খাতুন নিজের ইচ্ছাতেই ট্রেনচালক হিসেবে কাজ শুরু করেন। ২০০৪ সালে সহকারী লোকোমাস্টার হিসেবে কর্মজীবন শুরু। আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে নারীদের এগিয়ে যাওয়ার গল্প শুনাতে ছালমা খাতুনের মুখোমুখি হয় জাগো নিউজ। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন জাগো নিউজের নিজস্ব প্রতিবেদক আবু সালেহ সায়াদাত।জাগো নিউজ : গতানুগতিক পেশার বাইরেও সাহসী দায়িত্ব পালনে নারীরাও যে পারদর্শী তার প্রমাণ দিয়েছেন আপনি।  এ পেশার শুরুর গল্পটা শুনতে চাই।ছালমা খাতুন : যেদিন প্রথম কাজ শুরু করলাম তখন মনে কিছুটা ভয় কাজ করেছিল। নতুন জায়গা, নতুন চাকরি মানিয়ে নিতে পারবো কি না এ চিন্তা ছিল। ভাইয়ের উৎসাহেই রেলওয়েতে পরীক্ষা দিয়েছিলাম। ২০০৪ সালের মার্চে রেলওয়েতে যোগ দিয়ে প্রথমে ট্রেনচালকে সহযোগিতা করতাম। নিয়োগের প্রথম দুই বছর চট্টগ্রামে প্রশিক্ষণ একাডেমি, পাহাড়তলী ও ঢাকা  লোকোমোটিভ শেডসহ বিভিন্ন ওয়ার্কশপে হাতে-কলমে শিক্ষা নেই। দুই বছরের প্রশিক্ষণ শেষে ঢাকা লোকোমোটিভ বিভাগে যোগ দিয়ে গত কয়েক বছর ধরে ট্রেন চালিয়ে যাচ্ছি। প্রথম দিকে সমাজের অনেকেই বলতো এ কেমন পেশায় গেছে ছালমা। নারী হিসেবে এ পেশায় যাওয়া ঠিক হয়নি। অনেকেই অনেক রকম কথা বলতো। এসব মেনে নিয়ে  এগিয়ে চলেছি। এখনও অনেকে বিস্মিত আবার অনেকে  মুগ্ধ।অনেকেই এ বিষয়ে নানা প্রশ্ন করেন।জাগো নিউজ : সাহসী এবং চ্যালেঞ্জিং পেশার প্রথম দিকের অভিজ্ঞতা কেমন ছিল?ছালমা খাতুন : প্রথম দিকে নারী ট্রেনচালককে দেখে যাত্রী-সাধারণ খুবই অবাক হতো। তখন খুবই এনজয় করতাম। তবে যারা আমার সঙ্গে কাজ করে তারাও  অবাক হতো। ট্রেনচালক হিসেবে যেখানেই  যেতাম আশপাশের সবাই খুব আগ্রহ নিয়ে আমাকে দেখতো।জাগো নিউজ : চ্যালেঞ্জিং এ পেশার বাইরে আপনার সংসার আছে। দুদিকেই ঠিক রাখতে সমস্যা হয় কী?ছালমা খাতুন :  শুধু ট্রেন চালানোই নয়, আমাদের শিখতে হয় যান্ত্রিক ও কারিগরি অনেক বিষয়ও। সব কিছু মিলিয়ে আসলেই অনেক  চ্যালেঞ্জিং পেশা। সারাদিন কাজ শেষ করে বাসায় ফিরে রান্নাবান্নাসহ সংসারের অন্যান্য কাজ করতে হয়। এ ক্ষেত্রে আমার স্বামী ও ছোট বোন আমাকে অনেক সহযোগিতা করে। একজন নারী হিসেবে সংসার ঠিক রাখছি অন্যদিকে কর্মক্ষেত্রে নিজের দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করে যাচ্ছি।নারী যদি সামনে এগিয়ে যাওয়ার প্রত্যয় নেয় তাকে কেউ আটকাতে পারে না। আর ট্রেনচালক হিসেবে যোগদান করতে পেরে আমি গর্বিত।  এ পেশা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ জেনেও চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছি। জাগো নিউজ : আপনার এবং পরিবার সম্পর্কে বলুন।ছালমা খাতুন : কবি নজরুল সরকারি কলেজ থেকে মাস্টার্স করেছি। কৃষক বাবা বেলায়েত হোসেন ও গৃহিণী মা তাহেরা খাতুনের পাঁচ সন্তানের মধ্যে চতুর্থ আমি। স্বামী হাফিজ উদ্দীন জজকোর্টে কাজ করেন। লাবণ্য নামের  এক কন্যা সন্তান রয়েছে।  জাগো নিউজ : আন্তর্জাতিক নারী দিবসে নারীদের উদ্দেশ্যে কিছু বলার আছে?ছালমা খাতুন : সমালোচনায় কান না দিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে।তাহলে নারীরা অনেক ভালো কিছু করতে পারবে। পারিবারিক সমস্যার কারণে নারীদের কর্মক্ষেত্রে প্রবেশের ক্ষেত্রে সমাজ এখনো অনেকটা নেতিবাচক। কিন্তু মন শক্ত করে সামনে এগিয়ে যাওয়ার প্রত্যয় নিলেই নারীদের এগিয়ে যাওয়া কেউ আটকে রাখতে পারবে না।জাগো নিউজ : জাগো নিউজকে সময় দেয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।ছালমা খাতুন: জাগো নিউজকেও ধন্যবাদ।এএস/এএইচ/এমএস

Advertisement