মতামত

শিশুর প্রতি নৃশংসতা বন্ধ হোক

বিগত দু’দশকে শিশু সুরক্ষায় বাংলাদেশে আইনী কাঠামো শক্তিশালী হয়েছে; নেয়া হয়েছে সরকারি-বেসরকারি নানা উদ্যোগ। কিন্তু সামগ্রিক বিবেচনায় ও পরিস্থিতি বিশ্লেষণে স্পষ্টত শিশুর প্রতি সহিংসতার দৃশ্যমান কোনো পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে না। বরং ভয়াবহতা ও নৃশংসতা বেড়েছে। শিশু নির্যাতনের ক্ষেত্রে দ্রুত বিচারের সাম্প্রতিক দৃষ্টান্তের পরও দেখা যাচ্ছে নির্যাতন চলছেই। বিশেষ করে পৈশাচিক কায়দায় নির্যাতন করে হত্যার ঘটনা সমাজকে নাড়া দিয়ে যাচ্ছে। সবচেয়ে দুঃখজনক হচ্ছে শিশুরা অবলীলায় হত্যাকাণ্ডের শিকার হচ্ছে। এই নৃশংসতার অবসান হওয়া প্রয়োজন। এ জন্য নতুন করে ভাবতে হবে কেন এক শ্রেণির মানুষ এতোটা বিকারগ্রস্ত হয়ে শিশুহত্যায় মেতে উঠলো। বাংলাদেশ শিশু অধিকার ফোরামের পরিসংখ্যানে বলা হয়েছে এ বছরের প্রথম দেড় মাসে (১৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত) সারা দেশে বিভিন্নভাবে ৪৫ শিশু খুন হয়েছে। গত বছরের প্রথম দুই মাসে শিশু হত্যার সংখ্যা ছিল ৪৮। অপরদিকে বাংলাদেশ মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থা বলছে, চলতি বছরের প্রথম দেড় মাসে ৪২ শিশু হত্যার ঘটনা ঘটেছে। এছাড়া  শিশুদের ধর্ষণের শিকার হওয়ার প্রবণতা বাড়ছে। গত বছর (২০১৬) তিন শতাধিক শিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছে, যা ওই সময়ের মোট ধর্ষণের ঘটনার প্রায় অর্ধেক। ধর্ষণের শিকার শিশুদের অর্ধেকেরই বয়স ১২ বছরের নিচে। এদের মধ্যে ৬ বছরের কম বয়সী শিশুও রয়েছে। এছাড়া শিশুদের অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায়ের ঘটনাও বাড়ছে বলে মনে করছেন অপরাধ বিশেষজ্ঞরা। চলতি মাসে নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জের একটি অপহরণ চক্র ধরা পড়ার পর উদঘাটিত হয়, সাম্প্রতিক সময়ে তারা ১৭টি শিশুকে অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায় করেছে। সভ্য সমাজে শিশুর প্রতি মানবিক আচরণ করা হয় হত্যা, খুন অপহরণ, ধর্ষণ তো দূরের কথা। এমনকি যুদ্ধক্ষেত্রেও শিশুহত্যা নিষেধ। কিন্তু আমাদের সমাজে কেন এসব ঘটছে সেটি গভীরভাবে খতিয়ে দেখতে হবে। শিশুরা নিরীহ ও দুর্বল। এ জন্য সহজেই তারা টার্গেটে পরিণত হয়। এছাড়া শিশুরা নির্যাতনের শিকার হলেও নানা পারিপার্শ্বিক কারণে তারা বিচার চাইতে পারে না। শিশু নির্যাতন বন্ধ না হওয়ার এটিও বড় কারণ। যে হারে শিশুহত্যা, অপহরণ, ধর্ষণ চলছে সেটা যে কোনো সুস্থ সমাজের জন্য অশনি সংকেত। একটি সভ্য সমাজ এভাবে চলতে পারে না। শিশুরাই আগামী। তাদের পরিচর্যা করে সুষ্ঠুভাবে গড়ে তুলতে হবে। এ জন্য মানবিক দৃষ্টিভঙ্গির উন্মেষ ঘটাতে হবে। পাশাপাশি অপরাধের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তিও নিশ্চিত করতে হবে। মনে রাখতে হবে, যে সমাজে শিশুরা নিরাপদ নয় সে সমাজ কখনো সভ্য সমাজ হিসেবে বিবেচিত হতে পারে না।এইচআর/এমএস

Advertisement