বিনোদন

আমি হুমায়ূন আহমেদের অন্ধ ভক্ত : প্রিয়াঙ্কা

প্রিয়াঙ্কা সরকার। কলকাতার জনপ্রিয় অভিনেত্রী। ২০০৮ সালের রাজ চক্রবর্তীর ‘চিরদিনই তুমি যে আমার’ ছবির মাধ্যমে টালিউডে অভিষেক হয় তার। প্রথম ছবি সুপারহিট হওয়ায় প্রিয়াঙ্কা আসেন লাইমলাইটে, এরপর তাকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। সাফল্যের ধারায় তিনি কলকাতার পাশাপাশি ঢাকায়ও চলচ্চিত্রপ্রেমীদের কাছে জনপ্রিয়। অনেক দিনের ইচ্ছা ছিল এপার বাংলার ছবিতে অভিনয় করবেন তিনি। সেই ইচ্ছা এবার সত্যি হতে চলেছে। প্রিয়াঙ্কা চুক্তিবদ্ধ হয়েছেন বাংলাদেশের ছবিতে। নায়ক নিরবের বিপরীতে নায়িকা হয়ে আসা এই ছবির নাম ‘হৃদয় জুড়ে’। ছবির মহরতে অংশ নিতে প্রথমবারের মতো ঢাকায় এসেছেন প্রিয়াঙ্কা। উঠেছেন রাজধানীর একটি হোটেলে। সেখানেই গতকাল শুক্রবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় প্রিয়াঙ্কা কথা বলেন জাগো নিউজের বিনোদন বিভাগে-জাগো নিউজ : বাংলাদেশে আপনাকে স্বাগতম। প্রথমবার এসেছেন, কেমন লাগছে?প্রিয়াঙ্কা : ধন্যবাদ। ভীষণ ভালো লাগছে। আমার বহু বছরের ইচ্ছা ছিল বাংলাদেশে আসার, এদেশের ছবিতে কাজ করার। ইনফ্যাক্ট এদেশের প্রতি আমার আলাদা একটা টান আছে।জাগো নিউজ : আলাদা টান কেন?প্রিয়াঙ্কা : কারণটা হলো আমাদের পূর্বপুরুষের ভিটেমাটি কিন্তু বাংলাদেশেই, মুন্সিগঞ্জের বিক্রমপুরে। চল্লিশ দশকের শেষ দিকে সবাই কলকাতায় চলে যায়। অনেক দূর সম্পর্কের কিছু আত্মীয় আছেন সেখানে এখনো। তাদের প্রচুর গল্প শুনেছি। সে কারণে বাংলাদেশের প্রতি আমার আলাদা টান আছে।   জাগো নিউজ : আত্মীয়দের সঙ্গে দেখা করার ইচ্ছা নেই?প্রিয়াঙ্কা : হ্যাঁ, ইচ্ছা তো অবশ্যই আছে। তবে এবার হবে না। আগামী মাসের প্রথম সপ্তাহে আবার লম্বা সময় নিয়ে শুটিংয়ে আসবো। তখন আমার একমাত্র সন্তান সহজ (বয়স ৩ বছর) ওকেও সাথে নিয়ে আসবো। তারপর এক ফাঁকে বিক্রমপুরে যাবো। বাপের ভিটা, আত্মীয়-স্বজনদের দেখতে যাবো।জাগো নিউজ : এবার বলুন ‘হৃদয় জুড়ে’ ছবির সঙ্গে কীভাবে জড়িত হলেন?প্রিয়াঙ্কা : এ ছবির পরিচালক রফিক শিকদার এবং প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান ক্রিয়েটিভ মিডিয়া ওয়ার্ল্ড’র পক্ষ থেকে আমার সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। তখন আমি অন্য একটি ছবির শুটিংয়ে দার্জিলিংয়ে ছিলাম। কলকাতায় আসার পর এ নিয়ে মিটিং হয়। গল্প, চরিত্র ও ছবি নির্মাণের বাজেট শুনে ভালো লাগায় চুক্তিবদ্ধ হয়েছি। জাগো নিউজ : ছবিতে আপনার চরিত্রটি কেমন?প্রিয়াঙ্কা : একদমই মজার একটি মেয়ে। যার নাম নীলিমা। সে মডার্ন, স্মার্ট আর খুব বাস্তববাদী। মিষ্টি একটি চরিত্র নিয়ে দর্শকদের সামনে হাজির হবো। একদম নতুন করেও বলা যায়। আমাকে এমন চরিত্রে দেখা যায়নি কখনো। কিছু রোমান্টিক এবং হৃদয় ছোঁয়া সংলাপও আছে আমার। আশা করছি ভালো লাগবে দর্শকের।জাগো নিউজ : ছবিতে আপনার নায়ক নিরব। সহশিল্পী হিসেবে তার সঙ্গে স্বল্প পরিচয়ে কেমন মনে হলো?প্রিয়াঙ্কা : আমার মনে হয়েছে সে খুব ফ্রেন্ডলি, সহযোগিতাপরায়ণ এবং হ্যান্ডসাম একটি ছেলে। আশা করছি ওর সঙ্গে কাজের অভিজ্ঞতা হবে দারুণ।