দুঃসহ ভয়াল ও বিভীষিকাময় গ্রেনেড হামলার ১০ম বার্ষিকী আজ। ১০ বছর আগে এইদিনে বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে আওয়ামী লীগের সন্ত্রাস বিরোধী সমাবেশে নারকীয় ও চরম বর্বর গ্রেনেড হামলার ঘটনা ঘটে। সেই হামলায় আইভি রহমানসহ ২৪ জন নিহত হন। আহত হন শত শত নেতাকর্মী। যারা আহত হন, তাদের অনেকে চিরতরে পঙ্গু হয়ে যান।২০০৪ সালের ২১ আগস্টের বিকেলে সন্ত্রাসবিরোধী শোভাযাত্রা ছিল আওয়ামী লীগের। সে সময়ে বিরোধীদলীয় নেতা শেখ হাসিনার বক্তব্যের পরপরই তা শুরুর কথা ছিল। কিন্তু ভয়াবহ সেই হামলায় নিমিষে স্তব্ধ হয়ে যায় সেই কর্মসূচি।সেদিন বেঁচে গেলেও স্থায়ীভাবে শ্রবণশক্তি ক্ষতিগ্রস্ত হয় বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। কেন্দ্রীয় নেত্রী আইভি রহমান বসে ছিলেন ট্রাকে তৈরি মঞ্চের সামনে কর্মীদের সঙ্গে।ভয়াল এ দিনটি স্মরণে নানা কর্মসূচী গ্রহণ করেছে আওয়ামী লীগ। দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বুধবার পৃথক বাণী দিয়েছেন। রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বলেছেন, দেশের গণতন্ত্রকে অর্থবহ করতে হলে পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ ও সহমর্মিতার পাশাপাশি পরমতসহিষ্ণুতা অপরিহার্য।তিনি বলেন, ‘আমার দৃঢ় বিশ্বাস দেশের গণতান্ত্রিক অগ্রযাত্রাকে বেগবান করতে সকল রাজনৈতিক দল নিজ নিজ অবস্থান থেকে অবদান রাখবে। মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে গণতন্ত্রকামী জনতা একটি আত্মমর্যাদাশীল ও সুখী-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়তে এগিয়ে আসবেন।’প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার বাণীতে একটি শান্তিপূর্ণ নিরাপদ স্বদেশ ও সন্ত্রাসমুক্ত গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক পরিবেশ গড়ে তোলার মাধ্যমে একুশে আগস্টের শহিদদের প্রতি সর্বোচ্চ শ্রদ্ধা জানানোর আহ্বান জানিয়েছেন।সেদিন সিলেটসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বোমা হামলার প্রতিবাদে ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের এই সমাবেশ ডাকে। সমাবেশ শেষে সন্ত্রাসবিরোধী শান্তি মিছিল হওয়ার কথা ছিল। আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতা শেখ হাসিনার এ শান্তি মিছিলে নেতৃত্ব দেওয়ার কথা ছিল।কিন্তু মিছিল শুরুর আগ মুহূর্তে খোলা ট্রাকমঞ্চে দাঁড়িয়ে শেখ হাসিনার বক্তব্য শেষ হওয়ামাত্র বিকেল ৫টা ২২ মিনিটে তাকে লক্ষ্য করে মুহুর্মুহু গ্রেনেড হামলা শুরু হয়। বিকট শব্দে একের পর এক বিস্ফোরিত হয় ১৩টি গ্রেনেড। অলৌকিকভাবে প্রাণে বেঁচে যান শেখ হাসিনা। মানববর্ম রচনা করে তার জীবনরক্ষা করে প্রিয় নেত্রীকে গাড়িতে উঠিয়ে দেন তারই সহকর্মী-সহমর্মীরা। তারপরও বঙ্গবন্ধু কন্যাকে হত্যার শেষ প্রচেষ্টা হিসেবে ঘাতকচক্র তার গাড়ি লক্ষ্য করে ১২টি গুলি ছুড়েছিল। কিন্তু গুলিবর্ষণ থেকেও প্রাণে বেঁচে যান বর্তমান প্রধানমন্ত্রী।এ ভয়ঙ্কর গ্রেনেড হামলার পর স্পিন্টারের আঘাতে ছিন্নবিচ্ছিন্ন হয়ে রাস্তায় পড়েছিলেন আওয়ামী লীগের মহিলা সম্পাদিকা আইভি রহমানসহ শত শত নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষ। গুরুতর আহত সাবেক রাষ্ট্রপতি মোঃ জিল্লুর রহমানের স্ত্রী আইভি রহমান মারা যান ২৪ আগস্ট। ঘটনার দিনই শেখ হাসিনাকে আড়াল করে বুলেটের সামনে দাঁড়িয়ে জীবন বিলিয়ে দেন তার ব্যক্তিগত নিরাপত্তাকর্মী ল্যান্স করপোরাল (অব.) মাহবুবুর রশীদ।সেদিনের গ্রেনেড হামলায় আরও নিহত হন আওয়ামী লীগের সহ-সম্পাদক মোস্তাক আহমেদ সেন্টু, ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য রফিকুল ইসলাম (আদা চাচা), ঢাকা মহানগরের ৫৮ নম্বর ওয়ার্ড মহিলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সুফিয়া বেগম, ১৫ নম্বর ওয়ার্ড মহিলা আওয়ামী লীগ সভানেত্রী হাসিনা মমতাজ রীনা, মহিলা আওয়ামী লীগ কর্মী রেজিয়া বেগম, জাতীয় শ্রমিক লীগের কর্মী নাসির উদ্দিন সর্দার, ৩০ নম্বর ওয়ার্ড রিকশা শ্রমিক লীগ নেতা মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ হানিফ, ৬৯ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগের সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক বেলাল হোসেন, যুবলীগ বালুঘাট ইউনিটের সভাপতি ও ক্যান্টনমেন্ট ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সদস্য আবুল কালাম আজাদ, হোসেনপুর ইউনিয়ন যুবলীগ সভাপতি লিটন মুন্সী লিটু, ৮৪ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগ নেতা আতিক সরকার, স্বেচ্ছাসেবক লীগ কর্মী আবদুল কুদ্দুস পাটোয়ারী, নারায়ণগঞ্জ আওয়ামী লীগ কর্মী ও রিরোলিং মিল ব্যবসায়ী রতন সিকদার, ছাত্রলীগ কর্মী ও সরকারি কবি নজরুল কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র মামুন মৃধা, জামালপুর আওয়ামী লীগ কর্মী আমিনুল ইসলাম মোয়াজ্জেম, টাঙ্গাইল জেলা আওয়ামী লীগ কর্মী ইছহাক মিয়া, মোঃ শামসুদ্দিন, মমিন আলী, আবুল কাসেম ও জাহেদ আলী।সেদিন গ্রেনেড হামলাকালে শেখ হাসিনাকে ঘিরে মানবঢাল তৈরি করা ঢাকা সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র মোহাম্মদ হানিফের মাথায় অসংখ্য স্পিন্টার বিদ্ধ হয়। প্রায় আড়াই বছর অসহ্য যন্ত্রণা ভোগ এবং দেশ-বিদেশে চিকিৎসার পর ২০০৬ সালের ২৭ নভেম্বর মারা যান তিনি।
Advertisement