বগুড়ার শেরপুরে পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত নিষিদ্ধ সংগঠন নব্য জেএমবির উত্তরাঞ্চলের সামরিক শাখার প্রধান আমিজুল ইসলাম ওরফে আলামিন ওরফে রনির (২৩) বাড়িতে তালা ঝুলছে। তিন দিন ধরে বাড়িতে নেই তার পরিবারের সদস্যরা। কোথায় গেছেন প্রতিবেশীরা জানেন না। পুলিশের কাছেও তাদের কোনো তথ্য নেই।এর আগে মঙ্গলবার রাত সোয়া ৮টার দিকে রাজশাহীর গোদাগাড়ী পৌর এলাকার বুজরুক রাজারামপুর মহল্লা থেকে আমিজুলকে গ্রেফতার করে বগুড়া ডিবি পুলিশ। ওই সসময় তাকে ধরতে গিয়ে বগুড়া জেলা গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) দুই সদস্য ছুরিকাহত হন। ওই রাত থেকেই আত্মগোপনে চলে যায় আমিজুলের পরিবারের সদস্যরা।আমিজুলের প্রতিবেশীরা জানান, এলাকার আতাউর রহমানের তৃতীয় স্ত্রী লাইলী বেগমের ছেলে আমিজুল। আমিজুলের বাবার সঙ্গে বিবাহ বিচ্ছেদের পর লাইলী বেগমের বিয়ে হয় আতাউর রহমানের সঙ্গে। আমিজুল চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার চর হরিশপুর গ্রামে তার নানার বাড়িতেই বেশিরভাগ সময় থাকতেন। তবে মাঝে মাঝে আসতেন মায়ের কাছে।প্রতিবেশীরা আরো জানান, এলাকার অনেকের কাছেই অচেনা এই আমিজুল। একা একা চলাফেরা করতেন তিনি। মসজিদে গিয়ে নামাজের পর দোয়ার বিরোধিতা করে এলাকায় সমালোচিত হন এ যুবক। এছাড়া তার কথাবার্তায় ছিল উগ্রতা। তবে এ আমিজুলই দুর্ধর্ষ জঙ্গি তা জানতেন না এলাকার কেউই।স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, আমিজুল নির্মাণ শ্রমিকের কাজ করতেন। তবে তিনি একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেন বলেও অনেকের কাছে বলেছিলেন। এক বছর আগে থেকে আমিজুল পাঞ্জা্বি পরতে শুরু করেন। মুখে দাড়িও রাখেন। সব সময় মাথায় টুপি পরে চলাফেরা করতেন। আমিজুলের বাবা আতাউর রহমান আগে জুয়া-মাদকে মেতে থাকতেন। তবে সম্প্রতি তিনিও নিজেকে বদলে ফেলেছেন। মসজিদে গিয়ে পাঁচ ওয়াক্ত আজান দিয়ে মুয়াজ্জিন বনে যান। তাদের বাড়িতে মাঝে মধ্যেই অচেনা নারীদের ইসলামী বৈঠকও হতো।এদিকে, ওই দিন থেকেই রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে ভর্তি ওই দুই পুলিশ সদস্য। এর মধ্যে পেটে গুরুতর যখম নিয়ে হাসপাতালের ৪ নম্বর ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন আবদুস সালাম। মাথায় আঘাত নিয়ে ৮ নম্বর ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন ইসমাঈল হোসেন। তারা এখন শঙ্কামুক্ত বলে জানিয়েছেন চিকিৎসক। রামেক হাসপাতালে গিয়ে দেখা গেছে, কঠোর নিরপত্তায় চিকিৎসা নিচ্ছেন এ দুই পুলিশ সদস্য। চিকিৎসাধীন ইসমাঈল হোসেনের সঙ্গে কথা বলতে চাইলে দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যরা বাধা দেন। তবে আবদুস সালাম জানিয়েছেন, আমিজুল জেএমবির দুর্ধর্ষ জঙ্গি। গত এক মাস ধরেই তারা আমিজুলের গতিবিধি নজরে রেখেছিলেন। ওই রাতে তাদের সঙ্গে বগুড়া জেলা ডিবির একজন সহকারী উপ-পরিদর্শকও (এএসআই) ছিলেন। ওই সময় বাড়ি থেকে বের হচ্ছিলেন আমিজুল। তাকে একা পেয়ে এই সুযোগটিই কাজে লাগাতে চান তারা। তাকে প্রথমেই আটকান কনস্টেটেবল ইসমাঈল। এ সময় তাকে ছুরিকাঘাত করা হয়। এরপর তিনি নিজেই আমিজুলকে জাপটে ধরেন। এ সময় তাকেও পরপর কয়েকটি ছুরিকাঘাত করে পালানোর চেষ্টা করে ওই যুবক। কিন্তু ব্যর্থ হয়।এ বিষয়ে গোদাগাড়ী মডেল থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হিফজুর আলম মুন্সি জানান, আমিজুলের পরিবার এলাকা ছেড়েছে এটি তারা জেনেছেন। তবে কোথায় তারা অবস্থান করছেন তা জানা যায়নি। এছাড়া আমিজুলের ‘বন্দুকযুদ্ধে’ মারা যাবার খবরও নেই তাদের কাছে। অন্যদিকে, পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় এখনো থানায় মামলা হয়নি বলে জানান ওসি। প্রসঙ্গত, বধুবার দিবাগত রাত ৩টার দিকে বগুড়ার শেরপুরের ভবানিপুর ইউনিয়নের জামনগর এলাকায় ‘বন্দুকযুদ্ধে’ মারা যান আমিজুল ইসলাম ওরফে আলামিন ওরফে রনি। এর আগে মঙ্গলবার রাত সোয়া ৮টার দিকে রাজশাহীর গোদাগাড়ী পৌর এলাকার বুজরুক রাজারামপুর মহল্লা থেকে তাকে গ্রেফতার করে ডিবি পুলিশ। বগুড়ার পুলিশ সুপার আসাদুজ্জামান ‘বন্দুকযুদ্ধের’ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।ফেরদৌস সিদ্দিকী/আরএআর/আরআইপি
Advertisement