জাগো নিউজ : ‘হৃদয় জুড়ে’ ছবির মাধ্যমে বাংলাদেশের দর্শক আপনাকে গ্রহণ করবেন মনে করেন?  প্রিয়াঙ্কা : আমি তো অনেক আশাবাদী। দেখা যাক কী হয়। আসলে এই ছবিটির গল্পটি চমৎকার। বেশ কিছু শ্রুতিমধুর গানও তৈরি হচ্ছে। আমি এবং নিরব নিজেদের সবটুকু দিয়েই চেষ্টা করবো একটা দুর্দান্ত চলচ্চিত্র উপহার দিতে।জাগো নিউজ : বাংলাদেশের ছবি দেখেন?প্রিয়াঙ্কা : খুব বেশি দেখা হয় না। আসলে হয় কী, এদেশের মিডিয়ার প্রতি আমার এবং কলকাতার মানুষদের বিশেষ দুর্বলতা আছে। কিন্তু আমরা এখানকার খোঁজ-খবর খুব একটা পাইনা। কারণ এদেশের কোনো টেলিভিশন চ্যানেল আমরা ওপারে বসে দেখতে পাই না। অথচ আমি হোটেলে বসে দেখলাম আমাদের ওখানের স্টার জলসা, জি বাংলা, কালার্স ছাড়াও বহু চ্যানেলে এখানে টেলিকাস্ট হচ্ছে। বিষয়টা কেমন জানি খটকার মতো লাগলো। একই ভাষার দুটি দেশ। সংস্কৃতিতেও অনেক মিল। আমাদের সম্পর্কটা আরো আন্তরিক হওয়া প্রয়োজন বলে মনে করি।জাগো নিউজ : ঢাকার অনেক শিল্পীরা এখানে কাজ করতে আসছেন। এপার থেকেও অনেকে ওপারে কাজ করতে যাচ্ছেন। এটা অনেক দিনের চিত্র। আপনি ঢাকার কোনো তারকার সঙ্গে মিশেছেন?প্রিয়াঙ্কা : তেমন করে আসলে সুযোগ হয়নি। তবে জয়া আহসানের সঙ্গে আমি ‘রাজকাহিনি’ ছবিতে কাজ করেছি। চমৎকার একজন অভিনেত্রী তিনি। তারসঙ্গে আমার খুব ভালো সখ্যতা। আর এখানের জনপ্রিয় অভিনেতা রাজ্জাক অাংকেল ও ফেরদৌস ভাই কলকাতায় খুব জনপ্রিয়। ওনাদেরকে অনেক পছন্দ করেন টালিগঞ্জের মানুষ। এর বাইরে আমি আর কাউকে তেমন চিনিনা। দুই একজন নায়ক-নায়িকা অবশ্য কাজ করছেন ওখানে। কিন্তু তেমন করে নাম শুনিনি।জাগো নিউজ : বাংলাদেশের ছবিতে নিয়মিত কাজ করার ইচ্ছে আছে?প্রিয়াঙ্কা : হ্যাঁ, কেন নয়! এদেশের মানুষ আমাকে চেনেন। আমার ফ্যান পেজে দেখেছি বাংলাদেশের অনেক ফলোয়ার আছেন। তারা যদি চান, আর সবকিছু যদি টাইমিং হয় তবে ছক্কা হাঁকাতেই পারি। তাই না?জাগো নিউজ : পূর্বপূরুষের ভিটে মাটির প্রতি সবারই আলাদা টান থাকে। এছাড়া বাংলাদেশের অন্য কী ভালো লাগে আপনার?প্রিয়াঙ্কা : হুমায়ূন আহমেদ। আমি এই লেখক ও চলচ্চিত্রকারের অন্ধ ভক্ত। তার হিমু, মিসির আলী সিরিজ আমার প্রায় মুখস্ত। এছাড়া তার অনেক উপন্যাস আমার সংগ্রহে রয়েছে। যেটা কলকাতা বইমেলা থেকে আমি নিয়েছি। আর ঢাকা এয়ারপোর্ট থেকে গাড়িতে করে যখন হোটেলে আসছিলাম অনুভব করছিলাম এই সেই শহর যেখানে হিমুরা হলুদ পাঞ্জাবী গায়ে দিয়ে খালি পায়ে ঘুরে বেড়ায়। যেখানে হিমুর অনেক গল্প, স্মৃতি, রুপাদের বসবাস। কেমন জানি লাগছিলো। বলতে পারেন একটা ঘোর লাগা অনুভূতি। হুমায়ূন আহমেদ আমাকে চিরদিন ঘোরের মধ্যে রাখবেন। আমিও এই ঘোর কাটাতে চাই না। হা হা হা... এর বাইরে যতটুকু দেখছি ঢাকার মানুষেরা খুব অতিথি পরায়ণ।  জাগো নিউজ : কলকাতায় আপনার বর্তমানে কাজের হালচাল কী?প্রিয়াঙ্কা : রাজ চক্রবর্তীর ‘চ্যাম্প’, কৌশিক গাঙ্গুলীর ‘ছায়া ও ছবি’, রাজা চন্দের ‘আমার আপনজন’ নামের ছবিগুলো মুক্তির অপেক্ষায় আছে। আরও একটা ছবিতে কাজের কথা চলছে। সেটা এপ্রিল নাগাদ ফাইনাল হবে। জাগো নিউজ : অনেক ধন্যবাদ। ভালো থাকবেন।প্রিয়াঙ্কা : আপনাকে এবং জাগো নিউজকেও অনেক শুভেচ্ছা। এনই/এলএ/আরআইপি

Advertisement