বিনোদন

প্রয়াণ দিবসে গোলাম মুস্তাফা আবৃত্তি পদক চালু

কিংবদন্তি অভিনেতা গোলাম মুস্তাফা ভালো কবিতা আবৃত্তি করতেন। তার হাত ধরেই এদেশে আবৃত্তি চর্চার উর্বর ভূমি রচিত হয়েছে। তাই আবৃত্তিতে তার ভূমিকা অনন্য। আর এ কারণেই এই কিংবদন্তির জীবনের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে ‘বাংলাদেশ আবৃত্তি সমন্বয় পরিষদ’ চলতি বছর থেকে চালু করেছে ‘গোলাম মুস্তাফা আবৃত্তি পদক’। প্রথমবার এ পদক প্রদান করা হয়েছে গোলাম মুস্তাফারই প্রয়াণ দিবসে। সোমবার (২০ ফেব্রুয়ারি) খ্যাতিমান এই অভিনেতার ১৪তম মৃত্যুবার্ষিকী। ২০০৩ সালের এইদিনে দেশীয় চলচ্চিত্রে অপূরণীয় অভাব রেখে গোলাম মুস্তাফা পাড়ি জমান ওপারে।ওইদিন বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালায় একুশের প্রথম প্রহর উদযাপন এবং গোলাম মুস্তাফাকে স্মরণসহ ১০ জনকে পদক ‘গোলাম মুস্তাফা আবৃত্তি পদক’ প্রদান করা হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন সংস্কৃতিমন্ত্রী ও আবৃত্তি সমন্বয় পরিষদের সভাপতি আসাদুজ্জামান নূর এবং বিশেষ অতিথি ছিলেন গোলাম মুস্তাফার কন্যা অভিনয় ও আবৃত্তিশিল্পী সুবর্ণা মুস্তাফা। অনুষ্ঠানটি উপস্থাপনা করেন আবৃত্তি সমন্বয় পরিষদের সাধারণ সম্পাদক আহকাম উল্লাহ।অনুষ্ঠানের শুরুতেই আসাদুজ্জামান নূর আব্দুল গাফফার চৌধুরী রচিত ‘একুশে ফেব্রুয়ারি’ কবিতা আবৃত্তি করেন। এ সময় মিলনায়তনে উপস্থিত সব দর্শক-শ্রোতা তার সঙ্গে কণ্ঠ মেলান। এরপর অতিথিদের বক্তব্য প্রদান শেষে শুরু হয় পদক প্রদানের পালা। অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি ও বিশেষ অতিথি পদকপ্রাপ্তদের উত্তরীয়, ১০ হাজার টাকার চেক এবং পদক প্রদান করেন। প্রথমবারের ‘গোলাম মুস্তাফা আবৃত্তি পদক’ পেয়েছেন নিখিল সেন, সৈয়দ হাসান ইমাম, কামাল লোহানী, আশরাফুল আলম। এই চারজন পেয়েছেন জীবদ্দশায়।মরণোত্তর পদক পেলেন মৃণাল সরকার, ওয়াহিদুল হক, নাজিম মাহমুদ, হেমচন্দ্র ভট্টাচার্র্য্য, অধ্যাপক নরেন বিশ্বাস, কাজী আবু জাফর সিদ্দিকী। পদক প্রদানের পর আবৃত্তি পরিবেশন করে আবৃত্তি সংগঠন কণ্ঠশীলন, স্বরশ্রুতি, কথা আবৃত্তি চর্চা কেন্দ্রসহ আরো বেশ কয়েকটি সংগঠন। প্রসঙ্গত, গোলাম মুস্তাফা ১৯৩৪ সালের ২ মার্চ বরিশালের দপদপিয়ায় জন্মগ্রহণ করেন। ছেলেবেলা থেকেই অভিনয়ের প্রতি ঝোঁক ছিলো তার। সেই সুবাদে ১৯৪৫ সালে বরিশালের টাউন হলে বি.ডি হাবিবুল্লাহ রচিত ‘পল্লীমঙ্গল’ মঞ্চনাটকে প্রথম অভিনয় করেন তিনি।১৯৬০ সালে ‘রাজধানীর বুকে’ ছবিতে অভিনয়ের মাধ্যমে তার রূপালি পর্দায় অভিষেক। প্রথম ছবিতেই তিনি অভিনয় করেছিলেন খলনায়কের চরিত্রে। এতে তার অভিনয় দর্শকদের যেমন পছন্দ হয়, তেমনি নির্মাতাদের নজরেও বিশেষ আকর্ষণ লাভ করেন তিনি।সেই থেকে শুরু। এরপর একে একে প্রায় তিন শতাধিক ছবিতে তিনি অভিনয় করেন। এর মধ্যে বেশকিছু উর্দু চলচ্চিত্রও ছিলো। তার অভিনীত উল্লেখযোগ্য উর্দু ছবিগুলোর মধ্যে রয়েছে- ‘পীরিত না জানে রীত’, ‘কাজল’, ‘চোখাই’, ‘চান্দা’ ও ‘তালাশ’।গোলাম মুস্তাফা অভিনীত বাংলা ছবিগুলোর মধ্যে ‘আলীবাবার চল্লিশ চোর’, ‘রাজধানীর বুকে’, ‘নিজেকে হারায়ে খুঁজি’, ‘রক্তাক্ত বাংলা’, ‘তিতাস একটি নদীর নাম’, ‘সুর্যসংগ্রাম’, ‘পদ্মা নদীর মাঝি’, ‘এমিলের গোয়েন্দা বাহিনী’, ‘শ্রাবণ মেঘের দিন’ ও ‘দেবদাস’ অন্যতম।ক্যারিয়ার জীবনে কাজের স্বীকৃতি স্বরূপ গোলাম মুস্তাফা অনেক পুরস্কারে ভূষিত হন। এর মধ্যে ১৯৮০ সালে ‘এমিলের গোয়েন্দা বাহিনী’ ছবিতে সেরা পার্শ্ব-অভিনেতা হিসেবে, ১৯৮৬ সালে ‘শুভদা’ ছবিতে অভিনয়ের জন্য সেরা অভিনেতা হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেন। এছাড়া চলচ্চিত্রে বিশেষ অবদান রাখায় ২০০১ সালে তিনি একুশে পদক সম্মানে ভূষিত হন।গোলাম মুস্তাফা ১৯৫৮ সালে হোসনে আরাকে বিয়ে করেন। তাদের সন্তান সুবর্ণা মুস্তাফা বর্তমান সময়ের একজন খ্যাতিমান অভিনেত্রী।এনই/এলএ

Advertisement