একুশে বইমেলা

সাহিত্য ডিক্টেটরশিপের জায়গা নয় : সাদাত হোসাইন

সময়ের জনপ্রিয় তরুণ লেখক সাদাত হোসাইন। অমর একুশে বইমেলার অর্ধেক সময়ে তার নতুন উপন্যাস ‘মানবজনম’-এর তৃতীয় মুদ্রণ শেষ হয়েছে। এখন পাওয়া যাচ্ছে চতুর্থ মুদ্রণ। বাংলাদেশে বইমেলা শুরুর আগে কলকাতা আন্তর্জাতিক পুস্তক মেলায় সাদাত হোসাইনের নতুন এই উপন্যাসটি ব্যাপক পাঠকপ্রিয়তা অর্জন করে। বইটি বইমেলায় পাওয়া যাচ্ছে ভাষাচিত্র-এর স্টলে। স্টল নম্বর ৬১০-৬১১। এছাড়া সাদাত হোসাইনের বেস্টসেলার উপন্যাস ‘আরশিনগর’, ‘অন্দরমহল’, ‘আমার আর কোথাও যাওয়ার নেই’ এবং ছোটগল্প সংকলন ‘জানালার ওপাশে’ পাওয়া যাচ্ছে এই স্টলে। সাক্ষাৎকার নিতে কয়েকদিন গিয়ে সরেজমিনেও দেখা গিয়েছে তার বইয়ের জন্য পাঠকের দীর্ঘ সারি। বইমেলায় তুমুল ব্যস্ত এই লেখক তারপরও মেলা শেষে সময় দিয়েছেন। বইমেলার ব্যস্ততা ও ব্যক্তি সাদাতের সাহিত্যচিন্তা নিয়ে কথা বলেছেন জাগো নিউজের সঙ্গে। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন সালাহ উদ্দিন মাহমুদজাগো নিউজ : এবারের বইমেলায় আসা ‘মানবজনম’ সম্পর্কে কিছু বলুন- সাদাত হোসাইন : মানবজনম নিয়ে কী বলব? তারচেয়ে পাঠকের জন্যই থাকুক। তারা আবিষ্কার করুক, মানবজনম বইটি কী?জাগো নিউজ : না, তারপরও ভাবনা বা গল্পটা কী নিয়ে?সাদাত হোসাইন : মানবজনম বইটিকে আমি বলি এভাবে যে, এক জীবনের অসংখ্য গল্প, মানুষ ও অনুভূতির আখ্যান। এখন এই উপন্যাসের প্রধান বিষয় কী? এটি খুবই জটিল একটি প্রশ্ন আমার জন্য। দুরহও। মানবজনমের কি আসলেই কোন একটি প্রধান বিষয় আছে? ধরুন এই যে আপনার জীবন, এই জীবনে আপনার প্রধানতম বিষয় কোনটি? এই প্রশ্ন করলে এর উত্তরে আপনি কী বলবেন? আমি জানি না আপনি কী বলবেন, কিন্তু আমি নিজে জানি, আমি এখানে আলাদা করে কোন একটি ঘটনাকে বলতে পারব না। আমার কাছে মনে হয় একটা মানবজনমের প্রতিটি মুহূর্ত চূড়ান্ত পর্যায়ের গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিটি মুহূর্ত। ধরুন আপনি রাস্তা পার হচ্ছেন, হুঁশ করে আপনার গা ঘেঁষে একটি ট্রাক চলে গেল, আপনি হয়তো খেয়ালও করলেন না। কিন্তু আপনি চাপা পড়তে পারতেন। বা গ্রামের রাস্তার অন্ধকারে আপনি গান গাইতে গাইতে আনন্দচিত্তে পথ হাঁটছেন, ঠিক ওই মুহূর্তে আপনার ঠিক দু’পায়ের মাঝখানে একটা ফণাতোলা গোখরা সাপ। সে আপনাকে ছোবল দেয়ার