ক্যাম্পাস

জাবিতে ভুয়া মুক্তিযোদ্ধার সনদে ভর্তির তথ্য ফাঁস

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ভুয়া মুক্তিযোদ্ধার সনদ দিয়ে শিক্ষার্থী ভর্তি হওয়ার কয়েকটি ঘটনা ফাঁস হয়েছে। বিভিন্ন বর্ষে মুক্তিযোদ্ধা কোটা ও উপাচার্যের বিশেষ কোটায় (মুক্তিযোদ্ধা) ভুয়া সনদ নিয়ে শিক্ষার্থী ভর্তি হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।মুক্তিযোদ্ধা কোটা ও উপাচার্যের বিশেষ কোটায় বিভিন্ন বর্ষে ভর্তিকৃত কিছু ছাত্রের সনদ যাচাই করে দেখা গেছে বাবার নামে কোনো মুক্তিযোদ্ধার সনদ নেই। এছাড়া সরকারি গেজেট ও ‘মুক্তিবার্তা’ (লাল বই) তালিকাতেও নেই কারো নাম। অথচ তারা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হচ্ছে।সনদ জালিয়াতির মাধ্যমে এসব ছাত্রদের ভর্তি করানো হয় বলে জানা গেছে। প্রশাসনের অসাধু কর্মকর্তারা এসব ভুয়া সনদ নিজেরাই তৈরি করেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এজন্য এসব ছাত্রের কাছ থেকে প্রায় ৪ লাখ করে টাকা নেয়া হয় বলে জানা যায়।খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০১০-১১ শিক্ষাবর্ষে দর্শন বিভাগে একজন, ২০১২-১৩ শিক্ষাবর্ষে জার্নালিজম এবং মিডিয়া স্টাডিজ বিভাগে একজন, ২০১৩-১৪ শিক্ষাবর্ষে প্রত্নতত্ত্ব বিভাগে একজন, সর্বশেষ গত শিক্ষাবর্ষে (২০১৪-১৫) আইন ও বিচার বিভাগে একজন ছাত্রকে ভর্তি করানো হয়। এসব ছাত্রকে ভুয়া মুক্তিযুদ্ধের সনদের মাধ্যমে ভর্তি করানো হয়।জানা যায়, শিক্ষা শাখার ঊর্ধ্বতন সহকারী বিল্লাল হোসেনের তত্ত্বাবধায়নেই এসব ভর্তির কাজ সম্পন্ন করা হয়। প্রাথমিকভাবে তিনি অপেক্ষমান তালিকা থেকে যেসব ছাত্র-ছাত্রী ভর্তি হতে পারছে না তাদের খোঁজ নেন। পরে তাদের সঙ্গে গোপনে বিভিন্ন মাধ্যমে যোগাযোগ করে ভর্তি হতে চাওয়া শিক্ষার্থীদের সাথে আর্থিক লেনদেনের ব্যাপারে সমঝোতা করেন।একটি সূত্র জানায়, মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়ের কতিপয় অসাধু কর্মকর্তার সঙ্গে বিল্লাল হোসেনের সম্পর্ক রয়েছে। এক্ষেত্রে তিনি নিজেই বানিয়ে দেন শিক্ষার্থীদের ভুয়া সনদ।ভুয়া সনদে এসব ছাত্র ভর্তি করানোর জন্য শিক্ষা শাখার ঊর্ধ্বতন সহকারী বিল্লাল হোসেন বিশ্বদ্যিালয়ের ছাত্রদের ব্যবহার করছেন বলে জানা গেছে।প্রত্নতত্ত্ব বিভাগে ২০১৩-১৪ সেশনে এক শিক্ষার্থীকে ভর্তি করাতে নৃ-বিজ্ঞান বিভাগের ৪২তম ব্যাচের মো. রিয়াজুল ইসলাম ও আলিফা আহমেদকে ব্যবহার করেছেন তিনি।বিল্লালের কাজে সহায়তাকারী নৃ-বিজ্ঞান বিভাগের আলিফা আহমেদও ভর্তি হয়েছেন মুক্তিযোদ্ধা কোটায়। তার সার্টিফিকেট নিয়েও অভিযোগ রয়েছে। তবে বিল্লাল হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি তার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ অস্বীকার করেন।এদিকে ২০১২-১৩ শিক্ষাবর্ষে জার্নালিজম এবং মিডিয়া স্টাডিজ বিভাগের এক শিক্ষার্থীকে ভুয়া সনদের মাধ্যমে ভর্তি করানো হয়। ওই শিক্ষার্থীর ভর্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী রেজিস্টার (এস্টেট) মো. আবদুর রহমান বাবুলের সহায়তায় সম্পন্ন হয় বলে জানা যায়। অবশ্য এই অভিযোগ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন বলে দাবি করে বাবুল বলেন, আমি পরপর দুইবার বিপুল ভোটে নির্বাচিত হওয়ায় প্রতিপক্ষ গ্রুপ আমার জনপ্রিয়তায় ঈর্ষান্বিত হয়ে ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার জন্য এই মিথ্যা গুজব রটিয়েছে’।এ বিষয়ে ডেপুটি রেজিস্টার মোহাম্মদ আলী (শিক্ষা) জানান, প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা সনদ যাচাইয়ের জন্য আমরা ধারাবাহিকভাবে সকল বর্ষের শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে তথ্য নিব।গত বছরের মুক্তিযোদ্ধা সন্তান ভর্তি কমিটির সভাপতি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপচার্য অধ্যাপক আবুল হোসেন বলেন, মুক্তিযোদ্ধা সন্তান কোটায় ভর্তির সময় একটি সরকারি স্ট্যাম্পে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অঙ্গীরকারনামা নেয়া হয় যে, যদি পরবর্তীতে সনদ ভুয়া প্রমাণিত হয়, তবে তার ছাত্রত্ব বাতিল করা হবে। কেউ জড়িত থাকলে তদন্তের ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।এসএইচএ/এমএএস/আরআই

Advertisement