তার গুণকীর্তন করে শেষ করা যায় কি? ভারত মহাসাগর আর বঙ্গোপসাগরের সব জলকে কলমের কালি করলেও হয়তো কবিগুরু রবীন্দ্রনাথের মেধা-প্রজ্ঞা, লেখনী আর সাহিত্যকর্মের যথাযথ প্রশংসা-স্তুতি গাওয়া সম্ভব নয়। বাংলা সাহিত্যে কবিগুরুর অবদান বলে শেষ করা যাবে না। তবে তার অসামান্য লেখনি শুধু বাংলা ভাষাতেই সীমাবদ্ধ নয়। সবার জানা- বাংলাদেশ এবং ভারতের জাতীয় সঙ্গীত কবিগুরুর লেখা। শুনে অবাক হবেন, হয়তো বিস্মিতও হতে পারেন, শ্রীলঙ্কার জাতীয় সঙ্গীতও কবিগুরু রবীন্দ্রনাথের অসামান্য সৃষ্টি। এই তো সেদিন হায়দরাবাদে বাংলাদেশ-ভারতের একমাত্র টেস্ট শুরুর আগে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরই ছিলেন আলোচনায়। কারণ টেস্ট শুরুর আগে ভারত ও বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীত বাজানোর সময়ই টিভি ধারাভাষ্যকারদের মুখে কবিগুরুর নামই উচ্চারিত হয়েছে। কী আশ্চর্য! আজ সকালে গলের ইন্টারন্যাশনাল ক্রিকেট স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কার দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজ শুরুর আগেও কবিগুরুর নাম উঠে এলো! নিয়ম মেনে মঙ্গলবার গল টেস্ট শুরুর আগে বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কার জাতীয় সঙ্গীত বাজল। ঠিক তখনই উঠে এলো কবিগুরু প্রসঙ্গ। স্বাধীনতার মাসে লাল-সবুজ পতাকা উড়ল পতপত করে। আর বেজে উঠল রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীত ‘আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালবাসি। চির দিন তোমার আকাশ, তোমার বাতাস। ওমা আমার প্রাণে বাজায় বাঁশি, সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালবাসি।’ বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীত বাজার আগে বাজল শ্রীলঙ্কার জাতীয় সঙ্গীত- ‘শ্রীলঙ্কা মাথা আপা, শ্রীলঙ্কা নমো নমো নমো নমো ...মাথা সুন্দরা সিরি বরিনি সুরান্দি আথি সবা মানা লঙ্কা ধন্য ধন্য নেকা মাল পালাথারু পিরি জয়া ভূমিয়া রামা...।’ শুনে অবাক হতে পারেন, লঙ্কানদের জাতীয় সঙ্গীতের সঙ্গেও জড়িয়ে আছে কবিগুরুর নাম। অনলাইন বিশ্বকোষ উইকিপিডিয়া ব্রাউজ করলেই দেখবেন, সেখানে লেখা আছে- শ্রীলঙ্কার জাতীয় সঙ্গীতের প্রকৃত উৎস ও রচয়িতা নিয়ে নানা কথা-বার্তা। নানা মুনির নানা মতবাদ থাকলেও সবচেয়ে বড় অংশের ধারণা, বিশ্বাস ও অনুভব- শ্রীলঙ্কার বিখ্যাত গীতিকার ও সুরকার আনান্দা সামারকুন কবিগুরু রবীন্দ্রনাথের অনুপ্রেরণা ও তার লেখনিতে উদ্বুদ্ধ হয়েই এ সঙ্গীত রচনা করেন। আবার সংখ্যালগিষ্টের মতে, কবি রবীন্দ্রনাথই এ সঙ্গীতের গীতিকার। সামারকুন শুধু সুর দিয়েছেন। আবার উল্টো মতও আছে। কেউ কেউ বলেন, সামারকুন লিখেছেন। আর কবিগুরু সুর করেছেন। তবে আসল সত্য হলো- সামারকুন কবিগুরুর জীবদ্দশায় শান্তিনিকেতনের ‘বিশ্ব ভারতী’ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলেন। তার বড় ভক্তও ছিলেন। শান্তিনিকেতনে পড়ালেখা শেষে সামারকুন শ্রীলঙ্কা, মানে গলে ফিরে এসে স্থানীয় ‘মাহিন্দা কলেজের’ ছাত্রছাত্রীদের ওই গান শিখিয়ে দেন। লেখক : ক্রীড়া সাংবাদিক। এনইউ/আইএইচএস/এইচআর/জেআইএম
Advertisement