ঠিক আগ মুহূর্তে আপনি তাকে পেরিয়ে এলেন। কিন্তু আপনি এই মুহূর্তগুলোকে কিন্তু আলাদাভাবে অনুধাবন করতে পারেননি যে এই দুটি মুহূর্ত আপনার জীবনের সমাপ্তি বা শুরুর মুহূর্ত হয়ে যেতে পারত। তারমানে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত হিসেবে এই মুহূর্তগুলোর ডিফাইনড হওয়া উচিত! অথচ আপনি হয়তো জীবনের অন্য কোন ঘটনাকে ধরে নিচ্ছেন আপনার জীবনের সেরা মুহূর্ত। তাই না? কিন্তু আমার মনে হয়, জীবনে আলাদা করে কোন প্রধান ঘটনা নেই। যদি কিছু থেকে থাকে, তা হলো জন্ম। কারণ জন্মের মধ্য দিয়েই জীবনের শুরু। সকল ঘটনার শুরু। মৃত্যুর মধ্য দিয়েই শেষ। আর মানবজন্মের মানেই কিন্তু মৃত্যু! এই কারণে আমি বলতে পারি, মানবজনম সেই জন্মের গল্প, সেই মৃত্যুর গল্প। এখন জন্ম আর মৃত্যুরও কিন্তু ধরন আছে। আমরা কেবল জৈবিক জন্ম বা জৈবিক মৃত্যুকেই জন্ম-মৃত্যু বলে ধরে নেই। কিন্তু আসলেই কি ঘটনা তা? নাকি মানব জন্ম ও মৃত্যুর অসংখ্য ধরন রয়েছে। রূপ রয়েছে? মানবজনম উপন্যাস হয়তো সেইসকল জনম ও মৃত্যুর গল্প। জৈবিক জন্ম, জৈবিক মৃত্যু থেকে শুরু করে সম্পর্কের জন্ম, মৃত্যু, বোধের জন্ম-মৃত্যু, লোভের জন্ম-মৃত্যু, প্রেম ও ঘৃণার জন্ম-মৃত্যু, উপলব্ধির জন্ম-মৃত্যু। আসলে মানবজনম মানেই কিন্তু এই সবকিছুর জন্ম আর মৃত্যুর গল্প। আমার উপন্যাসটিও তাই। তবে উপন্যাসের শেষ লাইনটি থেকেই বলি, ‘কে জানে, হয়তো বিভ্রম আর অপেক্ষার নামই মানবজনম’। জাগো নিউজ : আমাদের সাহিত্যের কাছে আপনার প্রত্যাশা এবং প্রাপ্তির পার্থক্য কেমন?সাদাত হোসাইন : প্রতিষ্ঠিত ‘সাহিত্য’ শব্দ বা ভাবনা, যা একটি বিশেষ ‘ডিসকোর্স’ হয়ে উঠেছে, তাকে আমার খুব ভারী মনে হয়। খুব ‘দূরের’ ‘আভিজাত্যবোধে’ এবং ‘সুপরিওরিটি কমপ্লেক্সে’ ভোগা ‘উন্নাসিক’ একটি বিষয় মনে হয়। তবে এর দায় কখনোই সাহিত্যের নয়। আমার বিশ্বাস সাহিত্য নিজে কখনোই উন্নাসিক নয়। দূরের নয়। অভিজাতশ্রেণীর নয়। সে বরং কাছের। সাধারণের, সকলের। কিন্তু অনুভূতি প্রকাশের ধরন বা মান নির্ধারণ করে দিতে সদা খড়গহস্ত থাকা, ‘চিন্তার আভিজাত্যে’ ভোগা এক শ্রেণীর ‘আত্মস্বীকৃত’ ‘এলিট’ বা আত্মস্বীকৃত ‘শুদ্ধ সাহিত্যিক’ তকমাধারীদের কারণে সাহিত্যের এই ডেফিনিশেন প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এটা আসল সাহিত্য নয়, ওটা আসল সাহিত্য নয়। অমুকের উপন্যাস উপন্যাস