রাজধানীর বাড্ডা নতুন বাজার এলাকায় রাস্তা পারাপারে ফুটওভার ব্রিজ ব্যবহার না করায় ৭৫ জনকে জরিমানা করেছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। পথচারীদের ফুটওভার ব্রিজ ও ফুটপাত ব্যবহার নিরাপদ ও নির্বিঘ্ন রাখতে ডিএমপির ট্রাফিক উত্তরের বাড্ডা জোনের তত্ত্বাবধানে গতকাল সোমবার ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মশিউর রহমান। ট্রাফিক আইন সম্পর্কে জনগণকে সচেতন করাই এর প্রধান লক্ষ্য।নগরবাসী যাতে নির্বিঘ্নে ও নির্ভয়ে ফুটওভার ব্রিজ ও ফুটপাত ব্যবহার করে সেজন্য সচেতনতা বাড়াতে ট্রাফিক পুলিশ এ ধরনের উদ্যোগ নিয়েছে-এমনটি বলা হচ্ছে। বাস্তবতা হচ্ছে সড়কে শৃঙ্খলার বড়ই অভাব। গাড়ি লেন ধরে চলে না, একই রাস্তায় ভিন্ন ধরন ও গতির গাড়ি, ফুটপাতগুলো দখলে, ফুটওভার ব্রিজ থাকলেও তার বেশিরভাগই দখলে, অধিকাংশ আবার ব্যবহারের অনুপযোগী। এছাড়া নাগরিক সচেতনতারও অভাব রয়েছে। এ অবস্থায় শুধু জরিমানা করে কাঙ্খিত ফল পাওয়া যাবে না। জনসচেতনতার পাশাপাশি রাস্তায় সার্বিকভাবে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে হবে। নগরবাসীর পথ চলাচল নিশ্চিত ও রাজধানীর দুঃসহ যানজট থেকে রক্ষা পেতে হলে ফুটপাত দখলমুক্ত করতে হবে সবার আগে। এ নিয়ে অনেক কথা হয়েছে। নানা সময় নির্দেশনায়ও এসেছে। কিন্তু পরিস্থিতির খুব একটা উন্নতি হয়নি। একদিকে চলে উচ্ছেদ অভিযান, অন্যদিকে আবার দোকান বসে যায়-এভাবে চলে উচ্ছেদ-দখল খেলা। কিন্তু দিনের পর দিন তো এ অবস্থা চলতে পারে না। রাজধানীর ফুটপাতে অবৈধ দোকানপাট গড়ে ওঠায় সাধারণ মানুষের চলাচলে বিঘ্ন সৃষ্টি হচ্ছে। রাজধানীর মোট দুই হাজার ২৮৯ দশমিক ৬৯ কিলোমিটার রাস্তার মধ্যে অনেকাংশই নানা শ্রেণি-পেশার মানুষের দখলে। বিশেষ করে ঢাকার ফুটপাতগুলো দখলে থাকায় যারপরনাই ভোগান্তির শিকার হয় সাধারণ মানুষজন। যানজটের নিগড়ে পিষ্ট মানুষের কাছে এ যেন গোদের ওপর বিষফোড়া। সাধারণত হকাররাই ফুটপাতগুলো দখল করে রাখে। এজন্য ফুটপাতগুলো হকারমুক্ত রাখা প্রয়োজন। আসলে ঢাকায় যে পরিমাণ জমি রয়েছে তার জন্য ২৫ ভাগ রাস্তা দরকার। সেখানে অলিগলিসহ আছে মাত্র ৭ ভাগ। মেইন রোড আছে ৩ ভাগ। এই ৩ ভাগের ৩০ ভাগ দখল করে অবৈধ দখলদাররা। যার মধ্যে একটি অংশ হচ্ছে হকাররা। রাজধানীর ৭০ শতাংশ ফুটপাত প্রাইভেট গাড়ি দখল করে রেখেছে। অবাক করা বিষয় হচ্ছে, রাজধানীর অধিকাংশ রাস্তার পাশেই যেসব দোকান ও আবাসিক ভবন রয়েছে তাদের কোনো পার্কিং ব্যবস্থা নেই। ফলে রাস্তার অর্ধেকটা তারা দখল করে গাড়ি পার্কিং করে। দিনের পর দিন প্রকাশ্যে এ ধরনের কার্যক্রম চললেও এগুলো দেখার যেন কেউ নেই।আসলে ফুটপাত দখলমুক্ত করতে হলে উভয়পক্ষ থেকেই দায়িত্বশীল কর্মপন্থা অবলম্বন করতে হবে। স্রোতের মতো হকাররা আসতে থাকবে আর তারা ফুটপাত দখল করে ব্যবসাবাণিজ্য করবে তারপর পুনর্বাসনের দাবি তুলবে এটি কখনও বাস্তবসম্মত নয়। এজন্য সবাইকে দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিতে হবে। যে কোনো মূল্যে সড়কে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে হবে। পথচারীরা যাতে নির্বিঘ্নে ফুটওভার ব্রিজ ও ফুটপাত ব্যবহার করতে পারে সেটি নিশ্চিত করতে হবে আগে। এরপর জেল-জরিমানার বিষয়। পথচারীদেরও এ ব্যাপারে দায়িত্বশীল হতে হবে। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কোনো অবস্থায়ই রাস্তা পারাপার চলবে না। সড়কে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে একটি সুসমন্বিত পন্থায় এগিয়ে যেতে হবে। এইচআর/পিআর
Advertisement