দেশজুড়ে

মালয়েশিয়ায় নিহতদের গ্রামের বাড়িতে শোকের মাতম

মালয়েশিয়ার রাজধানী কুয়ালালামপুরে নির্মাণাধীন একটি উড়াল সেতু ধ্বসে নিহত তিনজনের মধ্যে দুইজনের বাড়ি পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলার জয়নগর গ্রামে। নিহতের পরিবারে এখন চলছে শুধু শোকের মাতম। স্বজনদের মুখে হাসি ফোটানোর জন্য তারা গিয়েছিলেন মালয়েশিয়ায়। কিন্তু তাদের মৃত্যুতে কান্নাই এখন একমাত্র সম্বল পরিবার দু’টির। সংসারের স্বচ্ছলতা আনতে ভাগ্য ফেরানোর আশায় ৪ মাস আগে এক বুক স্বপ্ন নিয়ে মালয়েশিয়ায় পাড়ি জমিয়েছিলেন পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলার জয়নগর মধ্যপাড়া গ্রামের শাহাদত মল্লিকের ছেলে আলাউদ্দিন মল্লিক (৩৬) ও একই এলাকার আব্দুস সাত্তার কারিগরের ছেলে এলাহী হোসেন (৩০)। কিন্তু ভ্যাগ্যের নির্মমতা তাদের নিয়ে গেছে না ফেরার দেশে। একটি দূর্ঘটনায় ভেঙ্গে চুরমার হয়েছে দু’টি পরিবারের সব স্বপ্ন।জানা গেছে, আলাউদ্দিন আলাল নিজ এলাকায় মওসুমি ফল আম, কাঁঠাল, লিচুর ব্যবসার পাশাপাশি ক্ষুদ্র ব্যবসা করে পরিবার পরিজন নিয়ে জীবিকা নির্বাহ করে আসছিল। স্বপ্ন পূরণের জন্য বাবার ২ কাঠা জমি বিক্রি আর বিভিন্ন ব্যাংক ও এনজিও থেকে চড়া সুদে ঋণ গ্রহণ করে প্রায় ৫ লাখ টাকা খরচা করে সে মালয়েশিয়ায় গমণ করে।নিহত আলালের ছোট ভাই জালাল উদ্দীন বলেন, তার ভাই তিন সন্তানের জনক। জিসান বয়স ১১। সে স্থানীয় জয়নগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র। ছোট ছেলে শান্ত। বয়স ৮। সে একই স্কুলের প্রথম শ্রেণিতে পড়ে। আর একমাত্র মেয়ে আশফার বয়স দেড় বছর। নিহত আলালের স্ত্রী শম্পা বেগম স্বামীর মৃত্যুর সংবাদ পাওয়ার পর থেকেই শয্যাশায়ী।   নিহত আলালের বন্ধু এলাহী হোসেন। দুই বন্ধু এক সাথেই পাড়ি দিয়েছিল স্বপ্ন পূরণে মালয়েশিয়ায়। নিজ টাকায় সিএনজি অটোরিক্সা কিনে নিজেই চালাতো। স্বপ্ন পূরণের লক্ষ্যে এলাহী সিএনজি অটোরিক্সা বিক্রি করে পরিবারের অন্যদের আর্থিক সহযোগিতা নিয়ে আলালের মতোই সমপরিমান টাকার বিনিময়ে পাড়ি দেয় মালয়েশিয়ায়। চার ভাইয়ের মধ্যে এলাহী সবার ছোট। ছোট ও আদরের সন্তান হারিয়ে কান্নায় মূর্চ্ছা যাচ্ছেন এলাহীর বৃৃদ্ধ মা আকলিমা খাতুন।এলাহীর মা জানান, ছেলে বিদেশে গেছে প্রায় চার মাস। এখনও কোন টাকা পাঠায়নি। চলতি মাসের ৩০ তারিখে টাকা পাঠাবে এমনটি জানিয়েছিল মা ও তার ভাইদের। কিন্তু টাকা আর পাঠানো হলো না। হলো না স্বপ্নের বাড়ী করা।প্রসঙ্গত, মালয়েশিয়ায় নির্মাণাধীন উড়াল সড়কের কংক্রিটের নিচে চাপা পড়ে নিহত তিন বাংলাদেশী শ্রমিকের মৃতদেহ বৃহস্পতিবার দেশে এসেছে। তিনজনের মৃতদেহ বহনকারী বিজি-০৮৭ এর একটি ফ্লাইট সকাল সাড়ে ৬টার দিকে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে।

Advertisement