নয়। যেমন কিংবদন্তি ঔপন্যাসিক হুমায়ূন আহমেদের উপন্যাস নিয়েও বিখ্যাত মানুষদের উক্তি শুনেছি যে, হুমায়ূন আহমেদ যা লিখছেন সেটি উপন্যাস নয়, অপন্যাস। হুমায়ূন আহমেদের লেখা সাহিত্য নয়। কী অদ্ভুত কথা! আমার প্রশ্ন হচ্ছে, কোনটি উপন্যাস এবং কোনটি উপন্যাস নয় বা অপন্যাস, সেটি নির্ধারণের দায়িত্ব কে কাকে দিয়েছে? এবং আমি একটি উপন্যাসকে উপন্যাস মনে না করলেই সেটি উপন্যাস নয়? সেটি অপন্যাস? আবার আমি যেটিকে উপন্যাস বা সাহিত্য বলব, সেটিই সাহিত্য? এই স্বৈরতান্ত্রিক মানসিকতায় ভাবনা বা সংজ্ঞা নির্মাণের অথরিটি আমি কোথায় পেলাম? কে দিয়েছে এই ক্ষমতা আমাকে? আমি নিজে? ধরুন, আমি নিজে ব্যক্তিগতভাবে প্রচণ্ড সিনেমাপ্রেমী মানুষ। আমি সময় ম্যানেজ করে যতটা সম্ভব সিনেমা দেখার চেষ্টা করি। তো কোয়ান্টিনো তারান্তিনোর একটি সিনেমার নাম আমি বহুবার শুনেছি। সকল সিনেমাবোদ্ধাই মোটামুটি আমাকে সাজেস্ট করেছেন এই সিনেমাটি দেখার জন্য। সিনেমাটির নাম ‘পাল্প ফিকশন’। সমস্যা হচ্ছে আমি ৩ বার চেষ্টা করেও সিনেমাটির বেশি দূর যেতে পারিনি। উঠে এসেছি। কিন্তু এই ৩ বার সিনেমাটি আমাকে টানেনি বলে, বা তার নির্মাণ তার গল্প আমাকে আকর্ষিত করেনি বলেও কিন্তু আমি একবারও ভাবিনি যে এই সিনেমাটি ভালো সিনেমা নয়, বা সিনেমা-ই নয়। আমি বারবার নিজেকে এটি বুঝিয়েছি যে সিনেমাটি হয়তো আমি বুঝতে পারিনি। হয়তো এই সুনির্দিষ্ট মানসিক দশায় বা পরিস্থিতিতে বা বোঝাপড়ায় সিনেমাটির গল্প, নির্মাণ আমাকে টানেনি। কিন্তু অন্য কোন সময়ে বা মানসিক অবস্থায় সেটি আমাকে স্পর্শ করবে। বা সিনেমাটি বুঝতে হলে আমার বোঝাপড়া, জানাশোনা আরো সমৃদ্ধ করতে হবে। এজন্য আমি সিনেমাটি তিনবার দেখার চেষ্টা করেছি। তাও যখন পারিনি, তখন একটা দীর্ঘ গ্যাপ নিলাম। তারপর চতুর্থবারে আমি সিনেমাটি দেখলাম এবং সিনেমাটি আমার ভালো লেগেছে। তবে এটিকে নিয়ে যতটা আলোচনা হয়েছে, বা যে মানের সিনেমা হিসেবে এটিকে ধরা হয়, সিনেমাটি কিন্তু আমাকে সেইরকম মুগ্ধ করতে পারেনি। ততটা টানেনি। কিন্তু এর মানে কিন্তু এই নয় যে আমি দুম করে বলে বসলাম, ধুর, এইটা কি সিনেমা? এটা কোনো সিনেমা হলো? ওভাররেটেড! এটা কিন্তু আমি বলিনি, বা ভাবিওনি।