হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিংয়ের চিরাচরিত রূপ পাল্টে যাচ্ছে। যাত্রীসেবার মান নিশ্চিত করতে বিশ্বের অধিকাংশ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে একাধিক প্রতিষ্ঠানকে গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিংয়ের দায়িত্ব দেয়া হয়। কিন্তু বাংলাদেশে এ কাজ করছে কেবল ‘বিমান’। এটি বিমানের সবচেয়ে বড় আয়ের খাত। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, এ খাতের নানা অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনা বিমানকে বিভিন্ন সময় বিতর্কের মুখে ফেললেও বর্তমানে সে অবস্থা আর নেই। দেরিতে হলেও খাতটির প্রতি নজর দিয়েছে বিমানের বর্তমান পরিচালনা পর্ষদ। গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিংয়ে সেবার মানোন্নয়নে ইতোমধ্যে বেশকিছু ইতিবাচক পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। অতীতে যাত্রীরা শাহজালাল বিমানবন্দরে অবতরণের পর ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতেন লাগেজের জন্য কিন্তু এখন সে অবস্থা আর নেই। বর্তমান পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালকের আন্তরিক চেষ্টায় এখন ফ্লাইট অবতরণের ৪০-৫০ মিনিটের মধ্যে যাত্রীরা লাগেজ হাতে পাচ্ছেন। এ বিষয়ে বিমান পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান এয়ার মার্শাল (অব.) মো. এনামুল বারী ‘জাগো নিউজ’কে বলেন, ‘ইন্টারন্যাশনাল এয়ার ট্রান্সপোর্ট অ্যাসোসিয়েশন (আইএটিএ) থেকে পরামর্শক নিয়োগ দিয়ে আমরা একটি গাইডলাইন তৈরি করেছি। গ্রাউন্ড সার্ভিস সেবার মানোন্নয়নে বেশকিছু উদ্যোগ নিয়েছি। এখন প্রাধান্য দেয়া হচ্ছে উন্নত যাত্রীসেবার দিকে। বিদেশি এয়ারলাইন্সগুলোর জন্য আধুনিক সুবিধা নিশ্চিত করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে বেশ কয়েক প্রকারের হালকা ও ভারি নতুন ইকুইপমেন্ট কেনা হয়েছে। চলতি মাসে আরো কিছু আধুনিক ইকুইপমেন্ট যোগ হবে। এসব বিষয় দেখার জন্য একটি সাব-কমিটি কাজ করছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গ্রাউন্ড সার্ভিসে সেবার মান আগের যে কোনো সময়ের তুলনায় ইতিবাচক। কলকাতা থেকে ২ মার্চ বিকেলে ঢাকায় ল্যান্ড করেন সোহেল রহমান সজল। তিনি সন্তুষ্টচিত্তে ‘জাগো নিউজ’কে বলেন, ‘ছয় মাস আগেও একবার কলকাতায় গিয়েছিলাম। সেবার তিনটি লাগেজের মধ্যে দুটি পাই অবতরণের দেড় ঘণ্টা পর। অন্যটি পেয়েছিলাম দুদিন পর লস্ট অ্যান্ড ফাউন্ড সেন্টার থেকে।’ প্রসঙ্গত, রাষ্ট্রীয় পতাকাবাহী প্রতিষ্ঠান ‘বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স’ এককভাবে ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে সব মিলিয়ে ২৬টি এয়ারলাইন্সের ১২০টির মতো ফ্লাইটের হ্যান্ডলিং করে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সুষ্ঠু পরিকল্পনা ও ব্যবস্থাপনা না থাকায় দীর্ঘ সাত বছরে বিমানে কোনো জনবল নিয়োগ দেয়া সম্ভব হয়নি। অথচ প্রতিনিয়ত বিমানবন্দরে বাড়ছে ফ্লাইট ও যাত্রীর সংখ্যা। সে তুলনায় বাড়ানো হয়নি জনবল ও গ্রাউন্ড সাপোর্ট ইকুইপমেন্ট। সেবার মানের কিছুটা উন্নতি হলেও বর্তমানে শাহজালাল বিমানবন্দরে যে সংখ্যক ফ্লাইট ওঠানামা করে তাতে বোর্ডিং ব্রিজসহ যে পরিমাণ গ্রাউন্ড সাপোর্ট ইকুইপমেন্ট প্রয়োজন তা না থাকায় যাত্রী চাহিদার শতভাগ সেবা দিতে পারছে না বিমান। বিমানের এয়ারপোর্ট সার্ভিসের এক কর্মকর্তা জানান, প্রয়োজন ১৩টি অথচ বোর্ডিং ব্রিজ আছে মাত্র ৮টি। এ সংক্রান্ত ইকুইপমেন্ট সাপোর্ট দেয়ার দায়িত্ব সিভিল এভিয়েশনের হলেও অজ্ঞাত কারণে তারা কোনো উদ্যোগ নিচ্ছে না।