দেশজুড়ে

রোগীর স্বজনের কান ধরে উঠ-বসের ভিডিও ভাইরাল (ভিডিও)

বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ইন্টার্ন চিকিৎসকদের হাতে রোগীর স্বজনদের মারধর ও কান ধরে উঠ-বস করানোর একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। মাত্র ২৭ সেকেন্ডের এই ভিডিও চিত্রে দেখা যায়, রোগীর স্বজনদের ব্যাপক মারধর করছেন ইন্টার্ন চিকিৎসকরা। তাকে বাঁচাতে পরিবারের একজন মহিলা সদস্য এগিয়ে আসলে তাকেও মারধর করা হচ্ছে। সোমবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছাড়া এই ভিডিওচিত্র দেখে অনেকেই ক্ষোভ প্রকাশ করে নানা মন্তব্য করেছেন। সেই সঙ্গে ঘৃণাও জানিয়েছেন অনেকেই।এদিকে, চিকিৎসকদের ওপর হামলার উল্টো অভিযোগ এনে এবং পুলিশে দিয়ে নিজেদের নিরাপত্তার দাবিতে অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতি পালন করেছেন ইন্টার্ন চিকিৎসকরা। রোববার বেলা ১টা থেকে সোমবার বেলা সাড়ে ৩টা পর্যন্ত টানা কর্মবিরতি পালন করেন তারা। পরে কলেজ প্রশাসনের সাথে আলোচনা করে এক সপ্তাহের আলটিমেটাম দিয়ে কর্মবিরতি স্থগিত করা হয়। কর্মবিরতি চলাকালে মানববন্ধনে ইন্টার্ন চিকিৎসকরা বিভিন্ন লেখা সম্বলিত প্ল্যা-কার্ড প্রদর্শন করেন। এতে লেখা ছিল, ‘তুমি যদি মানুষ হতে, হতাম ডাক্তার মশাই। তুমি যে ভাই পশু বনের, আমি যে তাই কসাই।’অন্য একটি প্ল্যা-কার্ডে লেখা ছিল, ‘আমার হাতের ছুরির নিচে তুমি যতো নিরাপদে, আমার মুখের স্যরির বলে, পড়বে মহাবিপদে।’ রোগীকে নিয়ে চিকিৎসকদের এ ধরনের উক্তি দেখে হাসপাতালে আগত অনেকেই ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।এদিকে কর্মবিরতি পালনকালে সকাল ১০টার হাসপাতালের রেডিও থেরাপি অ্যান্ড অনকোলজি (ক্যান্সার) বিভাগে জানালা লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ার ঘটনা ঘটেছে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, ক্যান্সার বিভাগের পাশের ইন্টার্ন চিকিৎসকদের আবাসিক হোস্টেল রয়েছে। গুলি যেকোনো একটি ভবন থেকেই ছোড়া হয়েছে, এটি নিশ্চিত। এ ঘটনায় বগুড়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আরিফুর রহমান মণ্ডল ঘটনাস্থল পরিদর্শনে করে বলেন, সেখানে গুলির খোসা পাওয়া যায়নি। এটি তদন্ত করে দেখতে হবে, গুলি কোথা থেকে হয়েছে।রোববার এমন পরিস্থিতির পর সোমবার সকালে হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সামনে মানববন্ধন ও সমাবেশ থেকে নিজেদের নিরাপত্তা নিশ্চিতসহ সাত দফা দাবি আদায়ে অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতির ঘোষণা দেন ইন্টার্ন চিকিৎসকরা। তবে হাসপাতাল প্রশাসনের সঙ্গে বৈঠক শেষে বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে দাবি আদায়ে হাসপাতাল-প্রশাসনকে সাতদিনের সময় বেঁধে দিয়ে কর্মসূচি প্রত্যাহারের ঘোষণা দেয়া হয়।ইন্টার্ন চিকিৎসকদের পক্ষ থেকে মেডিকেল কলেজ ছাত্রলীগের সহসভাপতি কুতুব উদ্দিন এ কর্মবিরতি স্থগিতের ঘোষণা দেন। তিনি জানান, আগামী ২৬ ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বগুড়া সফরে আসছেন। তার সফরের কারণে এবং হাসপাতাল প্রশাসনের আশ্বাসে আপাতত কর্মসূচি স্থগিত করা হলো। তবে তাদের সাত দফার মধ্যে শেষ দফায় উল্লেখ রয়েছে, দাবি পূরণে ব্যর্থ হলে হাসপাতালের পরিচালক ও উপ-পরিচালককে পদত্যাগ করতে হবে।