ফিচার

পেসার হান্ট থেকে ক্রীড়া সাংবাদিক!

সাতক্ষীরার মোস্তাফিজুর রহমান, সৌম্য সরকার ও রবিউল ইসলাম শিবলু- নামগুলোর পাশেই তার নামটি থাকার কথা ছিলো আজ। কিন্তু ভাগ্য তার সহায় না হওয়ায় আজ তিনি মোস্তাফিজ ও সৌম্য সরকারদের সফলতার গল্প ক্যামেরার পিছন থেকে শোনান বিশ্ববাসীকে। যে হাতে প্রতিপক্ষের শক্তিশালী ব্যাটিং লাইন আপ ভাঙার কথা ছিলো; সে হাতে আজ টেলিভিশন চ্যানেলের বুম। তিনি একটি বেসরকারি টেলিভিশনের ক্রীড়া প্রতিবেদক সালাউদ্দিন মোহাম্মদ সুমন।ছোটবেলা থেকেই সুমন ছিলেন ক্রিকেট পাগল। যখন তৃতীয় শ্রেণিতে পড়তেন, বড়রা খেলায় নিতেন না বলে সুতা দিয়ে বল ও নেট, আর বাঁশ কেটে ব্যাট বানিয়ে ক্রিকেট খেলা শুরু করেন। কিশোর বয়সে দ্রুত গতিতে বল করার জন্য বন্ধুরা তাকে ডাকতেন ‘ম্যাকগ্রা’ নামে। জাতীয় দলের জার্সি পরা না হলেও খেলেছেন ঢাকা ফার্স্ট ডিভিশন লীগ। এক সময় ক্রিকেট খেলা ছাড়তে হলেও ছাড়তে পারেননি ক্রিকেট প্রেম। মাঠে ঝড় তুলতে না পারলেও আজ তিনি ক্রিকেট নিয়ে ঝড় তোলেন প্রেসবক্সে।২০০৮ সালের ‘পেসার হান্ট’ প্রোগ্রামের জাতীয় দলের গতিতারকা রুবেল হোসেনকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিলেন তিনি। সুমন সেদিন ঘণ্টায় ৮৩ মাইল গতিতে বল করে রুবেলকেও হারিয়েছিলেন। সেদিনের সেই পেসার হান্টে বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের আরেক ক্রিকেটার কামরুল ইসলাম রাব্বি হয়েছিলেন চতুর্থ।চ্যাম্পিয়ন সালাউদ্দিন মোহাম্মদ সুমন সেদিন পত্রিকার শিরোনাম হলেও আজ তিনি মাঠে না থেকে প্রেসবক্সে। সেই গল্প তিনি হায়দ্রাবাদ টেস্ট কভার করতে গিয়ে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে শুনিয়েছেন। সম্প্রতি তিনি জাগো নিউজকেও জানালেন সেই হতাশার গল্প। আক্ষেপের সুরে তিনি বলেন, ‘সেই সময় আমার বয়স একটু বেশি ছিলো। তাই সে সময় রুবেল অনূর্ধ্ব-১৯ দলে জায়গা পেলেও আমি কোনো দল পাইনি। অন্যদিকে রাব্বি ক্রিকেটের সঙ্গে অনেক দিন যুক্ত থাকায় জাতীয় দলে জায়গা পেয়েছে। আমার বেশিদিন ক্রিকেটের সঙ্গে থাকা হয়নি। তাই দলে সুযোগও হয়নি।’সাতক্ষীরায় জন্ম নেয়া সুমন স্কুল দলের হয়ে খেলতেন পাড়ায় পাড়ায়। প্রথম পেসার হান্টে যোগ দিয়েছিলেন খালি পায়ে। খালি পায়ে যোগ দিয়েও প্রথম বারে দেখিয়েছিলেন সফলতা। তারপর ২০০৮ সালে পেসার হান্ট চ্যাম্পিয়ন। ইচ্ছে ছিলো দেশের সর্বোচ্চ মানের ঘরোয়া ওয়ানডে টুর্নামেন্ট প্রিমিয়ার ডিভিশন লিগে খেলবেন। কিন্তু ঢাকা ফার্স্ট ডিভিশন লীগ ক্রিকেটে ১০ ম্যাচে ১৮টি উইকেট নিয়েও দল পাননি তিনি।তারপরও হাতাশ হয়ে ক্রিকেট ছাড়েননি। খেলতেন বিশ্ববিদ্যালয় দলের হয়ে। সেই সময় খেলতে আসা দেশি-বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাটসম্যানদের গতি দিয়ে নাকানি-চুবানি খাওয়ানোসহ পাঠিয়েছেন হাসপাতালে। তারপর কেন আর সেভাবে খেলা হয়ে ওঠেনি এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, পড়াশোনা, পিঠের ইনজুরিতে আক্রান্ত হয়ে আর্থিক সীমাবদ্ধতায় পরে একপ্রকার বাধ্য হয়েই বুটজোড়া শো-কেসে সাজিয়ে রাখতে হয়েছে। তবে ইচ্ছে ছিল সবকিছুর পাঠ চুকিয়ে মাঠে ফেরার। কিন্তু সেইভাবে ফলাফলটা পাচ্ছিলেন না। তাই আর মন সাড়া দেয়নি।তখনকার পেসার হান্ট আর এখনকার পেসার হান্টে কেমন পার্থক্য লক্ষ করেন- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, আমি সেই পেসার হান্টে চ্যাম্পিয়ন হয়ে সেই সময়ের নিয়মে পেয়েছিলাম একটি কালো টি-শার্ট, আর বিকেএসপি ছিলাম একমাস। যেখানে আকিব জাভেদকে ৫ দিনের জন্য নিয়ে আসা হয়েছিলো। তারপর আমাদের ছেড়ে দেয়া হয়। কিন্তু বর্তমানে পেসার হান্ট প্রোগ্রামে ভালো করা ক্রিকেটারদের উন্নত প্রশিক্ষণ দিয়ে বিভিন্ন দলে খেলার সুযোগ করে দেয়া হচ্ছে। আপনি সেই সময় এই সুযোগ পেলে কি ভিন্ন ফলাফল হতে পারতো- এমন প্রশ্নে সুমন জানান, কোন কিছু অসম্ভব ছিলো না। অবশ্যই ফলাফল ভিন্ন হওয়া সম্ভব ছিলো।প্রেসবক্সে বসে বল করা দেখে চ্যাম্পিয়ন সুমনের কেমন লাগে- এমন প্রশ্নে কিছুটা আক্ষেপের হাসি দিয়ে জানান, ‘মাঝে মাঝে আমি প্রেসবক্স থেকে স্বপ্নে মাঠে চলে যাই। তাদের সঙ্গে খেলি। বিভিন্নভাবে বল ডেলিভারি দেই। কিন্তু কিছু স্বপ্ন বা আবেগের লাগাম টেনে আমাকে লিখে যেতে হয়। কারণ তাদের থেকে এখন অনেকটা দূরে আমি।ভাগ্যটা সহায় হলে হয়তো ক্রীড়া প্রতিবেদক সালাউদ্দিন মোহাম্মদ সুমনের এই পরিচয়টা ভিন্ন হতে পারতো। মোস্তাফিজুর রহমানের নামের সঙ্গে উচ্চারিত হতে পারতো সাতক্ষীরার আরেক চ্যাম্পিয়ন গতিতারকা সালাউদ্দিন মোহাম্মদ সুমনের নাম।এসইউ/পিআর

Advertisement