দেশজুড়ে

থেমে গেছে পাখির কলরব

একদিন ঝাঁকে ঝাঁকে যে পাখিরা মুক্ত আকাশে উড়ে বেড়াতো। আকাশের এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্তে ডানা মেলে সন্ধান করে সন্ধ্যায় নীড়ে ফিরেছিল, সেই পাখিদের আর নতুন সকাল হয়নি। মুক্ত আকাশে আর উড়াও হয়নি। কালবৈশাখী ঝড় আর ভারি শিলার থাবা রাতের আঁধারেই প্রাণ কেড়ে নেয় বিভিন্ন প্রজাতির প্রায় ১০ হাজার পাখির। অবশেষে সেই মৃত পাখিগুলো মাটিতে পুঁতে ফেলা হয়েছে।মঙ্গলবার বিকেলে কুলসীবাসা-ছাগলাপাড়া গ্রামের বাগান থেকে প্রায় ১০ হাজার মৃত পাখি উদ্ধার করে স্থানীয় গবরা মাদরাসার পাশে গর্ত করে মাটি চাপা দিয়েছে স্থানীয়রা। এসময় সেখানে উপস্থিত জনতার মাঝে চাপা কান্নার সৃষ্টি হয়। মর্মাহত হন সবাই। এর আগে রোববার রাতেও পাখিরা ছিল গাছের বাসায়। পৃথিবীর সুন্দর সবুজের সমারোহে গাছের ডালে ওদের ছিল বাস। কিন্তু, সোমবার ভোরের দিকে কুষ্টিয়ার উপর দিয়ে হঠাৎ বয়ে যাওয়া কালবৈশাখী ঝড় ও ভারি শিলার আঘাতে মারা যায় পাখিগুলো। কুলসীবাসা গ্রামের কবিরুল ইসলাম বলেন, মেহগনি, সেগুন, কড়ইসহ বড়বড় গাছের বাগানেই মারা গেছে সবচেয়ে বেশি পাখি। আমরা স্থানীয়ভাবে প্রায় ১০ হাজার মৃত পাখি উদ্ধার করে রাস্তার একপাশে গর্ত করে মাটি চাপা দিয়েছি। সোমবার সকাল থেকে মৃত পাখি দেখতে গ্রামের হাজার হাজার মানুষের ঢল নামে। গবরা মাদরাসার মাঠে অন্য এক গর্তে মাটি চাপা দেওয়া হয় কিছু বিভিন্ন প্রজাতির পাখি। তবে শিলায় আহত পাখিরা এখনো মারা যাচ্ছে।ছাগলাপাড়া এলাকার নিহার আলী বলেন, দোয়েল, ঘুঘু, শালিক, বনটিয়াসহ নানা প্রজাতির পাখি মারা যাওয়ায় মঙ্গলবার সকাল-সন্ধ্যায় পাখির কিচিরমিচিরে গ্রামগুলো মুখরিত হয়নি। শিলার আঘাতে অধিকাংশ গাছের বাসা ও পাতা ছিড়ে গেছে। এই ঝড় আর শিলাবৃষ্টিতে পাখিদের গড়ে ওঠা প্রাকৃতিক এই অভয়াশ্রম ধ্বংস হয়ে গেলো। কুলসীবাসা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক রুস্তম আলী বলেন, প্রতিদিন টিফিনের সময় স্কুলের পাশে শতাধিক শালিক পাখি খাবারের জন্য আসতো কিন্তু শিলাবৃষ্টির পর আর একটি পাখিও আসেনি। প্রকৃতির খেয়ালীপনায় আজ এলাকা পাখিশূন্য হয়ে গেল। এলাকাটি পাখিদের বসবাসের জন্য উপযোগী ছিল। এ বিষয়ে কুমারখালী উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. রাশেদুল হক বলেন, কালবৈশাখী ঝড় ও ভারি শিলাবৃষ্টির কারণে কুলসীবাসা-ছাগলাপাড়া এলাকার প্রায় ৮-১০ হাজার পাখি মারা গেছে। মৃত পাখিগুলো অপসারণের জন্য মাটিতে পুঁতে ফেলা হয়েছে। আহত পাখিদের চিকিৎসা করা হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, আহত পাখিগুলোকে আমরা চিকিৎসার ব্যবস্থা করছি।  এসএইচএ/এমএএস/আরআইপি

Advertisement