আমি মনে করি না, এটি আমার বলা উচিত। হ্যাঁ, এই সিনেমাটি আমাকে স্পর্শ করেনি, কিন্তু তার মানে এই নয় যে এটি আর কাউকে স্পর্শ করবে না। এটি কিন্তু অসংখ্য মানুষকে স্পর্শ করতে পেরেছে। এখন আমাকে স্পর্শ করতে পারেনি বলেই আমি কোন সিনেমা বা সাহিত্যকে নাকচ করে দিতে পারি না। যদি সেটি করি, তাহলে বুঝতে হবে আমার মনোজগতে একজন ডিক্টেটর বাস করে এবং মগজে একজন ভয়ঙ্কর স্বৈরতান্ত্রিক শাসক নিয়ে আমি শিল্প-সাহিত্য সম্পর্কে আমার মতামত দিয়ে যাচ্ছি। নিজেকে ভাবছি সব কিছুর মানদণ্ড। আমার চিন্তা, আমার ভালো লাগা, আমার মন্দ লাগাই জগতের একমাত্র চিন্তা, একমাত্র মানদণ্ড। আমি কিছু ভালো বললাম তো সেটি ভালো, ভালো তো ভালো, ভালো হতে বাধ্য। আবার, আমি কিছুকে সাহিত্য বা উপন্যাস বললাম তো সেটি সাহিত্য বা উপন্যাস হতে বাধ্য। আর আমি কিছুকে অ-সাহিত্য বা অপন্যাস বললাম তো সেটি আলবৎ সার্বজনীনভাবেই অ-সাহিত্য বা অপন্যাস। জগতের আর কারো কোন মন্তব্য গ্রহণযোগ্য নয়। যতই হাজার হাজার পাঠক সেই বই পাঠ করুক, স্পর্শিত হোক, আন্দোলিত হোক। কিন্তু যেহেতু আমি বলেছি, ওটি সাহিত্য নয়, সুতরাং ওটি মোটেই সাহিত্য নয়, এমনকি ওই পাঠকও পাঠক নন। সাহিত্যের এই বিষয়গুলো আমাকে খুব অবাক করে। কোনটি সাহিত্য আর কোনটি সাহিত্য নয়, সেটি কে নির্ধারণ করবে? এই আত্মস্বীকৃত এলিট শ্রেণী? নাকি অন্য কেউ? নাকি এই নির্ধারণের আদৌ কোন দরকার আছে? এরাই আবার বলেন, সময় বা কালই নির্ধারণ করবে কোনটি সাহিত্য আর কোনটি সাহিত্য নয়। তো সময় বা কালই যদি নির্ধারণ করে, তাহলে আপনারা বিষয়টা সময়-কালের হাতেই ছেড়ে দিচ্ছেন না কেন? আপনারা নিজেরাই কেন, বা কোন আক্কেলে ‘কাল বা সময়’ হয়ে সাহিত্য, অ-সাহিত্য, উপন্যাস, অপন্যাস নির্ধারণ করা শুরু করে দিলেন? কারণ কী? নাকি আপনারা নিজেদেরকেই ভাবছেন মহাকাল, সময়? কী ভাবছেন, কিছু না করেই আপনারা হয়ে উঠেছেন মহাকালজয়ী, নির্ধারক একনায়ক?এই বিষয়গুলো আমাকে খুব অবাক করে! অবাক করে এইজন্য যে, খুব সহজ চিন্তা বাদ দিয়ে বিষয়গুলোকে জটিল কেন করা হচ্ছে? এই জটিলতার পেছনে তাহলে কারণ কী? নাকি ঈর্ষাকাতরতা? আমি দেখেছি, যাদের ‘সাহিত্য’ কেউ পড়েন না, তাদের সাহিত্য নিয়ে সমালোচনাও নেই। বরং তারাই হয়ে ওঠেন তুখোড় সমালোচক। তাহলে?