বিশেষ প্রতিবেদন

আজও অরক্ষিত ভাষা আন্দোলনের ঐতিহাসিক আমতলা

গভীর শ্রদ্ধা ও যথাযথ মর্যাদায় জাতি ভাষা শহীদদের স্মরণের মাধ্যমে ‘মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’ পালন করছে আজ। ভাষা শহীদদের প্রাণের বিনিময়ে বাংলা আজ পেয়েছে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি। অথচ যে স্থানটি থেকে মিছিল শুরু করে ভাষা সংগ্রামীরা শহীদ হয়েছেন সেই স্থানটি আজও অরক্ষিত। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে প্রবেশপথের পূর্বপাশের গেটটি থেকে শুরু হয়েছিল ভাষা রক্ষার মিছিল। ভাষা আন্দোলনের স্মৃতিবিজড়িত আমতলার ঐতিহাসিক প্রাঙ্গণ আজও যথাযোগ্য মর্যাদা পায়নি।ভাষার দাবিতে আন্দোলন চলাকালে ১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারি তৎকালীন পাকিস্তান সরকার মিছিল মিটিংয়ের ওপর ১৪৪ ধারা জারি করে। কিন্তু বাংলার দামাল ছেলেরা ১৪৪ ধারা ভেঙে রাজপথে মিছিল নিয়ে নেমে পড়ে। মিছিলে পুলিশ গুলি করলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সালাম, বরকত ও শফিউল নিহত হন। সেই মিছিলটির সূত্রপাত হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ এলাকার আমতলার এই গেটের সামনে থেকেই। সেদিন মিছিল বের করার সঙ্গে সঙ্গেই পুলিশ ভাষা সংগ্রামীদের উপর গুলি ও লাঠিচার্জসহ নির্যাতন শুরু করে।ইতিহাসের অমর সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে এই আমতলা গেট। তরুণ প্রজন্মের কাছে এই গেটটির ইতিহাস এখনো অজানা। ভাষা আন্দোলনের সাক্ষী হিসেবেও পরিচিতি পায়নি স্থানটি। ঐতিহাসিক সেই আমতলা আজও অযত্ন আর অবহেলায় পড়ে আছে। খোদ ভাষা আন্দোলনের ঠিক একরাত আগেও ইতিহাসে অমর এই স্থানটি পড়ে থাকতে দেখা গেছে চরম অবহেলায়।সোমবার সরেজমিন দেখা গেছে, ঐতিহাসিক এ স্থানটির গেটে তালা ঝুলছে। বছরের অন্যান্য দিনের মতোই পড়ে আছে এই স্থানটি। অথচ গভীর রাতেই এই স্থানটির সামনে দিয়েই হেটে দেশের শীর্ষ নেতৃবৃন্দসহ বিভিন্ন সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠন কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা জানাবেন। হকারদের দখলেই স্থানটি ভাষার মাসেও মর্যাদা পায়নি। স্থানটি ঘিরেই চললে কোটি টাকার বাণিজ্য। চা, ফিরনি, ঝালমুড়ি, খাবার হোটেল ও বিড়ি সিগারেটের দোকান থেকে শুরু করে মশারি, প্লাস্টিক সামগ্রী, কম্বল ও ফলের দোকান রয়েছে। গেটের ভেতরের দুই পাশে দুটি ভাসমান বসত ঘরও রয়েছে।আমতলা গেটের সামনে ভ্যানগাড়িতে করে ডাব বিক্রি করছেন ষাটোর্ধ্ব বৃদ্ধ নুরুল ইসলাম। জানতে চাইলে তিনি জাগো নিউজকে বলেন, কি করবো বাবা? সবাই বসে আমিও বসেছি। কেউ তো কিছু বলছে না। জায়গার খাজনা তো দিয়ে দিই।ভাষা আন্দোলনের ৬৫ বছর পেরিয়ে গেলেও ঐতিহাসিক এ স্থানটির দায়িত্ব নেয়নি কেউ। আন্দোলনের সময় আমতলা গেটটি ছিলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে। বর্তমানে এটি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের। ব্যক্তি উদ্যোগে পরিচালিত ভাষা আন্দোলন গবেষণা কেন্দ্র ও জাদুঘরের দেওয়া একটি টিনের সাইনবোর্ডের মাধ্যমে কোনোরকম চেনা যায় গেটটি। এ দুটি প্রতিষ্ঠান ভাষা সংগ্রামী প্রয়াত কাজী গোলাম মাহবুব ট্রাস্ট পরিচালিত একটি প্রতিষ্ঠান।ঐতিহাসিক এ স্থানটির অবৈধ দখল বিষয়ে জানতে চাইলে দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের অতিরিক্ত প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা খন্দকার মিল্লাতুল ইসলাম জাগো নিউকে বলেন, আমরা বিভিন্ন সময়ে এ স্থানটিতে উচ্ছেদ অভিযান চালিয়েছি। কিন্তু অভিযান শেষ হওয়ার পরপরেই তা আবার দখল হয়ে যায়।১৯৫২ সালের ঐতিহাসিক এই আমতলা গেটটি ছিলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলাভবনের অংশ। কলাভবন থেকে সরিয়ে বর্তমান স্থানে নেয়া হয়। এরপর সেখানে ঢাকা মেডিকেল কলেজের বার্ণ ইউটিন স্থাপন করা হয়। এরপর এই স্থানটি চলে যায় ঢাকা মেডিকেল কলেজের অধীনে।এমএসএস/এআরএস/পিআর

Advertisement