মুশফিকুর রহীম কি উইকেট কিপিং করবেন? না কিপিং ছেড়ে শুধু ব্যাটসম্যান হিসেবে খেলে দলকে নেতৃত্ব দেবেন? টিম বাংলাদেশ কলম্বো পৌঁছার পর এ প্রশ্ন আরও ডাল-পালা গজাচ্ছে। এর মধ্যে গুঞ্জন মুশফিক কিপিং ছেড়ে শুধু ব্যাটসম্যান হিসেবে টেস্ট খেলবেন এবং ছয় নম্বরের বদলে প্রমোশন পেয়ে চার নম্বরে ব্যাটিং করবেন। গতকাল (মঙ্গলবার) রাত থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এ গুঞ্জন রীতিমতো চাউর হয়ে গেছে। কেউ কেউ ধরেই নিয়েছেন মুশফিক কিপিং ছেড়ে শুধু ব্যাটসম্যান হিসেবে খেলবেন। আর উইকেটের পিছনে গ্লাভস হাতে দাঁড়াবেন লিটন দাস। সত্যিই কি তাই? অধিনায়ক মুশফিক কি সত্যিই স্বেচ্ছায় কিপিং ছেড়ে দেবেন? শ্রীলঙ্কা যাওয়ার ২৪ ঘণ্টা আগে প্রেস কনফারেন্সেও যিনি ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি কিপিং চালিয়ে যাওয়ার ইচ্ছা ব্যক্ত করেছেন, সেই তিনি শ্রীলঙ্কা গিয়ে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে সিদ্ধান্ত পাল্টে কিপিং ছেড়ে শুধু ব্যাটসম্যান হিসেবে খেলবেন? এত অল্প সময়ে তার মতো পাল্টানো অস্বাভাবিক ঠেকে বৈকি। হ্যাঁ টিম ম্যানেজমেন্টের পক্ষ থেকে যদি তাকে কিপিং ছেড়ে দেয়ার পরামর্শ দেয়া হয় তাহলে ভিন্ন কথা। তবে কি টিম ম্যানেজমেন্টের পক্ষ থেকে মুশফিককে কিপিং ছেড়ে শুধু ব্যাটিংয়ে মনোযোগী হওয়ার পরামর্শ দেয়া হয়েছে? খুব প্রাসঙ্গিক প্রশ্ন। তবে ভিতরের খবর, আজ দুপুরে কলম্বোর প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামে প্র্যাকটিস চলাকালীনও মুশফিককে কিপিং ছাড়ার পরামর্শ দেয়া হয়নি। অমন কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। মুশফিকুর রহীম নিজ থেকে কিপিং ছেড়ে দেয়ার কথা বলেননি। আর টিম ম্যানেজমেন্টের পক্ষ থেকেও তাকে কিপিং ছেড়ে দেয়ার পরামর্শ দেয়া হয়নি। হেড কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহে ছাড়া যে দুজন এ কৌতূহলী প্রশ্নের জবাব দিতে পারেন, সেই প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদিন নান্নু ও খালেদ মাহমুদ সুজন এ বিষয়ে জাগো নিউজের সঙ্গে কথা বলেন। তারা দুজনই জানিয়েছেন, ‘মুশফিক কিপিং ছেড়ে শুধু ব্যাটিং করবেন, এমন কোনো কথাবার্তা হয়নি।’ কলম্বো থেকে জাগো নিউজের সঙ্গে টেলিফোন আলাপে খালেদ মাহমুদ সুজন বলেন, ‘মুশফিক কিপিং ছেড়ে শুধু ব্যাটিং করবেন, এমন কোনো সিদ্ধান্ত দূরে থাক, কথাও হয়নি। আমরাও মুশফিককে বলিনি। মুশফিকও আমাদের কিছু বলেনি। বুধবার বাংলাদেশ সময় বেলা দেড়টা নাগাদ জাগো নিউজের সাথে কথা বলেন খালেদ মাহমুদ সুজন। টিম বাংলাদেশ তখন কলম্বোর প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামে প্র্যাকটিস করছিল। ক্রিকেট ম্যানেজার খালেদ মাহমুদ সুজন জাগো নিউজকে আরও জানান, ‘মুশফিক কিপিং ছেড়ে শুধু ব্যাটসম্যান হিসেবে খেলবে এ বিষয়ে এখন পর্যন্ত আসলে কোনো কথাই হয়নি। মুশফিকের পক্ষ থেকেও বিষয়টি তোলা হয়নি। টিম ম্যানেজমেন্টের পক্ষ থেকেও এখন পর্যন্ত কিছু বলা হয়নি।’ তবে খালেদ মাহমুদ একটি তাৎপর্যপূর্ণ তথ্য দিয়েছেন। তার শেষ কথা, ‘আগামীকাল বৃহস্পতিবার থেকে মোরাতোয়ায় যে দুুদিনের প্রস্তুতি ম্যাচ আছে, সেখানেই বোঝা যাবে মুশফিক কি করবে? তার আগে আজ সন্ধ্যায় টিম মিটিং আছে। আজকের সেই টিম মিটিংয়ে ওই প্রসঙ্গ উঠলেই কেবল বলতে পারবো আসলে মুশফিক কিপিং করবে কি করবে না?’ ক্রিকেট ম্যানেজারের সুরে সুর মিলিয়ে কথা বলেছেন প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদিন নান্নুও। নিউজিল্যান্ড সফরে জাতীয় দলের সঙ্গী থাকলেও এখনো শ্রীলঙ্কা যাওয়ার প্রহর গুণছেন প্রধান নির্বাচক। জানা গেছে, বিসিবিপ্রধান নাজমুল হাসান পাপন দেশে ফিরলেই হয়তো তার শ্রীলঙ্কা যাওয়ার বিষয়টি আলোচনা হবে। তবে ভিতরের খবর, মিনহাজুল আবেদিন শ্রীলঙ্কায় জাতীয় দলের সঙ্গী হবেন। হয়তো ৭ মার্চ প্রথম টেস্ট শুরুর আগেই যাবেন।আজ দুপুরে জাগো নিউজের সাথে আলাপে মিনহাজুল আবেদিন বলেন, ‘আমি এখান থেকে কিছু পরিষ্কার বলতে পারছি না। তবে এটা সত্য টেস্টে গড়পড়তা একেক ইনিংসে ১০০ থেকে ১৫০ ওভার কিপিং করার পর ব্যাটিংয়ে নামা অনেক ঝক্কির। শারীরিক দিক থেকেও কষ্টের। তারপরও এটা একান্তই মুশফিকের ব্যাপার। তার ওপরই নির্ভর করছে সব। সে দলের অধিনায়ক, সে যদি কিপিং চালিয়ে যেতে চায়, তাহলে করবে। আজ সন্ধ্যায় টিম মিটিংয়ে বিষয়টি নিয়ে হয়তো কথা হতে পারে।’ এদিকে আরও একটা খবর আছে। সম্ভবত সেটাই শেষ কথা। বাংলাদেশ জাতীয় দলে কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহের মতোই শেষ মত। তার কথাই আসল কথা। দল নির্বাচন থেকে শুরু করে লক্ষ্য ও কৌশল নির্ধারণ সবই ঠিক করেন হেড কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহে। তিনি যদি চান তাহলেই কেবল মুশফিক কিপিং ছেড়ে দিতে পারেন। দেশ ছাড়ার আগে প্রায় আবেগতারিত মুশফিক জনাকীর্ণ সংবাদ সম্মেলনে পরিষ্কার বলে দিয়েছেন, টিম ম্যানেজমেন্ট যা চাইবে, সেটাই মেনে নেবো। সেটাই করবো। তবে আমাকে বলতে বলা হলে আমি বলবো, ‘ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি কিপিংটাও উপভোগ করি আমি। আমার বিশ্বাস ও বোধ ব্যাটিংয়ের সঙ্গে কিপিংয়েও দলের সাফল্যে অবদান রাখার পর্যাপ্ত সামর্থ্য আছে আমার।’ এআরবি/এমআর/জেআইএম
Advertisement