পা দিয়েছে পনেরতে। পড়াশুনা করছে সপ্তম শ্রেণিতে। পাঁচ বছর আগেও পেট চালাতো বাদাম বিক্রি করে। নাম তার দ্বীন হাসান হৃদয়। ঢাকার মোহাম্মদপুর বস্তিতে বেড়ে ওঠা এ কিশোর মাতিয়ে যাচ্ছে রোলবল বিশ্বকাপ। লাল-সবুজ জার্সি গায়ে চার ম্যাচে করেছে ২০ গোল। গ্রুপ পর্বে বাংলাদেশ পুরুষ দলের সব ম্যাচ জয়ের নায়ক যে সে। হৃদয়কে বলা যায় রোলবলের বিস্ময় বালক। উচ্চতায় ছোট বলে সতীর্থদের অনেকে তাকে ডাকে মেসি বলে। তার খেলা দেখলে যে কেউ বলবেন সে রোলবলে ‘বাংলাদেশের মেসি’। তার বড় গুণ গতি ও ড্রিবলিং। প্রতি আক্রমণে সবচেয়ে কার্যকর ভূমিকা থাকে তার। বিশ্বকাপে সামনের ম্যাচগুলোতে নিজেকে আরো উপরে তুলতে চায় হৃদয় ‘আরও গোল করতে চাই। দেশকে বিশ্বকাপ উপহার দিতে চাই। রোলবলে নিজেকে আরও বড় হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে চাই।’ হৃদয় বাবা হারিয়েছে অনেক দিন আগে। মা আর দুই বোন নিয়ে তার ছোট্ট সংসার। আর্থিক কষ্টের কারণে এক সময় মাথা থেকে পড়ালেখার চিন্তা সরিয়ে কাঁধে তুলে নেয় সংসারের ভার। শুরু করে বাদাম বিক্রি। যে বয়সে তার খেলার সাথীরা কাঁধে ব্যাগ ঝুলিয়ে যেতো স্কুলে, তখন তার কাঁধে ঝোলে বাদামের টুকরি। বাদামের ফেরিওয়ালা হয়ে ঘুরতে হয়েছে রাজধানীর অলিগলি। এমন বয়সে এ পেশায় কার-ই বা মন বসে? তাইতো সুযোগ পেলেই করতো স্কেটিং। তার জীবনের গল্পটা শুরু হয় রায়েরবাজার শাখার ইউসেফ স্কুলে স্কেটিং শুরু করে। হঠাৎ-ই একদিন সুযোগ মেলে বাংলাদেশ রোলার স্কেটিং ফেডারেশনের অনুশীলনে। দারুণ স্কেটিং চালাতে দেখে স্কুল থেকে ৪০ হাজার টাকা উপহার দেয়া তাকে। ওই টাকা দিয়েই স্কেটিং সামগ্রী ক্রয় করে কঠোর অনুশীলন শুরু তার। বর্তমানে স্কেটিং ফেডারেশনে চাকরি করছে হৃদয়। নিজে স্কেটিং করে, পাশাপাশি অনুশীলন করায় ছোট ছেলে মেয়েদের। সেখান থেকেও আসে কিছু অর্থ। যা দিয়ে কোনোরকম চলে তাদের সংসার। তবে প্রতিভা দিয়েই হৃদয় ঢুকে গেছে জাতীয় দলের। রোলবল বিশ্বকাপে নিজেকে মেলে ধরেছে বাংলাদেশের বিজ্ঞাপন হিসেবে। দলে জায়গা পেলেও প্রথম ছয়ে কোর্টে নামতে পারবে কিনা তা নিয়ে অনিশ্চয়তা ছিল। তবে আত্মবিশ্বাস ছিল তার। সে আত্মবিশ্বাসই হৃদয়কে কেবল সেরা ছয়েই জায়গা করে দেয়নি, বানিয়েছে রোলবল বিশ্বকাপে বাংলাদেশের অন্যতম সেরা। এতো খেলা থাকতে রোলার স্কেটিং কেনো টানলো হৃদয়কে? জানা যাক তার কাছেই ‘এটা আসলে খুবই মজার খেলা। আমার অনেক ভালো লাগে। ভালো লাগা থেকেই আমি খেলাটার সঙ্গে জড়িয়েছি।’ বাংলাদেশের লক্ষ্য কি এ বিশ্বকাপে? ‘এ খেলায় ভারত অনেক শক্তিশালী দল। তারা সর্বশেষ দুইবারের বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন। ভারতকে হারিয়ে হয়তো শিরোপা জিততে পারবো না। আমরা ফাইনালে খেলতে পারলেই খুশি’-জবাব হৃদয়ের।আরআই/এনইউ/আরআইপি
Advertisement