এর আগে সিরাজগঞ্জ থেকে চিকিৎসা নিতে আসা একজন মুমূর্ষু রোগীর স্বজনকে তুচ্ছ কারণে রোববার সকালে প্রথম দফা মারধর করে। এরপরে বেলা সাড়ে ১২টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত জরুরি বিভাগসহ হাসপাতাল ফটকে তালা ঝুলিয়ে মেডিকেল কলেজ ছাত্রলীগের নেতৃত্বে হাসপাতালে মহড়া চালান ইন্টার্ন চিকিৎসকেরা।তারা সিরাজগঞ্জ সদরের কোনাগাতি গ্রাম থেকে আসা ওই রোগীর ছেলে আবদুর রউফ সরকারকে আটকে রেখে দফায় দফায় মারধর করেন। একপর্যায়ে হাসপাতালের পরিচালক, বিএমএ নেতা ও জ্যেষ্ঠ চিকিৎসকদের উপস্থিতিতে আবদুর রউফকে ১০০ বার কানধরে উঠ-বস করিয়ে পা ধরে মাফ চাইতে বাধ্য করেন। পরে  হাসপাতালের পরিচালকের কক্ষে আরেক দফা মারধরের পর তাকে পুলিশে সোপর্দ করা হয়।চোখের সামনে ভাইকে মারধর ও অপমানের বিষয়টি স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে জানাতে চাওয়ায় পরিচালকের কক্ষে হাসপাতাল প্রশাসন, বিএমএ নেতা, জ্যেষ্ঠ চিকিৎসক ও পুলিশের সামনে আবদুর রউফের বোন বীনা বেগম ও সেতু নামে দুই নারী স্বজনের ওপর হামলা করেন  ইন্টার্ন চিকিৎসকেরা। হামলার শিকার আবদুর রউফের বোন বীনা বেগম সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করেন, স্বাস্থ্যমন্ত্রীর এলাকার লোক হয়েও সিরাজগঞ্জ থেকে চিকিৎসা নিতে এসে চিকিৎসকদের মারধর ও হামলার শিকার হচ্ছি। এ জন্যই স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে জানানোর কথা বলেছি। সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসকেরা আমাদের ওপর হামলা করে। নারী হয়েও রক্ষা মিলেনি তাদের হাত থেকে। ইন্টার্ন চিকিৎসক ও মেডিকেল কলেজ ছাত্রলীগ নেতা কুতুব উদ্দিন বলেন, সিরাজগঞ্জ থেকে আসা ওই ব্যক্তি একজন নারী ইন্টার্ন চিকিৎসকের সঙ্গে খারাপ আচরণ করেছে। আরেকজন ইন্টার্ন চিকিৎসককে মারধর করেছে। ওই ব্যক্তির দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি ও  চিকিৎসকদের নিরাপত্তাসহ ৭ দফা দাদিতে আমরা আন্দোলন করছি।কানধরে ওঠবস করানো এবং নারীদের ওপর হামলা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, হাসপাতাল প্রশাসনের সিদ্ধান্তে কান ধরে উঠ-বস করে ওই ব্যক্তি মাফ চেয়েছেন। হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল একেএম মাসুদ আহসান বলেন, এ ঘটনায় পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। ইন্টার্ন চিকিৎসকরা কর্মবিরতি স্থগিত করেছে। এখন আলোচনা করে শান্তিপূর্ণ সমাধান করা যাবে।বগুড়া জেলা স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের সভাপতি ডা. সামির হোসেন মিশু ধর্মঘট স্থগিতের বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, প্রশাসনের পক্ষ থেকে ইন্টার্ন চিকিৎসকদের দাবি পুরণে ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দেয়া হয়েছে।লিমন বাসার/এএম/পিআর

Advertisement