বিশেষ প্রতিবেদন

চাকরি হারানোর আতঙ্কে আইডিয়ালের শতাধিক শিক্ষক

রাজধানীর ঐতিহ্যবাহী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের শতাধিক শিক্ষক তাদের চাকরি নিয়ে পড়েছেন চরম অনিশ্চয়তায়। সনদ বিক্রিসহ নানা অভিযোগে হাইকোর্টের নির্দেশে সম্প্রতি বন্ধ হয়ে যাওয়া বেসরকারি দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয়ের সনদধারী হওয়ায় তারা এই অনিশ্চতায় পড়েছেন।শুধু চাকরি হারানোর আতঙ্ক নয়, তাদের শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়েও প্রশ্ন তোলা হচ্ছে। আইডিয়ালের সব শিক্ষকের তালিকাভুক্তির কথা ভাবছে নিয়ন্ত্রণকারী প্রতিষ্ঠান মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতর (মাউশি)। সনদ যাচাই-বাছাই করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।সূত্রে জানা যায়, রাজধানীর আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের বনশ্রী, মুগদা ও মতিঝিল শাখায় দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয়ের সনদধারী শতাধিক শিক্ষক রয়েছেন। বিভিন্ন সময়ে এসব শিক্ষকরা দারুল ইহসান থেকে ব্যাচেলর বি-এড এবং এমএড সনদ অর্জন করেছেন। এসব সনদ দিয়ে নিয়োগ ও পদোন্নতিও পেয়েছেন তারা। সম্প্রতি একই অভিযোগে আইডিয়াল স্কুলের মতিঝিল শাখার সহকারী প্রধান শিক্ষক আব্দুল সালামের বিরুদ্ধে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে মাউশি। কমিটির সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আব্দুল সালামের বিএড ও এমএড সার্টিফিকেট ভুয়া অভিযোগের বিষয়ে তারা তদন্ত করেছেন। অভিযুক্ত শিক্ষকের সব একাডেমিক সার্টিফিকেট খতিয়ে দেখে মাউশির মহাপরিচালক বরাবর প্রতিবেদন জমা দেয়া হয়েছে। সেটি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে। সেখান থেকে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।দারুল ইহসানের সনদধারী সহকারী প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে তদন্ত হওয়ায় এই স্কুলের অন্যা শিক্ষকদের মধ্যে এখন আতঙ্ক বিরাজ করছে। চাকরি হারানোর ভয়ে দিন পার করছেন তারা। তাই নিজেদের অবস্থান ধরে রাখতে তারা বিভিন্ন মহলে দৌড়-ঝাঁপ শুরু করেছেন বলে জানা গেছে।এ বিষয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়ার পক্ষে একমত মাউশির মহাপরিচালক অধ্যাপক ড. ওয়াহেদুজ্জান। তিনি জাগো নিজউকে বলেন, যে বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গেছে, তার সনদও বাতিল হয়ে যাবে। তিনি বলেন, আমরা একটি গণনির্দেশনা দেয়ার কথা ভাবছি। তবে এ বিষয়ে এখনো চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ পাওয়া যাবে তাদের সার্টিফিকেট খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেয়া হবে।এদিকে দারুল ইহসানের সার্টিফিকেটকে অবৈধ বলা যাবে কি না এবং সেটি কার্যকর হবে কি না তা কর্মরত প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত নেবেন বলে জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের আইন বিভাগের সহকারী পরিচালক মৌলি আজাদ। তিনি বলেন, আদালত দারুল ইহসানকে বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে গণ্য করেন না। তাই এ প্রতিষ্ঠানের সব কার্যক্রম বন্ধের নির্দেশ দিয়েছেন। প্রতিষ্ঠার শুরুতে দারুল ইহসান একটি ভালো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছিল। কিন্তু ২০০৫ সাল থেকে মালিকানার দ্বন্দ্বসহ বিভিন্ন কারণে একাধিক গ্রুপে বিভক্ত হয়ে শাখা-প্রশাখা খোলায় বিশ্ববিদ্যালয়টির সুনাম ক্ষুণ্ন হয়। এরপর ২০০৬ সাল থেকে সনদ বিক্রি শুরু হয়।কোন সাল পর্যন্ত সনদ গ্রহণযোগ্য হবে না এমন প্রশ্নের জবাবে মৌলি আজাদ বলেন, আদালতের রায়ে এটা উল্লেখ করা হয়নি। কর্মরত প্রতিষ্ঠানের উপর এটি নির্ভর করছে।তবে এসব বির্তক মানতে রাজি নন স্কুল কর্তৃপক্ষ। আইডিয়াল স্কুলের প্রধান শিক্ষক শাহান আরা বেগম বলেন, সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে আমাদের শিক্ষকরা দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিভিন্ন কোর্স করেছেন। এখন যদি সে প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যায় এতে শিক্ষকদের কী করণীয় প্রশ্ন তুলে তিনি বলেন, আমাদের শিক্ষকরা তাদের নিজেদের যোগ্যতায় শিক্ষকতা করছেন। তাই এটি নিয়ে বির্তক তুলে প্রতিষ্ঠানের সুনাম নষ্ট করা ছাড়া আর কিছুই নয়।প্রসঙ্গত, দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম বন্ধ করতে হাইকোর্টের দেয়া রায়ের বিরুদ্ধে করা লিভ টু আপিল গত ৮ ফেব্রুয়ারি খারিজ করে দেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। এ রায়ের ফলে কার্যত বন্ধ হয়ে যায় বিশ্ববিদ্যালয়টি। সুপ্রিম কোর্টের চূড়ান্ত রায়ের ফলে দারুল ইহসান থেকে ব্যাচেলর অব এডুকেশন (বিএড) ও লাইব্রেরি সায়েন্সের ডিপ্লোমা এবং এলএলবি সনদধারীরা সবচেয়ে বেশি ঝামেলায় পড়ছেন। বিএড সনদ দিয়ে যারা চাকরিতে উচ্চতর গ্রেড পেয়েছেন, তারাও ঝামেলায় আছেন। চাকরি হারানোর শঙ্কায় আছেন দেশের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রায় ১০ হাজার লাইব্রেরিয়ান ও সহকারী লাইব্রেরিয়ান, যারা দারুল ইহসান থেকে লাইব্রেরি সায়েন্সে ডিপ্লোমা নিয়ে এমপিওভুক্ত হয়েছেন।এছাড়া সারা দেশে দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় পাঁচ লাখ সনদধারী রয়েছেন। গত প্রায় দশ বছরে দারুল ইহসানের মূল ক্যাম্পাসসহ বিভিন্ন শাখা-প্রশাখা থেকে প্রশাসন ও শিক্ষাসহ বিভিন্ন ক্যাডার কর্মকর্তা ও সরকারি-বেসরকারি শিক্ষকরা আছেন সনদধারীর তালিকায়।এমএইচএম/এআরএস/আরআইপি

Advertisement