বিশেষ প্রতিবেদন

অবহেলাকারীদের সর্বোচ্চ শাস্তি চান জিহাদের বাবা-মা

ছেলের মৃত্যুর জন্য যারা দায়ী তাদের কী শাস্তি চান? এক বাক্যে উত্তর দিলেন, ‘দৃষ্টান্তমূলক বিচার চাই, যাতে এমন অবহেলায় আর কোনো শিশু মারা না যায়।’শিশু জিহাদের মৃত্যুর রায় ঘোষণার একদিন আগে শনিবার জাগো নিউজের সঙ্গে কথা বলেন জিহাদের বাবা নাসির ফকির ও মা খাদিজা আক্তার। এদিন তারা জানান সন্তানের মৃত্যুর জন্য দায়ীদের সর্বোচ্চ শাস্তি কামনার কথা।নাসির ফকির বলেন, ‘আমি সুষ্ঠু বিচার ও আসামিদের প্রত্যেকের সর্বোচ্চ শাস্তি চাই। যাতে কোনো শিশু তার বাবা-মায়ের কোল থেকে এভাবে চলে না যায়।’মা খাদিজা আক্তার বলেন, ‘ছেলেকে তো আর ফিরে পাবো না, এটা ছাড়া আর চাওয়ার কিছুই নাই।’২০১৪ সালের ২৬ ডিসেম্বর বিকেলে শাহজাহানপুরে বাসার কাছে রেলওয়ে কলোনি মাঠের পাম্পের পাইপে পড়ে যায় সাড়ে তিন বছর বয়সী জিহাদ। পরে মৃত অবস্থায় তাকে উদ্ধার করা হয়।রেলওয়ে কলোনির ওই পাইপটির ঢাকনা দীর্ঘদিন খোলা ছিল। কর্তৃপক্ষকে বারবার বলার পরও সেটি বন্ধ করা হয়নি। আর তাই ছেলের মৃত্যুর ঘটনায় নাসির ফকির ‘দায়িত্বে অবহেলার’ অভিযোগ এনে একটি মামলা করেন। এতে ছয়জনকে আসামি করা হয়।মামলার আসামিরা হলেন- কলোনির দায়িত্বপ্রাপ্ত ঠিকাদার এস আর হাউসের স্বত্বাধিকারী শফিকুল ইসলাম, রেলওয়ের জ্যেষ্ঠ সহকারী প্রকৌশলী জাহাঙ্গীর আলম, সহকারী প্রকৌশলী নাসির উদ্দিন ও সহকারী প্রকৌশলী সাইফুল ইসলাম এবং বিদ্যুৎ বিভাগের সহকারী প্রকৌশলী জাফর আহমেদ ও সহকারী প্রকৌশলী দীপক কুমার ভৌমিক।মামলা চালিয়ে যেতে নানা চড়াই-উতরাই পেরোতে হয়েছে জিহাদের বাবাকে। স্থানীয় কাউন্সিলর মামলা তুলে নেয়ার জন্য স্ট্যাম্পে  জোর করে তার স্বাক্ষর নিয়েছিলেন। তবে সে সময় বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদটি চলে আসায় কারও জোরই খাটেনি। মামলা তুলে নিতে জিহাদের বাবাকে বিভিন্ন সময় ফোনে হুমকি-ধামকি দিয়েছেন অনেকে।সর্বশেষ জিহাদের মৃত্যুর মামলার রায়ের তারিখ ঘোষণার দিন অর্থাৎ গত ৭ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় তিনজন অজ্ঞাত যুবক প্রবেশ করে জিহাদদের ঘরে। তাদের বয়স ছিল আনুমানিক ২২-২৩ বছর। আসামিদের সাজা হলে নাসির ফকিরের ‘ক্ষতি’ হবে বলে হুমকি দেয় তারা।এ বিষয়ে নাসির ফকির জাগো নিউজকে বলেন, ‘ঘরে ঢুকেই ওরা বলে, তাদের কারও যদি সাজা হয় তাহলে তোমার ক্ষতি হবে। যাতে সাজা না হয় সেই ব্যবস্থা করো। সাজা হলে কিন্তু তোমারই সমস্যা হবে।’এ ঘটনায় জিহাদের বাবা থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করতে চাইলেও স্থানীয়দের পরামর্শে তিনি তা করেননি।জানা গেছে, জিহাদের মৃত্যুর দুদিন পর চিলড্রেন চ্যারিটি বাংলাদেশ ফাউন্ডেশন জিহাদের মৃত্যুর জন্য ৩০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দাবি করে হাইকোর্টে একটি রিট আবেদন করে।ওই রিট আবেদনের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে গত বছরের ১৫ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্ট রুল জারি করেন। রুলে জিহাদের মৃত্যুর জন্য ৩০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে কেন নির্দেশ দেয়া হবে না- তা জানতে চাওয়া হয়। পরে ওই রুলের ওপর শুনানি শেষে গত বছরের ১৮ ফেব্রুয়ারি ক্ষতিপূরণের পক্ষে রায় দেন আদালত। তবে এর ১০ দিন পরই রায় স্থগিতের আবেদন করে রাষ্ট্রপক্ষ। বিষয়টি এখনও নিষ্পত্তি হয়নি।এ বিষয়ে নাসির ফকির বলেন, এ মামলার আংশিক রায় পাওয়া গেছে। ব্যারিস্টার সাহেব বললেন পূর্ণাঙ্গ রায় পেতে আরও কিছু দিন সময় লাগবে।এআর/জেএ/বিএ/এমএস

Advertisement