এবারও হুমকির মুখে রয়েছে নেত্রকোনার চার উপজেলার হাওরাঞ্চলের বোরো ফসল। ২৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ হাওরে ফসল রক্ষা বাঁধ নিমার্ণের কাজ শেষ করার কথা থাকলেও এখনো কোনো কোনো স্থানে কাজ শুরুই হয়নি। বাঁধের কাজ শুরু না হওয়ায় এরইমধ্যে ধনু নদীতে পানি বেড়ে তলিয়ে গেছে ধর্মপাশা এলাকার কয়েকটি হাওরের সবুজ ধান। সময়মতো হাওর রক্ষা বাঁধের কাজ শুরু না হওয়ায় বছরের একমাত্র বোরো ফসল তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কায় দিন কাটছে স্থানীয় চাষিদের। আবার কোনো কোনো স্থানে বন্যার হাত থেকে ফসল রক্ষায় নির্মাণ করা হচ্ছে বালির বাঁধ। ইতোমধ্যে সুনামগঞ্জের ধর্মপাশা উপজেলার শয়তানখালি বাঁধ দিয়ে পানি প্রবেশ করে শয়তানখালি হাওরের ৫শ একর বোরো ধান পানির নিচে তলিয়ে গেছে। মারাত্মক হুমকির মুখে পড়েছে সোনার তাল, চন্দ্র সোনার তাল, ডুবাইল, মারাদারিয়া আরও অন্যান্য হাওরের হাজার হাজার একর বোরো ফসলের জমি। সরকারি ব্যবস্থার বাইরে কৃষকরা ফসল রক্ষায় প্রাণপণ চেষ্টা অব্যাহত রেখেছেন।মোহনগঞ্জ উপজেলার গাগলাজুর, চানপুর, মান্দারবাড়ী, শ্যামপুর গ্রামের কৃষকরা ধর্মপাশা উপজেলার ওইসব হাওরের সব জমি আবাদ করে থাকেন। হাওর পাড়ের কৃষকরা যারা বোরো ধানের আবাদ করে থাকেন, তারা ফসল ঘরে উঠাতে পারবেন কিনা থাকেন সেই আতঙ্কে। প্রতি বছরই ফলসহানি হয় তবু আশায় বুক বেঁধে বেঁচে থাকার স্বপ্ন দেখেন কৃষক। কৃষকরা জানান, অন্যান্য বছরে মার্চ এপ্রিলে নদীতে পানি এলেও এবার আগাম পানি বেড়ে যাওয়ায় এবং বাঁধ অরক্ষিত থাকায় ধনু নদীর জোয়ারে কয়েকটি হাওরে ফসল তলিয়ে গেছে।মান্দারবাড়ী গ্রামের কৃষক ও হাওর রক্ষা কমিটির সভাপতি কাজল চৌধুরী জাগো নিউজকে জানান, প্রতি বছরের মতো এবারও সরকারি উদ্যোগে বিলম্বে কাজ শুরু করায় ধনু নদীর জোয়ারের পানি হাওরে ঢুকে ফসলহানির ঘটনা ঘটছে। হাইজদা প্রকল্পে ফসল রক্ষা বাঁধ নির্মাণের নামে করা হচ্ছে বালির বাঁধ। যা বৃষ্টিতে ভেঙে যাবে বলে আশঙ্কা চাষিদের। অন্যান্য হাওরের বোরো আবাদ করা চাষিরাও রয়েছেন আতঙ্কে। এ বছর নেত্রকোনার ৪টি উপজেলার ছোট-বড় ১২৮টি হাওরে ৪০ হাজার ২শ ৮৫ হেক্টর জমিতে বোরোর আবাদ হয়েছে। প্রতি বছর ডিঙ্গাপুতা, কির্তনখোলা, ঝালোখালিসহ বেশ কয়েকটি হাওরের ফসল রক্ষা বাঁধ ভেঙে আগাম বন্যার পানিতে হাজার হাজার হেক্টর ফসলি জমি নষ্ট হয়। প্রতিবছরই তড়িঘড়ি করে ঠিকাদার আর স্থানীয় পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের যোগসাজসে পানি আসার আগ মুহূর্তে এসব এলাকার ৩৬টি স্থানে হাওরের ফসল রক্ষা বাঁধের কাজ হয়। কিন্তু তাতেও কর্তৃপক্ষের তদারকি নেই বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।বন্যার হাত থেকে ফসল রক্ষায় নির্মাণ করা হচ্ছে বালির বাঁধ। পানি আসার ভয়ে তড়িঘড়ি করে বালি দিয়ে বাঁধ নির্মাণ করা হচ্ছে বলে জাগো নিউজকে জানান, হাইজদা পিআইসি প্রকল্পের সদস্য সচিব গোলাম মোস্তফা।তবে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় পানি উন্নয়ন বোর্ড নিজ উদ্যোগে বাঁধ নিমার্ণের কাজ শুরু করেছে বলে জাগো নিউজকে জানিয়েছেন সুনামগঞ্জ পাউবোর আরেক উপ-সহকারী প্রকৌশলী জাহাঙ্গির আলম। কাজে অবহেলার দায়ে দায়ী ধর্মপাশা উপজেলার দক্ষিণ-রাজাপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আমানূর রাজা চৌধুরীকে গ্রেফতারের নির্দেশ দেয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি।এবছর হাওরের ৩৬টি স্থানে পৌনে তিন কোটি টাকা ব্যয়ে ফসল রক্ষা বাঁধ নির্মাণের কাজ হওয়ার রয়েছে। সময়মতো হাওর রক্ষা বাঁধগুলো সংস্কার করে একমাত্র বোরো ফসল নষ্ট হওয়ার হাত থেকে রক্ষা করার দাবি হাওরাঞ্চলের চাষিদের। এদিকে নেত্রকোনা পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা যায়, ১৬/১৭ অর্থবছরে অনুন্নয়ন রাজস্ব খাতভুক্ত কর্মসূচির আওতায় নেত্রকোনার চার উপজেলার হাওরের ফসল রক্ষার ৪১টি প্রকল্পে পৌনে তিন কোটি টাকা ব্যয়ে ফসল রক্ষা বাঁধ নির্মাণের কাজ ২৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে কাজ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে।এবছর হাওরের ৪১টি স্থানে পৌনে তিন কোটি টাকা ব্যয়ে ফসল রক্ষা বাঁধ নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে বলে জাগো নিউজকে জানান, নেত্রকোনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আবু তাহের। নির্ধারিত সময়ে না হলেও ১৫ মার্চের মধ্যে ফসল রক্ষা প্রকল্পের কাজ শেষ করতে পারতে বলে জানান তিনি।কামাল হোসাইন/এফএ/আরআইপি
Advertisement