শহীদ মিনার মনে করিয়ে দেয় ত্যাগ আর অগণিত প্রাণের বিনিময়ে বাঙালির প্রাপ্তি। বিশ্বে বাঙালিই একমাত্র জাতি যাদের ভাষার জন্য প্রাণ দিতে হয়েছে। মাথা নুয়ে ছেলে হারাবার শোকে কাতর মা, কিন্তু রয়েছে তার আরও চার ছেলে। মায়ের দুই দিকে দু’জন বুক টান করে দাঁড়িয়েছে। ‘মাগো... ভাবনা কেনো? আমরা তোমার শান্তি প্রিয় শান্ত ছেলে, তবু শত্রু এলে শক্ত হাতে লড়তে জানি/ তোমার ভয় নেই মা, আমরা প্রতিবাদ করতে জানি’। এই ঘোষণা তাদের।অসীম সাহসী ছেলেদের ঘোষণার পেছনে উঠছে লাল সূর্য। সে সূর্য কেবল মায়ের ভাষায় কথা বলার নিশ্চয়তাই দেয় না, জানান দেয়, উঁকি দিয়েছে চেতনার লাল সূর্য, স্বাধীনতার সূর্য। কাতর মায়ের পায়ের কাছে বেদী রক্তে লাল হয়ে আছে সে রক্ত ছড়িয়েছে অনেকটা জুড়ে। সূর্যের রঙ আর সেই লাল মিলেমিশে একাকার।আজ ২৮ ফেব্রুয়ারি। ভাষার মাসের শেষ দিন। ঠাকুরগাঁও কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে লাল সূর্যও খুলে ফেলা হয়েছে। আর এতে করে শহীদ মিনারের বিকৃতি ঘটেছে বলে সচেতন মহল ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারটি সারা বছরই অরক্ষিত থাকে। বেশিরভাগ লোকই জুতা পায়ে বেদীতে উঠে অবমাননা করে শহীদ মিনারকে।সাংস্কৃতিক কর্মী সুচরিতা দেব জানান, আমরা ভাষার মাসেই শহীদ মিনার ধোয়ামোছা ও রক্ষণা-বেক্ষণের কাজ করি। বাকি সারা বছর অবহেলায় পড়ে রয়। শুধু দু’দিনের জন্য শহীদ মিনারের পেছনে লাল সূর্যটা দেখতে পাই। ফেব্রুয়ারি চলে গেলেই আবার খুলে ফেলা হয় সেই লাল সূর্য। আমরা ভাষা আন্দোলনকে এক মাসের জন্য মনে রাখতে চাই না। সারা বছর ভাষার চেতনাকে লালন করতে চাই বুকে। ভাষা সৈনিক ও মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক আকবর হোসেন বলেন, সকালেই ভাষা শহীদদের শ্রদ্ধা, বিকেলেই অবমাননা করা হয়েছে এবার। এটা একটি বড় অপরাধ। প্রশাসনের প্রতি অনুরোধ থাকবে স্মৃতিসৌধের উপর জুতা পরে উঠলে যেন আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। অনেক রক্তের বিনিময়ে আমরা এই ভাষা পেয়েছি। শহীদ মিনারে লাল সূর্য না থাকলে ভাষা আন্দোলনের চেতনাই থাকবে না। সব সময় থাকবে শহীদদের বুকে লাল সূর্য এটাই প্রত্যাশা করি।ঠাকুরগাঁও সরকারি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ প্রফেসর হূমায়ুন কবির জানান, শহীদ মিনার মহান ভাষা শহীদদের আত্মত্যাগ, দেশপ্রেম ও বীরত্বের প্রতীক। এর রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব সরকারের পাশাপাশি সাধারণ নাগরিকের তথা আমাদেরও। যতদিন বাংলা ভাষা ও বাঙালিরা টিকে থাকবে আমাদের মাঝে মহান ভাষা শহীদদের স্মৃতি অমর হয়ে থাকবে। তাই এই শ্রদ্ধা যেন শুধু ভাষার মাস ফেব্রুয়ারিকে ঘিরেই অবর্তিত না হয়ে সবসময় বজায় থাকে লাল সূর্য এটাই কাম্য। ঠাকুরগাঁও কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার রক্ষনাবেক্ষন কমিটির সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মাহাবুর হোসেন খোকন জানান, আমাদের শহীদ মিনারের পেছনের সূর্যটা লাল কাপড় দিয়ে তৈরি। সারা বছর যেন কাপড়টি ময়লা নয় হয় সে কারণে খুলে রাখা হয় লাল সূর্যটি। আমাদের সকলকে সচেতন হয়ে মন থেকে শহীদ মিনার রক্ষণাবেক্ষণ করা উচিত।ঠাকুরগাঁও জেলা প্রশাসক আব্দুল আওয়াল জানান, সব সময় ঠাকুরগাঁও শহীদ মিনারে যেন লাল সূর্য থাকে অবিলম্বে সেটা নিশ্চিত করা হবে।রবিউল এহসান রিপন/এফএ/পিআর
Advertisement