মতামত

জাপানি নাগরিক হত্যার রায় ও মার্চের শপথ

রংপুরে চাঞ্চল্যকর জাপানি নাগরিক কুনিও হোশি হত্যা মামলায় জেএমবির পাঁচ জঙ্গির ফাঁসির আদেশ দিয়েছেন আদালত। একই সঙ্গে এ মামলা থেকে একজনকে বেকসুর খালাস দেয়া হয়। এই রায় স্বস্তির। উগ্রপন্থিদের আস্ফালন বন্ধে এই রায় ভূমিকা রাখবে বলে আমাদের বিশ্বাস। গতকাল মঙ্গলবার বেলা ১১ টায় এ রায় দেন রংপুরের বিশেষ জজ নরেশ চন্দ্র সরকার। ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন, জেএমবির পীরগাছার আঞ্চলিক কমান্ডার পীরগাছা উপজেলার পশুয়া টাঙ্গাইলপাড়ার মাসুদ রানা ওরফে মামুন ওরফে মন্ত্রী (২১), একই এলাকার জেএমবির সদস্য ইছাহাক আলী (২৫), বগুড়ার গাবতলী এলাকার জেএমবির সদস্য লিটন মিয়া ওরফে রফিক (২৩), গাইবান্ধার সাঘাটার হলদিয়ার চর এলাকার সাখাওয়াত হোসেন (৩২) ও বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের পলাতক শিক্ষার্থী আহসান উল্লাহ আনছারী। এছাড়া এ মামলা থেকে পীরগাছার কালীগঞ্জ বাজারের জেএমবির সদস্য আবু সাঈদকে (২৮) বেকসুর খালাস দিয়েছেন আদালত। ২০১৫ সালের ৩ অক্টোবর কাউনিয়া উপজেলার সারাই ইউনিয়নের আলুটারি গ্রামে ৬৬ বছর বয়সি জাপানি নাগরিক কুনিও হোশিকে গুলি করে হত্যা করা হয়। সেই সময় গুলশানে সিসারে তাভেল্লা নামে একজন ইতালীয় নাগরিককে গুলি করে হত্যার এক সপ্তাহ না যেতেই রংপুরে  জাপানি নাগরিক হোসি কুনিওকে হত্যা করা হয়। গুলশান টু রংপুর। হত্যার ধরন ও টার্গেট একই রকম। টার্গেট বিদেশি নাগরিক। হত্যাকারীরা মুখোশধারী, মোটরসাইকেলে এসে কাছ থেকে গুলি করে হত্যা করা হয়। এই হত্যাকাণ্ডগুলো কোনো ব্যক্তিগত শত্রুতাকে কেন্দ্র করে নয়। নিছক অসৎ উদ্দেশ্য হাসিলের জন্যই এই হত্যা। জেএমবির সদস্যদের ফাঁসির দণ্ড হওয়ার মধ্য দিয়ে এটা প্রমাণিত হল যে বিশেষ আদর্শে তাড়িত হয়ে উগ্রবাদিরা এই হত্যাকাণ্ড চালিয়েছে। কিন্তু অপরাধ করে পার পাওয়া যায় না। অগ্নিঝরা মার্চের আজ প্রথম দিন। একাত্তরে এই মার্চেই বাঙালি পাকজান্তার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছিল। যা শেষ পর্যন্ত আমাদের দিয়েছে একটি স্বাধীন সার্বভৌম দেশ। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত বাংলাদেশে জঙ্গিবাদ বা চরমপন্থার কোনো জায়গা হতে পারে না। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এদেশে বিদেশিদের হত্যা করে শান্তি বিনষ্ট করা যাবে না।সরকার জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স দেখাচ্ছে। জঙ্গিবাদ দমনে বিদেশিরাও বাংলাদেশের এই অবস্থানকে প্রশংসার চোখে দেখছে। বিদেশি নাগরিক হত্যা করে সেই দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক নষ্ট করা বা গণমাধ্যমের দৃষ্টি আকর্ষণ করা এটা কোনো সঠিক পন্থা হতে পারে না। এই মার্চে নতুন করে শপথ নিতে হবে সকল চরমপন্থার বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নেয়ার। যে রায় হল তা স্বস্তির। আরো আইনি ধাপ বাকি আছে। পলাতক আছে দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিও। সবাইকে আইনের কাঠগড়ায় দাঁড় করাতে হবে। সকল আইনি ধাপ শেষ করে নিশ্চিত করতে হবে অপরাধীদের শাস্তি। সমাজকে এই বার্তা দিতে হবে যে,  এইদেশে কোনো অপরাধ করেই পার পাওয়া যাবে না। এইচআর/পিআর

Advertisement