এইজন্যই ‘সাহিত্য’ বলতে যে প্রতিষ্ঠিত উন্নাসিক ভাবনাটি রয়েছে, তার কাছে আমার কোন প্রত্যাশা নেই। সাহিত্য যদি কোন সুনির্দিষ্ট আভিজাত্যপূর্ণ সংবিধিবদ্ধতায় ঘেরা থাকে, তার কাছে আমার কোন প্রত্যাশা নেই। এমনকি সেই সাহিত্য আমি চর্চা করছিও না। আমার সোজাসাপ্টা কথা, আমি গল্প বলতে ভালোবাসি, আমি গল্প বলি। আমি ওই বিশেষ, অভিজাত শ্রেণীর ‘সাহিত্য’ করছি না। আমি সাধারণ মানুষের জন্য গল্প বলছি। আমার এই গল্প যদি পাঠক শোনে, পড়ে, স্পর্শিত হয়, তাতেই আমার আনন্দ। এই আনন্দের জন্যই আমি গল্প বলি, বলে যেতে চাই। আপনারা বরং সাহিত্য চর্চা করুন। আর অভিজাত পাঠকদের সামনে অভিজাত ভাষা ও বর্ণনায়, অভিজাত আলোচনা সভায় অভিজাত সাহিত্য চর্চা করুন। আমি সাধারণ মানুষ। সেইসব অভিজাত সাহিত্যের খবর নেয়ার দুঃসাহস আমি কখনো দেখাতে যাবো না। কী দরকার ‘আদার বেপারী হয়ে জাহাজের খবর নেয়ার’!  জাগো নিউজ : সমকালীন কথাসাহিত্য নিয়ে আপনার ভাবনা কেমন? সাদাত হোসাইন : ফেসবুককে কেন্দ্র করে দুর্দান্ত একটি বিপ্লব হয়ে গেছে লেখালেখিতে। আমি ঠিক জানি না পৃথিবীর আর কোন দেশে লেখালেখিকে কেন্দ্র করে ফেসবুক এতো শক্তিশালী হয়ে উঠতে পেরেছে কি না! হ্যাঁ, এখানে আবারো সেই প্রশ্ন আসবে, এই ফেসবুকের লেখকরা সাহিত্যিক কি না? এই প্রশ্নের উত্তর কি হতে পারে, সেটি আমি আগেই দিয়েছি। আমার কথা, আমি আমার গল্পটা বলতে চাই, সেটি যদি অহিংসার বাণী ছড়ায়, ইতিবাচক সংবেদনশীলতা ছড়ায়, সঠিক ইতিহাস জানায়, মানুষের নিত্যদিনের সুখ, দুঃখের, আশার, স্বপ্নের, ভালো লাগার, ভালোবাসার অনুভূতিকে ছুঁয়ে দেয়, তাহলে সেই গল্প যত বেশি সম্ভব বলা দরকার। আমি ১০ বছর পরে একটি কালজয়ী সাহিত্য রচনা করব, এই আশায় আমি বসে রইলাম। তারপর দেখা গেল, ১০ বছর পর আমি যা লিখলাম, তা আসলে কালজয়ী তো দূরে থাক দিনজয়ী সাহিত্যও হয়ে ওঠেনি। তখন? সুতরাং কালজয়ের জন্য না লিখে নিজের গল্পটা বলতেই লেখা উচিত। সমকালীন লেখালেখির এই ভাবনার জায়গাটাতে আমার মনে হয় সম্ভাবনা অফুরন্ত, তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সেই সম্ভাবনাগুলোর যথাযথ পরিচর্যার, পরামর্শের এবং উৎসাহের অভাব। এখানে কেউ খানিক ভালো করলেই অন্যেরা তার পেছনে দা-কুড়াল নিয়ে লাগেন। এটি থেকে বেরিয়ে এসে বরং সম্ভাবনাময়দের সঠিক পরামর্শ, পরিচর্যা এবং উৎসাহ দেয়া দরকার। আর সমালোচনা করার ক্ষেত্রেও আক্রমণাত্মক না হয়ে সতর্ক হওয়া উচিত। যত্নবান হওয়া উচিত। যা একজন তরুণকে উৎসাহিত করবে, অনুৎসাহিত নয়। এই অনুশীলনটা শুরু হলেই এই সময়ের তরুণ লেখকদের একটা দুর্দান্ত উত্থান অবশ্যম্ভাবী বলেই আমি মনে করি।