দালাল ছাড়া ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস থেকে সরাসরি খুব একটা সেবা মিলছে না সাধারণ গ্রাহকদের। গ্রাহকদের জন্য করা সেবা সপ্তাহেও এর ব্যতিক্রম হয়নি। দালালের মাধ্যমেই সেবা সপ্তাহে সেবা নিয়েছেন অসংখ্য গ্রাহক। পাসপোর্ট অফিসের কয়েকজন স্টাফের নামও রয়েছে দালালদের দীর্ঘ এ তালিকায়। তাদের হাত ধরেই পাসপোর্ট করছেন অনেকে।খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২৬ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হয় পাসপোর্ট সেবা সপ্তাহ-২০১৭। এ উপলক্ষে বর্ণিল সাজে সেজেছে ব্রাহ্মণবাড়িয়া আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস। একাধিক তোরণও নির্মাণ করা হয়েছে অফিসের সামনের সড়কে। পাশাপাশি ব্যানার-ফেস্টুনও লাগানো হয়েছে অফিস ক্যাম্পাস ও এর আশপাশের এলাকায়। সাজসজ্জায় অফিস অন্যরূপ ধারণ করলেও বদলায়নি পুরনো চিত্র। বুধবার (১ মার্চ) দুপুরেও পাসপোর্ট অফিসের ৫০ গজ দূরত্বের মধ্যে চোখে পড়ে দালালদের দৌরাত্ম্য। এসব দালালরা রীতিমতো ঘর ভাড়া নিয়ে পাসপোর্ট অফিসের ‘শাখা’ খুলে বসেছেন।বুধবার (১ মার্চ) সরেজমিন খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আল আমিন, আফজল, কেফায়েত, শামসু, জহির, আদনান ও খোকন নামের কয়েকজন পাসপোর্ট দালালির সঙ্গে জড়িত রয়েছেন। এর মধ্যে আল আমিন, আফজল, শামসু প্রকল্পের অধীনে পাসপোর্ট অফিসে চাকরিরত। বাকিরা আগে চাকরি করতেন, এখন চাকরি ছেড়ে দিয়ে অফিসের ভেতরে বসেই দালালি শুরু করেছেন। এসব দালালদের মাথার উপর ছায়া হয়ে আছেন পাসপোর্ট অফিসের উপ-সহকারী পরিচালক শাহাদত হোসেন। তার সঙ্গেই সব দালালদের যোগাযোগ।পাসপোর্ট করতে আসা কয়েকজন গ্রাহকের সঙ্গে কথা হয় জাগো নিউজের এ প্রতিবেদকের। তাদের একজন কসবা উপজেলার আবদুল কাইয়ূম। তিনি জানান, পাসপোর্ট অফিসের এক লোকের সঙ্গে কথা হয়েছে। ৯ হাজার টাকা চুক্তিতে তিনি পাসপোর্ট করে দেবেন বলে জানিয়েছেন। অফিসের এই লোক ১৫ দিনের মধ্যেই পাসপোর্ট এনে দিতে পারবেন। তবে ওই লোকের নাম প্রকাশ করেননি কাইয়ূম।এদিকে, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সরকারি এ পাসপোর্ট অফিসটির বাইরেও রয়েছে আরো অনেক ‘কথিত’ পাসপোর্ট অফিস। এসব অফিসে প্রতিদিন অনেক মানুষ আসছেন তাদের পাসপোর্ট করার জন্য। জেলা সদরের কুমারশীল মোড়স্থ আমিন কমপ্লেক্সের পঞ্চম তলায়ও রয়েছে পাসপোর্টের এমন একটি অফিস। এ অফিসে প্রতিদিন একশ’র বেশি মানুষ আসেন পাসপোর্ট করার জন্য। ব্রাহ্মণবাড়িয়া এক্সপোর্ট লিমিটেড নামের ওই অফিসের স্বত্তাধিকারী হেলাল নামের এক ব্যক্তি। এছাড়াও শহরের মসজিদ রোডের সিয়াম টেলিকমের স্বত্তাধিকারী জুয়েল, একই রোডের চাপাতা ব্যবসায়ী ফেলুও পাসপোর্টের বড় দালাল। তাদের এসব ব্যবসা প্রতিষ্ঠানই পাসপোর্ট অফিস হিসেবে পরিচিত। এ দুইজনসহ তিন দালালকে কয়েক বছর আগে ভ্রাম্যমাণ আদালত কয়েকশ পাসপোর্টসহ আটক করে কারাদণ্ড প্রদান করেন। এছাড়াও জেলার বিভিন্ন উপজেলায় রয়েছে এ ধরনের পাসপোর্ট অফিস।২৫ দিনে যে পাসপোর্ট দেয়া হয় তার জন্য সরকার নির্ধারিত ফি ৩ হাজার ৪৫০ টাকা এবং জরুরি ১০ দিনের জন্য নির্ধারিত ফি ৬ হাজার ৯০০ টাকা। তবে দালালরা একটি পাসপোর্ট করতে দ্বিগুন থেকে তিনগুন টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন সাধারণ গ্রাহকদের কাছ থেকে। সাধারণ সময়ের একটি পাসপোর্ট করার জন্য দালালরা ৫ হাজার ৭শ এবং জরুরি হলে ৯ হাজার ৩শ টাকা নিয়ে থাকেন। এর মধ্যে ফিঙ্গার প্রিন্ট ও পুলিশ ভেরিফিকেশনের জন্য ১ হাজার করে ২ হাজার টাকা রয়েছে।প্রতিদিন আঞ্চালিক পাসপোর্ট অফিসে দুই থেকে আড়াইশ পাসপোর্ট করা হয়। এর বেশিরভাগই আসে দালালদের মাধ্যমে। দালালরা ফিঙ্গারপ্রিন্ট অফিসকে দেয়ার জন্য প্রত্যেকের কাছ থেকে ১ হাজার টাকা নিয়ে থাকেন। সে হিসেবে প্রতিদিন আড়াই লাখ টাকা উঠছে শুধুমাত্র ফিঙ্গারপ্রিন্ট থেকেই। তবে এ অভিযোগ অস্বীকার করেছে পাসপোর্ট অফিস কর্তৃপক্ষ।ব্রাহ্মণবাড়িয়া আঞ্চালিক পাসপোর্ট অফিসের সহকারী পরিচালক তারেক সালমান জানান, ফিঙ্গারপ্রিন্টের জন্য গ্রাহকদের কাছ থেকে কোনো টাকা নেয়া হয় না। তাছাড়া অফিসের ভেতর কোনো দালাল নেই বলেও দাবি করেন তিনি।এফএ/আরআইপি
Advertisement