চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতায় দেশের জিডিপির দশমিক ৫৫ শতাংশ ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)। এই ক্ষতি ধরা হয়েছে চলতি অর্থবছরের প্রাক্কলিত ৬.৫ শতাংশ জিডিপি ধরে। গত ৮১ দিনের অবরোধ এবং ৬৭ দিন হরতালে এ ক্ষতি হয়েছে।রোববার রাজধানীর ব্র্যাক সেন্টারে আগামী ২০১৫-১৬ অর্থবছরের বাজেট প্রস্তাবনা শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য দেয় প্রতিষ্ঠানটি। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত প্রস্তাবনা উল্লেখ করেন সিপিডির রিসার্চ ফেলো তৌফিকুল ইসলাম খান।এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন সিপিডির নির্বাহি পরিচালক অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান, সম্মানিত ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য, হেড অব রিসার্চ ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেমসহ গবেষণা সংশ্লিষ্টরা।প্রবৃদ্ধিকে গতিশীল করা এবং সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীল রাখা আগামী বাজাটের প্রধান লক্ষ্য হওয়া দরকার। এছাড়া রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় না থাকলে প্রবৃদ্ধিও অগ্রযাত্রা ব্যহত হবে।সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, গত বেশ কয়েক বছর আমাদের প্রবৃদ্ধি ৬ শতাংশের কাছাকাছি অবস্থান করছে। চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে এবারও এই অবস্থান থেকে আমারা বের হতে পারবো না।চলমান রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতায় গত ৮১ দিনে (৫ জানুয়ারি থেকে ১৭ মার্চ) মোট ক্ষতি হয়েছে চার হাজার ৯০০ কোটি টাকা। এতে মোট জিডিপি দশমিক ৫৫ শতাংশ কম হবে। মোট ১১টি খাতকে ধরে ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণ করা হয়েছে। যা ক্ষতির সর্বনিম্ন হিসেবটাই দেখানো হয়েছে। তবে সব খাততে একত্রে করে হিসেব করলে এই ক্ষতির পরিমাণ আরও বাড়ত।১১টি খাতের মধ্যে রয়েছে- কৃষি খাতে ৩৯৮ কোটি, পোল্ট্রি খাতে ৬০৬ কোটি, চিংড়ি খাতে ৭৪১ কোটি, গার্মেন্টস খাতে ১৩১৮ কোটি, প্লাস্টিক খাতে ২৪৪ কোটি, পরিবহন খাতে ৮২৯ কোটি, টুরিজম খাতে ৮২৫ কোটি, ব্যাংকিং ও ইন্স্যুরেন্স খাতে ১৫৬ কোটি, পাইকার ও খুচরা ব্যবসায়ে ৪৪৮ কোটি টাকা, রিয়েল এস্টেট এবং শিক্ষা খাতে নিরুপণ যোগ্য না।সিপিডির সম্মানিত ফেলো দেবপ্রিয় ভট্রাচার্য বলেন, বর্তমানে দেশে মূল্যস্ফীতি নিম্নমুখী, বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকের সুদহার নিম্নমুখী, বাজেট ঘাটতি নিয়ন্ত্রণে, টাকার বিনিময় হার স্থিতিশীল, বিশ্ববাজারে তেলের দাম কম ফলে তেলে ভর্তুকির চাপ কম, বৈদেশিক আয়-ব্যয় স্থিতি উদ্বৃত্তি রয়েছে। এতোগুলো ইতিবাচক লক্ষণ থাকা স্বত্বেও বর্তমানে ব্যক্তিখাতে বিনিয়োগে তেজিভাব নেই। এর কারণ উদার রাজনৈতিক পরিবেশের অভাব। যার ফলে স্বার্থ রক্ষার পরিবেশ সৃষ্টি হয়। রাজনৈতিক সংস্কার না হলে কাঙ্খিত প্রবৃদ্ধি হবে না।তিনি বলেন, উদার বাজার অর্থনীতিক গড়ে তুলতে হলে রাজনীতিতে উদারতা দরকার। এটা না হলে ব্যক্তি বিনিয়োগ প্রসারিত হবে না। অর্থনীতিতে নীতিগত ও প্রশাসনিক সংস্কার দরকার। এই জন্য নেতৃত্বের যে সক্ষমতা দরকার ছিল তার অভাব দেখা গেছে। কাঙ্খিত প্রবৃদ্ধি অর্জনে স্থানীয় সরকার ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করার দরকার ছিল তাও করা হয়নি।তিনি আরও বলেন, অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি ৬ শতাংশ থেকে বেরিয়ে আসতে হলে, সপ্তম-পঞ্চবার্ষিকীতে যে পরিকল্পনা ছিল তা বাস্তবায়নের পাশাপাশি সুশাসন, দক্ষতা, জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে।সিপিডির সম্মানিত ফেলো বলেন, রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা থাকা ছাড়াও নিজেদের সক্ষমতা কমার কারণে বিশ্বব্যাংক ও আন্তজার্তিক মুদ্রা তহবিলকে (আইএমএফ) সরকার ডেকে আনে। তারা আমাদের ওপর শর্ত চাপিয়ে যা সরকার চাইলে নিজেই অভ্যন্তরীণভাবে পূরণ করতে পারতো।এসআই/বিএ/এমএস
Advertisement