বিশ্বের সবচেয়ে বড় ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান অ্যামাজন ও আলীবাবা এপ্রিল মাসে বাংলাদেশে কার্যক্রম শুরু করতে যাচ্ছে। এজন্য প্রাথমিক প্রস্তুতি শুরু করেছে বাংলাদেশ ডাক বিভাগ। বাংলাদেশে অ্যামাজন ও আলীবাবার কার্যক্রম শুরু হলে দেশের ই-কমার্সে কর্মসংস্থান বাড়বে বলে আশা করছে ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ।চলতি মার্চের প্রথম সপ্তাহে অ্যামাজন ও আলীবাবার সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করার জন্য একটি পাইলট প্রজেক্ট চালু হতে যাচ্ছে। এ প্রজেক্ট সফল হলে আগামী এপ্রিলে অ্যামাজন ও আলীবাবার সঙ্গে আনুষ্ঠানিক চুক্তির মাধ্যমে কাজ করবে বাংলাদেশ ডাক বিভাগ। ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ইক্যাব) এক তথ্যানুযায়ী, এই মুহূর্তে দেশের ই-কমার্সে জড়িত এক হাজার ওয়েবসাইট আর আট হাজার ফেসবুক পেজ। এখানে প্রতিদিন প্রায় ২০ হাজারের মতো কেনাকাটা হয়, যা প্রতি মাসে দাঁড়ায় আনুমানিক ৫-৬ লাখের মতো। ই-কমার্সে বর্তমানে তরুণ উদ্যোক্তার সংখ্যাই বেশি। এসব তরুণ ফেসবুক পেজ এবং ওয়েবসাইটের মাধ্যমে নিজেদের ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছে। নিজের জীবিকা নির্বাহের পাশাপাশি কর্মসংস্থানেরও সৃষ্টি হয়েছে।এমন পরিস্থিতিতে বিশ্বের সবচেয়ে বড় ই-কমার্স জায়ান্ট অ্যামাজন ও আলীবাবা বাংলাদেশে আসলে ই-কমার্স খাতে কেমন প্রভাব পড়বে জানতে চাইলে ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ইক্যাব) সভাপতি রাজীব আহমেদ বলেন, বাংলাদেশে ই-কমার্স সম্ভাবনাময়। মুক্তবাজার অর্থনীতিতে এমন দুটি বড় কোম্পানির বাংলাদেশে ব্যবসা করাকে স্বাগত জানাই। এ দুই কোম্পানি এলে তরুণ উদ্যোক্তা কমে যাবে, অন্যদিকে প্রচুর কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হবে।উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, মীনা বাজার-আগোরা এসব সুপার শপ থাকা সত্ত্বেও অন্য মুদি দোকানিরা যেমন টিকে আছে, ই-কমার্সের ক্ষেত্রেও ঠিক তেমন হবে। তবে তাদের সঙ্গেও কাজ করার সুযোগ সৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা আছে।ই-কমার্স বিষয়ক সরকারকে আমরা প্রোপোজাল দিয়েছি জানিয়ে ই-ক্যাব প্রেসিডেন্ট বলেন, ই-কমার্সের উন্নয়নের স্বার্থে সরকারের কাছে আমরা প্রস্তাবনা দিয়েছি যেন দেশীয় উদ্যোক্তাদের কাছ থেকে ভ্যাট-ট্যাক্স না নেয়া হয়।অন্যদিকে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের ক্ষেত্রে যেন ট্যাক্স বেশি ধরা হয়।এর আগে ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম এক অনুষ্ঠানে বলেছিলেন, অ্যামাজন ও আলীবাবার সঙ্গে স্থানীয় এবং আন্তর্জাতিক অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে কাজ করতে চাই। ফলে ডাক বিভাগের সম্প্রসারণ হবে এবং একই সঙ্গে তাদের রাজস্ব বৃদ্ধি পাবে।অনলাইনে নিয়মিত কেনাকাটা করেন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী জান্নাতুল ফেরদৌস। বিশ্বের সবচেয়ে বড় ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশে আসার বিষয়ে তিনি বলেন, এটা হলে ভালো হয় কারণ আমরা যারা নিয়মিত অনলাইনে কেনাকাটা করি তারা গুণগত মানসম্পন্ন পণ্য কিনতে পারবো। তাছাড়া দেশে যারা ই-কমার্সের সঙ্গে জড়িত তাদের প্রতিযোগিতা এবং সেবার মান বৃদ্ধি পাবে।তবে বাংলাদেশে অ্যামাজন ও আলীবাবার আগমনকে এ দেশের ই-কমার্স খাতের অনেক ব্যবসায়ী নেতিবাচক দৃষ্টিতে দেখছেন। ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ওখানেই ডটকমের প্রধান নির্বাহী রাহিতুল ইসলাম বলেন, অ্যামাজন বা আলীবাবা এলে হয়তো অনেক গ্রাহকই খুশি হবে, কিন্তু ই-কমার্স (বা এফ-কমার্স) শিল্পে নতুন আসা হাজার হাজার তরুণ উদ্যোক্তার ব্যবসা ধ্বংস হওয়ার সম্ভাবনা আছে। রাহিতুল ইসলাম আরো বলেন, বাংলাদেশ পোস্ট অফিসের সঙ্গে কুরিয়ার চুক্তি করা আর বাংলাদেশে ব্যবসা করা দুটা দুই জিনিস। এতে লাভের কিছু নেই। ভ্যাট-ট্যাক্সের কোনো পরিবর্তন হবে না, আগের মতোই থাকবে। আমাদের উচিত হবে আলিবাবা, আলিএক্সপ্রেস এই বিদেশি কোম্পানিগুলো নিয়ে মাতামাতি না করে দেশীয় প্রতিষ্ঠানকে সুযোগ করে দেয়া। নিজের দেশকে এগিয়ে নিতে হলে নিজেদের পণ্যকে বিশ্বের কাছে তুলে ধরতে হবে।উল্লেখ্য, গত বছরের নভেম্বরে ঢাকায় ২১টি পোস্ট অফিস থেকে ই-কমার্স পণ্য সরবরাহের অর্ডার নেয়া এবং সেগুলো থেকে বিতরণের সেবা শুরু করে ডাক বিভাগ। এ উদ্যোগের ফলে এখন থেকে অনলাইনে ক্রেতারা তাদের পণ্য ই-কমার্স সাইট থেকে সহজেই গ্রহণ করতে পারবেন। ডাক বিভাগের মাধ্যমে দেশের প্রান্তিক পর্যায়ে পণ্য পৌঁছে দিতে পারবে।এএস/এআরএস/আরআইপি
Advertisement