কক্সবাজারের রামুতে সংরক্ষিত বনাঞ্চল ও রাবার বাগানের পাশে ফসলি জমিতে একের পর এক ইটভাটা স্থাপন অব্যাহত রয়েছে। এনিয়ে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করছেন পরিবেশবিদরা। কাউয়ারখোপ ইউনিয়নের মৃত মোতাহের মিয়ার ছেলে মোহাম্মদ আনোয়ার জানিয়েছেন, রামু উপজেলার ১১টি ইউনিয়নের মধ্যে খাদ্যশস্য উৎপাদনকারী এলাকা হিসেবে পরিচিত কাউয়ারখোপ ইউনিয়নের উখিয়ারঘোনা গ্রাম। কয়েকবছরে এ গ্রামে স্থাপিত হয়েছে ৫টি ইটভাটা। নতুন করে আরো কয়েকটি ইটভাটা স্থাপনের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এটি জানার পর থেকেই ওই এলাকার সাধারণ মানুষের মাঝে চরম ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। এখানে যে ৫টি ইটভাটায় বর্তমানে ইট উৎপাদন হচ্ছে তার সবকটিই সরকারি অনুমোদনহীন। এ ইউনিয়নে নতুন করে আর কোনো ইটভাটা গড়ে উঠতে না দিতে সম্প্রতি পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন প্রশাসনিক দফতর ও জনপ্রতিনিধিদের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন আনোয়ার। অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে, কাউয়ারখোপ ইউনিয়নের অধিকাংশ মানুষের পেশা কৃষি। এলাকাটির তিনদিকে বন বিভাগের সংরক্ষিত বনাঞ্চল ও সরকারি রাবার বাগান। এখানে কৃষি জমির পরিমাণও কম। এরপরও বিগত কয়েক বছরে এখানে ৫টি ইটভাটা গড়ে তোলা হয়েছে। সম্প্রতি এলাকায় আরো কয়েকটি ইটভাটা স্থাপনের জোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন কিছু লোভী মহল। এসব ইটভাটার মধ্যে রয়েছে রিফাত জাহান এর এবিএম ব্রিকস, রফিকুল আলম ইসলামের আরআইসি ব্রিক এবং নুরুল আজিম ও ওসমান গনির টু স্টার ব্রিক। অভিযোগে আরো উল্লেখ করা হয়, কাউয়ারখোপ ইউনিয়নের দুটি উচ্চ বিদ্যালয়, চারটি প্রাথমিক বিদ্যালয়, দুটি বৌদ্ধ বিহার, একটি মঠ (জাদি) ও চারটি মাদরাসাসহ আরো বেশ কিছু শিক্ষা ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এখানে প্রতিদিন অনেক দেশি-বিদেশি পর্যটকও আসেন। সাম্প্রতিক সময়ে চালু হওয়া ইটভাটায় প্রতিদিন অসংখ্য মিনি ট্রাকভর্তি মাটি ও ইট বহনের কারণে এলাকার সড়কগুলো জরাজীর্ণ হয়ে পড়েছে। ইটের সুরকি ও ধুলাবালির কারণে শিক্ষার্থী আর পথচারিরা যাতায়াতে অবর্ণনীয় দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন। সেইসঙ্গে এসব ইটভাটায় মাটি সরবরাহ করতে গিয়ে এলাকার দুই ফসলি জমি অনেকাংশ এখন জলাধারে রূপ নিচ্ছে। কৃষি জমি হ্রাস, সংরক্ষিত ও সামাজিক বনায়ন ধ্বংসের কারণে এখানকার পরিবেশ ক্রমেই ভারসাম্য হারাচ্ছে। বাংলাদেশ বনশিল্প উন্নয়ন কর্পোরেশনের আওতাধীন রামু রাবার বাগান এর উপ-ব্যবস্থাপক মো. ওয়াহিদুল ইসলাম জানিয়েছেন, রামুর কাউয়ারখোপ ইউনিয়নের গনিয়াকাটা এলাকায় পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের নিয়ন্ত্রণাধীন রামু রাবার বাগান সংলগ্ন এলাকায় জনৈক ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠান দুটি ইটের ভাটা নির্মাণের চেষ্টা চালাচ্ছে। এ স্থানে ইটভাটা নির্মাণ হলে রাবার বাগানের কষ আহরণে মারাত্মক ক্ষতিসহ প্রতিনিয়ত রাবার গাছ দুষ্কৃতকারী কর্তৃক চুরি করে ইটের ভাটায় ব্যবহারের সম্ভাবনা রয়েছে। এছাড়া পরিবেশের সার্বিক ক্ষতিসহ বাগানে প্রতিনিয়ত কর্মরত ৪০০ মানুষের কর্মসংস্থান বন্ধ হতে পারে। তিনি আরো জানান, রামু রাবার বাগান ১৯৬০ সাল থেকে সরকারের রাজস্ব আয়ের ভূমিকায় নিয়োজিত। এটি বাংলাদেশের প্রথম সরকারি বাগান। এজন্য প্রতিষ্ঠানটির বৃহত্তর স্বার্থে তিনি এ এলাকায় ইটভাটার অনুমোদন না দেয়ার জন্য সম্প্রতি কক্সবাজার জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। সম্প্রতি ওই এলাকায় ইটভাটা স্থাপনে অবস্থানগত ছাড়পত্র চেয়ে কক্সবাজার পরিবেশ অধিদফতরের কাছে আবেদন জানান রামুর কাউয়ারখোপ ইউনিয়নের ওসমান ও নুরুল আজিম। পরিবেশ অধিদফতরের সহকারী পরিচালক সরদার শরীফুল ইসলাম এ স্থানে ইটভাটা স্থাপনের বিষয়ে উপজেলা চেয়ারম্যানের কাছে মতামত চেয়ে লিখিত অনুরোধ জানান।রামু উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান রিয়াজ উল আলম জানিয়েছেন, পরিবেশের লিখিত পত্র পেয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সরেজমিন ওই এলাকা পরিদর্শনে যান। কৃষি কর্মকর্তার দেয়া প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রস্তাবিত জমি দুই ফসলি এবং আবেদনপত্রে উল্লেখিত ৩টি দাগের পার্শ্ববর্তী বনাঞ্চল রয়েছে। উপজেলা চেয়ারম্যান আরো জানান, বিগত দুবছরে কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে ওই এলাকায় ইটভাটা স্থাপনের অনুমতি তিনি দেননি। একের পর এক ইটভাটা নির্মাণের কারণে বর্তমানে ওই এলাকায় পরিবেশ ভারসাম্য হারাচ্ছে বলে তাকে এলাকাবাসী অভিযোগ করেছেন। এরপরও কিভাবে ইটভাটা নির্মাণ হচ্ছে তা খতিয়ে দেখা হবে। রামু উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. শাজাহান আলি জানিয়েছেন, এসব বিষয়ে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো. আলী হোসেন বলেন, বিষয়টি জানা ছিল না। খোঁজ নিয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া হবে। পরিবেশের ক্ষতি করে কোনো মতেই নতুন ইটভাটা তৈরি করতে দেয়া হবে না বলে উল্লেখ করেন ডিসি।এফএ/আরআইপি
Advertisement