ভাষা শহীদের দেখানো পথ বেয়ে আমরা এগিয়ে চলেছি, দিকে দিকে ছড়িয়েও পড়ছি। এই মেলাকে সামনে রেখে লেখক, পাঠক ও প্রকাশকদের বিপুল প্রস্তুতি থাকে। সেই প্রস্তুতির সূত্র ধরে এবারের বইমেলায় আমার এ পর্যন্ত চারটি বই প্রকাশিত হয়েছে। অবাক হয়ে দেখি, চারটি বই-ই গল্পের। অবশ্য গল্পই আমার চিরচেনা পথ, গল্পই আমার আরাদ্ধ। প্রথম বইটি এসেছে বটেশ্বর থেকে। আদর্শলিপি। ১১টা গল্প নিয়ে বইটির দারুণ প্রচ্ছদ এঁকেছেন ধ্রুব এষ। বইয়ের ফ্ল্যাপে প্রকাশক যা লিখেছেন, ‘আদর্শলিপি’ গল্পগ্রন্থের ১১টি গল্পের আখ্যানে রাজনৈতিক বেশ্যাবৃত্তি, মানবিক বোধের দুর্ভিক্ষ, মনোযাতনার জটিল জলতরঙ্গ, বিবিধ স্বার্থসংশ্লিষ্ট খুন, প্রেমের ডুব সাঁতারে নায়ক নায়িকাদের জলকেলি, আত্মপীড়িত বুভুক্ষ মানুষের রক্তবমনের চরিত্র হয়ে এসেছেন ঝরাপালকের কবি জীবনানন্দ দাশ, ভারতীয় বিএসএফের গুলিতে সীমান্তে কাঁটাতারে ঝুলে থাকা প্রিয় সবুজকন্যা ফালানী। গল্পগুলো ছিঁড়ে যাওয়া তন্ত্রী আর বেদনার বিষাদে আঁকা নিঃশব্দ ঘাতকরা হানা দেবে পাঠকের মর্মমূলে।’ মনে হয় না, গল্পকার হিসেবে আমার আর কোনো শব্দ লেখার আছে!চিত্রা প্রকাশনীর পক্ষে শাম্মী শাহরিয়ার মাস তিনেক আগে যোগাযোগ করে, পুরনো কিন্তু আমার পছন্দের দশটি গল্প নিয়ে ‘গল্পগাথা’ সিরিজে পাঁচটি বই করবেন। আরও যে গল্পকারের গল্পগাথা সিরেজে থাকবেন হাসান আজিজুল হক, সেলিনা হোসেন, রবিউল হুসাইন এবং শাহনাজ মুন্নী। চমৎকার প্রস্তাবে রাজি না হয়ে উপায় ছিল না। যথাসময়ে বাছাই করে ১০টি গল্প দিলাম চিত্রার শাম্মীকে।শাম্মী খুব সৃজনশীল মানুষ। চমৎকার আইডিয়ায় ‘গল্পগাথা’ মেলায় এনেছে। যেহেতু পুরনো গল্প, তাই বিশ্লেষণে না গিয়ে আমি গল্প ১০টির নাম জানিয়ে দিচ্ছি। একটি খুনের প্রস্তুতি বৈঠকের পর, দশ জানুয়ারি ১৯৭২, ন্যাড়া একটি বৃক্ষ, এক না দেখা মেয়ের একটি চুল ও তিন তরুণ, একটি ভোরের গল্প, আমার বীনু খালা, টস, শকুন সন্ধান, খেলা ও ধিকিধিকি। পাতালাদা, আমার নির্মিত মজার চরিত্র। যদিও পাতলাদা ছোটদের জন্য লেখা গল্প কিন্তু মজা বা সুখ পাবেন বড়রাও। এবারের মেলায়, পাতলাদা সিরিজের তৃতীয় বইমেলায় এনেছে কথাপ্রকাশ। ‘দড়ির উপর পাতলাদা’ বইটিতে মজার মজার ১১টি গল্প আছে। ‘দড়ির উপর পাতলাদা’ সম্পর্কে প্রকাশক লিখেছেন- ‘পাতলাদা মোটেই পাতলাদা নয়, ইয়া মোটা তাগড়া স্বাস্থ্য। খাওয়া দাওয়া করে প্রচুর। আর করে অবাক কাণ্ড যেমন কাক পোষে, জাদু দেখিয়ে নিজেই হাওয়া হয়ে যায়, বিড়ালের সঙ্গে আড়ি দেয়, মঞ্চে ঘোড়া নিয়ে নাটক করতে গিয়ে মঞ্চ ভেঙে পড়া...এই প্রকারের বেতাল ঘটনার শেষ নেই। পাতলাদা ছোট-বড় দাদা-দাদি, নানা-নানি, বন্ধু-বান্ধব সবার সঙ্গে হাঁটে, খায়, গল্প করে আর আড্ডা মারে। সবার প্রিয় চরিত্র পাতলাদা। শেষের বইটি সম্পাদনার। জাতির জনকের ছোট ছেলে শেখ রাসেলকে নিয়ে এদেশের লেখা ৩৬ জন গল্পকারের লেখা ৩৬টি গল্প নিয়ে ‘গল্পে গল্পে শেখ রাসেল’ বইটি প্রকাশ করেছে অক্ষর প্রকাশনী। প্রতিটি গল্পের আখ্যান নিয়ে চমৎকার ছবি এঁকেছেন তিতাস চাকমা। আর মনের মতো প্রচ্ছদ এঁকেছেন মোমিনউদ্দিন খালেদ। প্রতিটি গল্পে রাসেল নতুন ধারণায় ও ধ্যানে উপস্থিত হয়েছে। সেই বাংলা ও বাঙালির ইতিহাসতো বটেই। গল্পে গল্পে আমাদের জীবন পূর্ণ হোক....।লেখক : কথাসাহিত্যক। এইচআর/পিআর
Advertisement