আন্তর্জাতিক

মুসলিম পরিবারগুলোই আদর্শ ভারতের যে গ্রামে

বেআইনি হলে বিয়ের সময় যৌতুক নেয়া ভারতে অতি পরিচিত একটা ঘটনা। যৌতুকের দাবিতে গৃহবধূর ওপরে অত্যাচারের ঘটনা নিয়মিতই সেখানে শোনা যায়। কিন্তু সেদেশেরই একটি প্রত্যন্ত গ্রামে এখন ঘটছে পুরো বিপরীত ঘটনা।  ঝাড়খন্ডকে মনে করা হয় ভারতের পিছিয়ে থাকা রাজ্যগুলোর একটি। কিন্তু সেই রাজ্যেরই একটা অঞ্চলে ঘটছে অভিনব এই ঘটনা। বিয়ের সময়ে যৌতুক হিসেবে যে অর্থ নিয়েছিল পাত্রপক্ষ, এখন সেই টাকাই তারা ফিরিয়ে দিচ্ছে কনে পক্ষকে।বিবিসির এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এ চিত্র।  ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ঝাড়খন্ড রাজ্যের পালামৌতে এই প্রক্রিয়া বছরখানেক ধরে চলছে, এর মধ্যেই প্রায় আটশো মুসলমান পরিবার ছেলের বিয়ের সময়ে নেয়া যৌতুক ফিরিয়ে দিয়েছে। ফিরিয়ে দেয়া এই যৌতুকের পরিমাণ প্রায় ৬ কোটি রুপি। মুসলমান পরিবারগুলোকে দেখে ওই অঞ্চলের অন্য ধর্মাবলম্বীরাও যৌতুক ফেরানো শুরু করেছেন।এ বিষয়টি প্রথম শুরু হয় ঝাড়খন্ড রাজ্যের পোখারিটোলা গ্রামে। ছেলের বিয়ের সময়ে যে যৌতুক নিয়েছিল পোখারিটোলার মুসলমান পরিবারগুলো, সেই টাকা ফিরিয়ে দিতে শুরু করে তারা।গ্রামের বাসিন্দা হাজি মুমতাজ আনসারিই এই বিষয়ে মানুষকে সচেতন করা শুরু করেছিলেন। তিনি বলেছেন, ‘অনেক লোক আমার কাছে এসে দুঃখ করতো যে মেয়ের বিয়ের পণ যোগাড় করতে গিয়ে কী অসুবিধায় পড়েছেন তারা। ধারদেনা তো বটেই, জমিও বিক্রি করতে হতো যৌতুকের টাকা যোগাড় করতে। সেই সব ঘটনা শুনেই আমার মনে হয় যে অনেক হয়েছে, আর না! বন্ধ করতে হবে এই পণ নেয়া। তখনই মানুষকে বোঝাতে শুরু করি বিষয়টা।’এখনো পর্যন্ত ৮শ পরিবার যৌতুক ফিরিয়ে দিয়েছে বলেও উল্লেখ করা হয়েছে বিবিসির প্রতিবেদনে। যারা এখনও ফিরিয়ে দেয়নি তারাও সবার সামনে অঙ্গীকার করছে টাকা ফেরত দিয়ে দেবে। মুমতাজ আনসারির কথায়, ‘মুসলমান পরিবারগুলোকে দেখে অন্য সম্প্রদায়ের মানুষও এগিয়ে আসছেন। তারাও টাকা ফিরিয়ে দিতে শুরু করেছেন।’বিহার ঝাড়খন্ডে যৌতুকপ্রথা, বাল্যবিবাহ নিয়ে কাজ করে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ব্রেকথ্রু। সংগঠনটির ভাইস প্রেসিডেন্ট সোহিনী ভট্টাচার্য জানিয়েছেন পোখারিটোলা গ্রামের খবর তাদের কাছেও পৌঁছেছে।তিনি বলছেন, ‘যিনিই এই অভিযানটা শুরু করে থাকুন না কেন, দারুণ কাজ করেছেন। যদি ঠিকমতো চালিয়ে যেতে পারেন, তাহলে বহু মেয়ে এই যৌতুকের অত্যাচারের হাত থেকে মুক্তি পাবে।’পোখারিটোলার এই যৌতুকবিরোধী অভিযান এতটাই সমর্থন পেয়েছে যে, পালামৌ অঞ্চলে এখন আর মুসলিম পরিবারগুলোর কাছে কেউ যৌতুক চাইতেই সাহস করছেন না।আর যদি বা পাত্র পক্ষ এবং কন্যা পক্ষ নিজেদের মধ্যে বোঝাপড়া করে যৌতুকের ব্যবস্থা করেও ফেলে, তাহলে সমাজের মাথারা গিয়ে সেটা আটকিয়ে দিচ্ছেন। এমন কী যৌতুক নেয়ার কথা কানে এলে কাজী সাহেব সেই বিয়ে দিতেও সরাসরি অস্বীকার করছেন।এনএফ/এমএস

Advertisement