৬২৮ কোটি ১০ লাখ টাকা ব্যয়ে বঙ্গবন্ধু সেতুর পশ্চিমপাড়ের সিরাজগঞ্জের সয়দাবাদে ৪০০ একর জমির ওপর গড়ে তোলা হচ্ছে শিল্পপার্ক। আগামী এপ্রিল মাসে এই পার্কের কাজ শরু হচ্ছে। এতে ১ লাখ যুবকের কর্মসংস্থান হওয়ার পাশাপাশি এই এলাকার দৃশপট বদলে যাবে।সেই সঙ্গে দেশের উত্তরের জেলাগুলোতে বিনিয়োগ বাড়বে এবং বিপুল কর্মসংস্থান তৈরি হবে। এ উদ্যোগ উত্তর জনপদের দারিদ্র্য বিমোচনে বড় ধরনের ভূমিকা রাখবে। শিল্পায়নের পাশাপাশি দেশের বেকার সমস্যা সমাধানে পার্কটি বিশেষ ভূমিকা রাখবে বলে সিরাজগঞ্জ বিসিক কর্মকর্তারা আশাবাদ ব্যক্ত করেন। সবকিছু ঠিক থাকলে ২০১৯ সালের জুন মাসের মধ্যে এ পার্ক স্থাপনের কাজ শেষ হবে। ইতোমধ্যে এ প্রকল্পটি জাতীয় অর্থনৈতিক কমিটি (একনেক) অনুমোদন দিয়েছে।সিরাজগঞ্জ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প কর্পোরেশন (বিসিক) সূত্রে জানা যায়, সদর উপজেলার সয়দাবাদে যমুনা নদীর তীরে শিল্প পার্কের কাজ চলতি বছরের এপ্রিল মাস থেকে শুরু হতে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে প্রকল্পের জন্য ৯৭ কোটি ৭৯ লাখ টাকা ব্যয়ে (ক্ষয় ক্ষতিসহ) ৪০০ একর জমি ক্রয় করা হয়েছে। প্রকল্প এলাকায় মাটি ভরাটের জন্য ১৭৫ কোটি টাকার টেন্ডার আহ্বান করা হয়েছে। আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারি দরপত্র দাখিলের জন্য দিন ধার্য করা হয়েছে। দরপত্রের প্রক্রিয়া শেষে চলতি বছরের এপ্রিলে মাটির ভরাটের কাজ শুরু হবে। বিসিক শিল্প পার্কটিতে পরিবেশের বিষয়টি বেশ গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করা হচ্ছে। শিল্প কারখানা থেকে উদ্ভূত বর্জ্য জাতে পরিবেশ নষ্ট করতে না পারে সেজন্য প্রতিটি শিল্প কারখানায় বাধ্যতামূলকভাবে বর্জ্য শোধনানাগার প্রকল্প (ইটিপি) স্থাপন করতে হবে। আর ইটিপি হলো কেন্দ্রীয় বর্জ্য শোধনানাগার প্রকল্পের (সিইটিপি) সাথে সংযুক্ত থাকবে। তরল জাতীয় বর্জ্য পদার্থের জন্য সিইটিপি স্থাপন করা হবে এবং কঠিন বর্জ্য পদার্থের জন্য থাকবে ডাম্পিং ইয়ার্ড। প্রকল্পটিতে ১০ একরের বেশি জায়গাজুড়ে লেক স্থাপনসহ থাকবে সবুজ বেষ্টনি। পার্কটিতে থাকবে পুলিশ ফাঁড়ি, প্রশাসনিক জোন, আধুনিক স্বাস্থ্য সেবা কেন্দ্র। এই প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে এ অঞ্চলের অর্থনৈতিক উন্নয়নের পাশাপাশি সামাজিক জীবনেও ব্যাপক পরিবর্তন আসবে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করেন। ইতোমধ্যে ভূমি অধিগ্রহণের কাজ শেষ হয়ে শিল্পপার্ক বাস্থবায়নের কাজ শুরুর প্রক্রিয়া চলছে। সবকিছু ঠিক থাকলে ২০১৯ সালের জুন মাসের মধ্যে এই পার্ক স্থাপনের কাজ শেষ হবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন সংশ্লিষ্টরা।সিরাজগঞ্জ বড় বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক চেম্বার অব কমার্সের পরিচালক শফিকুল ইসলাম জিন্না জানান, যমুনা নদীর ওপর নির্মিত বঙ্গবন্ধু সেতু চালু হওয়ার পর থেকে সিরাজগঞ্জের গুরুত্ব অনেক বেড়ে গেছে। যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো হওয়ায় এখানে ব্যবসায়ীরা বিনিয়োগের জন্য আগ্রহ প্রকাশ করে। শিল্পপার্ক চালু সিরাজগঞ্জ শহরের চেহারা পাল্টে যাবে। ব্যবসায়ীরা নির্বিঘ্নে ব্যবসা করতে পারবেন। তাদের দীর্ঘদিনের প্রত্যাশা পূরণ হবে।সিরাজগঞ্জ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির পরিচালক ও সাবেক জুনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট মিলন ইসলাম খান বলেন, বিসিক শিল্প পার্কে প্লট বরাদ্দ নেয়ার জন্য উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন জেলা থেকে ব্যবসায়ীরা আমাদের সাথে যোগাযোগ করছেন। অনেকে প্লট বরাদ্দের জন্য আবেদনও করেছেন। সরকারিভাবে শিল্প পার্কটি গড়ে তোলার জন্য ব্যবসায়ীদের আগ্রহ একটু বেশি। কারণ বেসরকারিভাবে শিল্প কারখানা নির্মাণ করতে গেলে নানান সমস্যার সম্মুুখীন হতে হয়। সিরাজগঞ্জ বিসিক শিল্প নগরীর মনিটরিং কর্মকর্তা আব্দুল কাদের বলেন, এ পর্যন্ত এই প্রকল্পে ১০২ কোটি ৯ লাখ টাকা ব্যয় করা হয়েছে। এই শিল্প পার্কে ১ লাখ বেকার যুবকের কর্মসংস্থান হবে। ধীরে ধীরে এ অঞ্চলে শিল্পের প্রসার ঘটবে। এক সময় এ অঞ্চল শিল্প অঞ্চল হিসেবে খ্যাতি লাভ করবে।সিরাজগঞ্জ বিসিক শিল্প নগরির সহকারী প্রকৌশলী তারিকুল আলম বলেন, শিল্প পার্কটি নির্মাণের জন্য ভূমি অধিগ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে। প্রকল্পে যমুনা নদীর তীরে বাঁধ নির্মাণের শর্ত দেয়া হয়। কিন্তু একনেকের বৈঠকে সেই শর্ত প্রত্যাহার করা হয়েছে। সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়নের পক্ষ থেকে বাঁধ নির্মাণ করা হচ্ছে। এ জন্য শিল্প পার্ক নির্মাণ কাজ দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে। সবকিছু ঠিক থাকলে ২০১৯ সালের জুনের মধ্যে শিল্প পার্কটির নির্মাণ কাজ শেষ হবে।ইউসুফ দেওয়ান রাজু/এএম/আরআইপি
Advertisement