জাতীয়

পদোন্নতি প্রশাসনের কাজে গতিশীলতা আনবে

প্রশাসনের তিন স্তরে পদোন্নতি হলেও আপাতত পদ পাচ্ছেন না পদোন্নতি পাওয়া ৮৭৩ কর্মকর্তা। এর ফলে আগের পদেই থাকতে হচ্ছে পদোন্নতি পাওয়া এসব কর্মকর্তাদের। এদিকে এবারও বিএনপিপন্থী কর্মকর্তারা পদোন্নতি থেকে বঞ্চিত হয়েছেন বলে অনেক কর্মকর্তা দাবি করেছেন। ধারণাগত জ্যেষ্ঠতা না পাওয়ায় অতিরিক্ত সচিব হতে পারেননি অনেক কর্মকর্তা। মঙ্গলবার সচিবালয়ে সকাল থেকেই পদোন্নতিপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের পদচারণায় মুখর হয়ে উঠে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিবের দফতর। সিনিয়র সচিবের কাছে কৃতজ্ঞতাও প্রকাশ করছেন তারা। সচিবও তাদের শুভেচ্ছা জানান। পদোন্নতি প্রাপ্তদের বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওএসডি) করায় তারা যোগদানপত্র জমা দিচ্ছেন সচিবের দফতরে।জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে জানা গেছে, পদোন্নতিপ্রাপ্তদের দু-এক দিনের মধ্যেই পদায়ন করা হবে। নিয়মিত পদ না থাকায় পদোন্নতি পাওয়ার পরও আগের স্থানেই থাকতে হবে কর্মকর্তাদের। এ বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী বলেন, এ পদোন্নতি প্রশাসনের কাজে গতিশীলতা আনবে। সচিব বলেন, ‘পদোন্নতিতে আমি সন্তুষ্ট। সিভিল সার্ভিসের কর্মকর্তাদের পদোন্নতি একটি প্রত্যাশিত বিষয়। এতে কর্মস্পৃহা বাড়ে। অনেকে বহুদিন চাকরি করে এ পদোন্নতি পেয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী প্রশাসনে গতিশীলতা আনতে চান।’তিনি আরও বলেন, ‘মেধা, যোগ্যতা, দায়িত্ব পালনের ক্ষমতা বিবেচনায় নিয়ে পদোন্নতি দেয়া হয়েছে। ভুলবশত যোগ্যতা থাকার পরও যারা পদোন্নতি পাননি তারা আবেদন করতে পারেন। পরবর্তীতে তা বিবেচনায় নেওয়া হবে। এছাড়া পদোন্নতির ক্ষেত্রে যুগ্ম-সচিবদের ধারণাগত জ্যেষ্ঠতা পর্যালোচনা করা হচ্ছে। এটি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।’প্রশাসনে তিন স্তরে ৮৭৩ জনকর্মকর্তা পদোন্নতি দেয়া হয়েছে। সোমবার রাতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে যুগ্ম-সচিব থেকে অতিরিক্ত সচিব পদে ২৩১ জন, উপ-সচিব থেকে ২৯৯ কর্মকর্তা যুগ্ম-সচিব ও সিনিয়র সহকারী সচিব থেকে উপ-সচিব পদে ৩৪৩ জনকে পদোন্নতি দিয়ে আদেশ জারি করা হয়েছে। বর্তমানে উপসচিবের নিয়মিত পদ আছে ৮৩০টি। কিন্তু উপসচিব আছেন ১,২৮০ জন। নতুন করে আরও ৩৪৩ কর্মকর্তার পদোন্নতি হওয়ায় এখন এই সংখ্যা দাঁড়াল ১,৬২৩। এবার ২০তম ব্যাচ পর্যন্ত উপসচিব করা হয়েছে। যুগ্ম সচিবের নিয়মিত পদ আছে ৪৩০টি, কর্মরত আছেন ৮৬৭ জন। এই পদে আরও ২৯৯ জন কর্মকর্তার পদোন্নতি হয়েছে।অতিরিক্ত সচিবের ১০৭টি পদের বিপরীতে কর্মরত আছেন ২২৬ জন। এর মধ্যে আরও ২৩১ জন পদোন্নতি পেয়ে অতিরিক্ত সচিব হয়েছেন। নতুন পদোন্নতিতে বিসিএস’৮৫ সালের ব্যাচের যুগ্ম সচিব হওয়া বেশ কিছু কর্মকর্তা অতিরিক্ত সচিব হয়েছেন। প্রায় পাঁচ হাজার কর্মকর্তার এই ক্যাডারে এর আগে সহস্রাধিক কর্মকর্তার পদ না থাকলেও পদোন্নতি হয়েছে। তাঁদের বেশির ভাগই উপসচিব, যুগ্ম সচিব ও অতিরিক্ত সচিব হলেওদায়িত্ব পালন করছেন আগের পদেই। নতুন যাঁরা পদোন্নতি পেলেন, তাঁদের অনেককে আগের পদেই দায়িত্ব পালন করতে হবে। বিদ্যমান কাঠামোয় নতুন পদোন্নতি আরও সমস্যা বাড়াবে বলে মনে করেন প্রশাসনেরই কয়েকজন কর্মকর্তা। তবে জনপ্রশাসনের অপর কয়েকজন কর্মকর্তা নিয়মিত পদোন্নতির পক্ষে যুক্তি দেখিয়ে বলেন, নিয়মিত পদোন্নতি না হলে চাকরির প্রতি কর্মকর্তাদের আগ্রহ কমে যায়।বরাবরের মতো পদোন্নতিতে এবারও কিছু ক্ষেত্রে দলীয় পরিচয় বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন কয়েকজন কর্মকর্তা। অনেকে পদোন্নতির যোগ্য হয়েও পদোন্নতি পাননি বলেও অভিযোগ করেছেন। তবে জনপ্রশাসনের কয়েকজন কর্মকর্তা বলেন, যোগ্যতা অনুযায়ীই পদোন্নতি হয়েছে। বরং এবার পদোন্নতিতে অনেক বেশি উদারতা দেখানো হয়েছে। এ কারণে পদোন্নতিও বেশি হয়েছে। আগে একসঙ্গে এত পদোন্নতি হয়নি।জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সূত্রমতে, গত ছয় বছরে কয়েক দফায় প্রায় আড়াই হাজার কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। ফলে উপসচিব থেকে ওপরের পদগুলোতে আর কোনো শূন্য পদ নেই। বরং উল্টো চিত্র রয়েছে। যেমন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে যুগ্ম সচিবের নিয়মিত পদ আছে চারটি। অথচ এখন কর্মরত আছেন নয়জন। একই চিত্র আরও কয়েকটি মন্ত্রণালয়ে। ওপরের দিকে এমন অবস্থা হলেও প্রবেশ (এন্ট্রি) পদেআবার উল্টো চিত্র। বর্তমানে জ্যেষ্ঠ সহকারী সচিব আছেন ১,৬৩৫ জন। কিন্তু পদ আছে প্রায় দুই হাজার। সহকারী সচিব (মাঠ পর্যায়ে সহকারী কমিশনার) আছেন ১,২১৪ জন। এই পদে দরকার আরও ৭০০ থেকে ৮০০ কর্মকর্তা।বিএ/আরআইপি

Advertisement