আইন-আদালত

খালেদার নাইকো দুর্নীতি মামলা হাইকোর্টে স্থগিত

দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) দায়ের করা নাইকো দুর্নীতি মামলা স্থগিত করেছেন হাইকোর্ট। একই বিষয়ে বিএনপি নেতা ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদের রুল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত স্থগিত থাকবে এ মামলা। একই সঙ্গে খালেদা জিয়ার নাইকো দুর্নীতি মামলা কেন বাতিল ঘোষণা করা হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন আদালত। আগামী চার সপ্তাহের মধ্যে সংশ্লিষ্টদের রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।মঙ্গলবার হাইকোর্টের বিচারপতি শেখ আব্দুল আওয়াল এবং বিচারপতি মো. খসরুজ্জামানের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এই আদেশ দেন। হাইকোর্টের এই আদেশের বিষয়ে জাগো নিউজকে নিশ্চিত করেছেন ব্যারিস্টার সানজিত সিদ্দিকী। আদালতে আজ বেগম খালেদা জিয়ার পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ। অন্যদিকে দুদকের পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট খুরশীদ আলম খান। আদালতে খালেদা জিয়ার পক্ষে উপস্থিত ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল এ জে মোহাম্মদ আলী, ব্যারিস্টার এম বদরুদ্দোজা বাদল, ব্যারিস্টার এ এম মাহবুবউদ্দিন খোকন, ব্যারিস্টার রাগিব রউফ চৌধুরী।পরে মাহবুব উদ্দিন খোকন সাংবাদিকদের বলেন, হাইকোর্ট রুল দিয়েছেন, আর মামলার কার্যক্রম স্থগিত করেছেন। দুদকের পক্ষে আইনজীবী খুরশীদ আলম খান বলেন, খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে নাইকো দুর্নীতি মামলা স্থগিত করেছেন হাইকোর্ট। একই মামলায় মওদুদ আহমদের বিষয়ে যে রুল শুনানি হচ্ছে, সেই শুনানি না হওয়া পর্যন্ত মামলার কার্যক্রম স্থগিত করা হয়েছে।তবে আমরা আদালতে বলেছি, দুদকের মামলা শুনানির জন্য এখতিয়ার সম্পন্ন আদালত রয়েছে। এ আদালতের সেই এখতিয়ার নেই। এ বিষয়টি দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে আদালতে আমাদের আবেদন শোনেননি। এই যুক্তিতে আমরা হাইকোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে আপিল করবো। একই মামলায় গত ১ ডিসেম্বর হাইকোর্টে রুল ও স্থগিতাদেশ পেয়েছিলেন বিএনপির অন্য নেতা ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদও। সেই স্থগিতাদেশের বিরুদ্ধে দুদক আপিল বিভাগে গেলেও বহাল থাকে হাইকোর্টের আদেশ। তবে রুল শুনানিতে একটি বেঞ্চ বিব্রতবোধ করলে পরে অন্য একটি বেঞ্চে তা পাঠানো হয়। সেখানেই রুলটি বিচারাধীন।যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনে সালিশি আদালতে পেট্রোবাংলা, বাপেক্সের সঙ্গে নাইকোর চুক্তি ও দুর্নীতি সংক্রান্ত বিরোধের মামলা চলছে। চলতি বছরের ১৯ জুলাই এক আদেশে ওই সালিশি আদালত বাপেক্স-পেট্রেবাংলাকে বিরোধ নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত মওদুদের বিরুদ্ধে নাইকো দুর্নীতি মামলার কার্যক্রম স্থগিত রাখতে বলে।সালিশি আদালতে একটি মামলা চলমান থাকায় ঢাকার বিশেষ জজ আদালতে বিচারাধীন মামলাটির কার্যক্রম স্থগিত রাখার আবেদন করেন মওদুদ। তবে বিচারিক আদালত চলতি বছরের ১৬ আগস্ট সেই আবেদন খারিজ করে দেন। এরপর তিনি হাইকোর্টে আসেন।একই যুক্তি দেখিয়ে নিম্ন আদালত ঘুরে হাইকোর্টে এসে স্থগিতাদেশ পান খালেদা জিয়াও। হাইকোর্ট এ বিষয়ে রুলও জারি করেন। যার জবাব দিতে বিবাদীদের চার সপ্তাহ সময় দেয়া হয় বলে আসামিপক্ষের আইনজীবিরা জানিয়েছেন।এই মামলায় ২০১৬ সালের ৩০ নভেম্বর বিচারিক আদালতে আত্মসমর্পণ করেন খালেদা জিয়া। আদালত সেদিনই তাকে জামিন দেন। মামলাটি বর্তমান ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৯ এ বিচারাধীন।কানাডীয় কোম্পানি নাইকোর সঙ্গে তেল-গ্যাস অনুসন্ধান চুক্তির মাধ্যমে রাষ্ট্রের আর্থিক ক্ষতি করার অভিযোগে ২০০৭ সালের ৯ ডিসেম্বর খালেদা জিয়া ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে পৃথক মামলা করে দুদক। এর মধ্যে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মামলা ২০১০ সালের ১১ মার্চ হাইকোর্ট বাতিল করে রায় দেন। খালেদা জিয়াসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে করা মামলায় ২০০৮ সালের ৫ মে খালেদা জিয়াসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেয় দুদক। এ মামলা বাতিল চেয়ে খালেদা জিয়ার করা আবেদনে ২০০৮ মালের ৯ জুলাই খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে নাইকো দুর্নীতি মামলার কার্যক্রম স্থগিত করেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে রুল জারি করেন। খালেদা জিয়া ছাড়া এ মামলার অন্য আসামিরা হলেন- সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, সাবেক জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী এ কে এম মোশাররফ হোসেন, ওই সময়কার প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সচিব খন্দকার শহীদুল ইসলাম, সাবেক সিনিয়র সহকারী সচিব সি এম ইউছুফ হোসাইন, বাপেক্সের সাবেক মহাব্যবস্থাপক মীর ময়নুল হক, বাপেক্সের সাবেক সচিব মো. শফিউর রহমান, গিয়াস উদ্দিন আল মামুন, ঢাকা ক্লাবের সাবেক সভাপতি সেলিম ভূঁইয়া এবং নাইকোর দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক ভাইস প্রেসিডেন্ট কাশেম শরীফ। ওই সময় সাবেক প্রতিমন্ত্রী এ কে এম মোশাররফ হোসেনের বিরুদ্ধে নাইকোর কাছ থেকে একটি গাড়ি উপহার নেয়ার অভিযোগ উঠেছিল।এফএইচ/এনএফ/আরআইপি/জেআইএম

Advertisement