বিমানের জনসংযোগ শাখার মহাব্যবস্থাপক শাকিল মেরাজ এ প্রসঙ্গে ‘জাগো নিউজ’কে বলেন, ‘বিমানবন্দরের সার্বিক পরিস্থিতির উন্নয়নে বিশেষ করে যাত্রীসেবার মানোন্নয়নে সিভিল এভিয়েশন বিমানকে সহযোগিতা না করলে বিমানের দ্বারা এককভাবে ভালো কিছু করা সম্ভব হবে না।’তিনি বলেন, ‘গ্রাউন্ড সার্ভিসের সেবা উন্নত করতে গত দুই মাসে বেশকিছু আধুনিক ইকুইপমেন্টস সংগ্রহ করা হয়েছে। আধুনিক এসব সরঞ্জামাদি অপারেট করতে ৪০ জনের মতো জনবল ইতোমধ্যে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। আরো ৩০ জনের মতো নিয়োগ দেয়া হবে।শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সূত্রে জানা গেছে, প্রতিদিন এ বিমানবন্দর দিয়ে দেশীয় চারটি বিমান পরিবহন সংস্থার প্রায় ৫০টি ফ্লাইট ছাড়াও ১৮টি দেশের ২৬টি সংস্থার প্রায় ১২০টি উড়োজাহাজ ওঠানামা করে। প্রশিক্ষিত ও দক্ষ লোকবল এবং আধুনিক যন্ত্রপাতির অপ্রতুলতার কারণে বিদেশি এয়ারলাইন্সগুলো দীর্ঘদিন ধরে একাধিক প্রতিষ্ঠানকে গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিংয়ের দায়িত্ব দেয়াসহ বিভিন্ন সুপারিশ করে আসছিল। তাদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে বিমান ইতোমধ্যে প্রযোজনীয় বেশকিছু ইতিবাচক পদক্ষেপ বাস্তবায়ন করেছে। প্রতিষ্ঠা-পরবর্তী রাষ্ট্রীয় পতাকাবাহী প্রতিষ্ঠান ‘বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স’ একাই গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং সেবা দিয়ে আসছে। যৌথ ব্যবস্থাপনায় দেশের বিমানবন্দরগুলোয় গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং সেবা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ২০১৩ সাল থেকে সরকারের উদ্যোগ চলছে। সে সময় দেশের তিন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে যৌথ ব্যবস্থাপনায় গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং সেবা শুরু করতে বিদেশি প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে প্রস্তাবও চাওয়া হয়েছিল। ২০১৩ সালের শুরুতে গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিংয়ের দায়িত্ব যৌথভাবে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং বিমানের সবচেয়ে বড় আয়ের খাত হওয়ায় বিমান কর্মচারীরা তখন যৌথ ব্যবস্থাপনায় দেশের বিমানবন্দরগুলোয় গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং সেবার উদ্যোগের বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু করেন। ধর্মঘটের কারণে দেশের প্রধান বিমানবন্দর শাহজালাল প্রায় ৫ ঘণ্টা অচল থাকে। ফলে যৌথ ব্যবস্থাপনায় গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং সেবা আর চালু করা যায়নি। এরও আগে ২০০৬ সালে গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিংয়ে বিমানের সরাসরি নিয়ন্ত্রণ থাকবে না- এমন একটি স্বতন্ত্র কোম্পানি গঠনের পরিকল্পনা করে সরকার। কিন্তু সে বিষয়টিও আর এগোয়নি। আরএম/এমএআর/জেআইএম
Advertisement