নকশিকাঁথা সফলতা বয়ে এনেছে চাঁপাইনবাবগঞ্জের তাহরিমা বেগম লাকির জীবনে। শুধু কাঁথাতেই নয়, সুঁই সুতা দিয়ে নিজের সংসার জীবনকেও স্বাবলম্বী করে তুলেছেন। পাশাপাশি কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করেছেন আড়াই হাজার নারীর।বিএ পাশ করেও চাকরি হয়নি। স্বামী দেশের বাইরে থাকায় সময় কাটতোনা। এসময় শাশুড়ির অনুপ্রেরণায় শহরের মহিলা কল্যাণ সমিতিতে ট্রেনিং নিয়ে ১৯৮৪ সালে শুরু করেন নকশিকাঁথা সেলাই করা। বউ-শাশুড়ি মিলে বাড়িতে বিভিন্ন ধরনের কাঁথা সেলাই করতেন এবং সমিতির মাধ্যমে কাঁথাগুলো বিক্রি করতেন। ওই সময় মহানন্দা ব্রিজ তৈরি হচ্ছিল সেখানে দেশ বিদেশের লোকজন কাজ করতো তারা এসব নকশিকাঁথা দেখে কিনে নিয়ে যেত। এভাবেই প্রচার শুরু হয়। চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় পর্যায়ক্রমে স্থানীয় নারীদের দিয়ে কাঁথা, বিছানার কভার, ওয়াল ম্যাট, থ্রি-পিসসহ বিভিন্ন ধরনের নকশি উপহার সামগ্রী তৈরি শুরু করেন। পরে তার স্বামী এসএম আব্দুল বাকি দেশে ফিরে এসে তাহরিমাকে বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করেন। এরপর আর ফিরে দেখতে হয়নি তাহরিমাকে। বর্তমানে প্রায় আড়াই হাজার নারী তার অধিনে কাজ করেন। এখন নিজ দেশ পেরিয়ে ভারত, নেপাল, ভুটানসহ কয়েকটি দেশের বাণিজ্য মেলায় অংশগ্রহণ করেন তারা। এছাড়াও ঢাকা ও চট্টগ্রামের বিভিন্ন মেলায় অংশগ্রহন করেন এবং দেশের অনেক সেনানিবাসে উপহার সামগ্রী হিসেবে এসব নকশি কাঁথা কিনে নিয়ে যায়। চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহরের বড় ইন্দারা মোড়ে নূর নকশি নামে একটি শো-রুম রয়েছে তার। বর্তমানে তিনি মহিলা চেম্বার অব কমার্স ও চাঁপইনাবগঞ্জ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সদস্য এবং বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের সঙ্গে জড়িত। তিন ছেলের মধ্যে বড় ছেলে চিকিৎসক, মেজ ছেলে ঢাকায় প্রাইভেটফার্মে চাকরি করে এবং ছোট ছেলে বাড়িতে থেকে চাকরির চেষ্টা করছে।মঙ্গলবার বিকেলে শহরের বড় ইন্দারা মোড়ে নিজ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান নূর নকশিতে বসে জগো নিউজকে নিজের জীবনের সফলতার কথা বলেন তাহরিমা বেগম লাকি।তিনি জানান, চাঁপাইনবাবগঞ্জের নকশিকাঁথা দেশ এবং দেশের বাইরে ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। চাঁপাইনবাবগঞ্জ দেশের শেষ সীমানায় অবস্থিত। এখানে এতো ভালো জিনিস তৈরি হয় এটা অনেকেই জানেনা। ফড়িয়াদের মাধ্যমে দেশের বিভিন্নস্থানে বিক্রি হয়। এতে করে গ্রাহককে বেশি দামে কিনতে হয়। এছাড়াও দেশের বাইরে নিয়ে যাওয়ার সময় পরিবহন খরচ অনেক বেড়ে যাওয়ায় সন্তোষজনক লাভ হয়না। ঢাকাতে একটা শো-রুম করতে পারলে দেশ বিদেশের ক্রেতারা আসবে এবং স্বল্প মূলে কেনাকাটা করতে পারবে। তিনি বলেন, এ শিল্পকে আরও বিস্তার লাভ করাতে ব্যাংকগুলো যদি স্বল্প লাভে সহজ ঋণের ব্যবস্থা করে দেয় তবে অনেক বেকার নারীর কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হবে। এবং সহজ শর্তে বিদেশে রফতানি করতে পারলে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন হবে।এমএএস/জেআইএম
Advertisement