জাগো নিউজ : ‘আরশিনগর’ থেকে ‘মানবজনম’- পথচলার গল্পটা কেমন? সাদাত হোসাইন : আমি যে লেখক, এই বিষয়টিই আমি জানতাম না। ছোটবেলায় লেখালেখি করতাম। খুব আগ্রহ নিয়ে। কিন্তু কখনো লেখক হব এই ভাবনাটি মাথায় আসেনি। প্রথম একটি ছবির বই, তারপর একটি গল্পের বই, সেগুলোও এমনি এমনিই। কিন্তু এই বইগুলো লিখতে গিয়ে একদিন হুট করে মনে হয়, আমি সম্ভবত পাঠক কি পছন্দ করবে, সেটি ভেবে লিখছি। আমি কি লিখতে চাইছি সেটি ভেবে লিখছি না। প্রকাশক বলেন ৪-৫ ফর্মার বই লিখতে, যাতে দাম ১০০ টাকার মধ্যে থাকে, পাঠকের ক্রয়ক্ষমতা কম। এটা মাথায় রাখতে। আরো নানান ভাবনা। এইসময়ের ছেলেমেয়েরা কি পড়তে পছন্দ করে এইসব। কিন্তু এটি আমাকে খুব ভাবাতো। মনে হত, আমার তো আমার নিজের জন্য লেখা উচিত। নিজের অনুভূতির গল্প, ভাবনার গল্প। সেটি যতবড় হোক, যা-ই হোক। আগের বইদুটি লিখতে গিয়েই এই ভাবনা বা এই দ্বান্দ্বিকতাগুলো আমার মধ্যে কাজ করত। একটা যন্ত্রণাও। নিজেকে প্রকাশ করার যন্ত্রণা, নিজের গল্প ও অনুভূতি প্রকাশ করার যন্ত্রণা। একদিন মাঝরাতে ঘুম থেকে উঠে আমি লিখতে শুরু করলাম আরশিনগর। লিখছি, লিখছি, লিখছি। আর লিখতে লিখতেই কাঁদছি। চোখ বেয়ে পানি পড়ছে, আমি লিখছি। কিন্তু লেখা শেষ করে দেখি প্রায় ৩০০ পৃষ্ঠার বই হয়ে গেছে। এখন? এতো বড় বই তো আমার প্রকাশক ছাপবেন না। দাম হয়ে যাবে ৪০০ টাকার মত। এত টাকা দিয়ে আমার মত এক অজানা অচেনা লেখকের বই কে কিনবেন? শেষ অবধি বই বের হলো ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি বা শেষ দিকে। অল্প বিস্তর কিছু বিক্রিও হল। আমি মন খারাপ করে বসে রইলাম। কিন্তু চমকে যাওয়া ঘটনা ঘটল এরপর বছরজুড়ে। যেখানে বেশিরভাগ তরুণ লেখকদের বই বইমেলা শেষ হয়ে গেলে আর সেভাবে বিক্রি হয় না, পরের বইমেলা আসাতে না আসতেই আর পাঠকের আগ্রহ থাকে না। সেখানে আরশিনগর আমাকে এবং আমার প্রকাশককে চমকে দিল। পরের বইমেলা অবধি আরশিনগর দেখালো অদ্ভুত ঘটনা। গত এক বছর জুড়ে প্রতি মাসেই আগের মাসের চেয়ে বেশি বিক্রি হতে থাকল বইটি। এর কারণ, একজন নতুন লেখকের ৩০০ পৃষ্ঠার একটি বই পড়তে পাঠক সময় নিয়েছেন, কিন্তু যিনি পড়েছেন, তিনিই হয়তো তার অনুভূতি জানিয়েছেন অন্য পাঠককে। ফলে পাঠকের মুখ থেকে মুখে এটির প্রচার ছড়িয়েছে এবং সময় লেগেছে। তবে সময় যত গিয়েছে, তত এই প্রচার ছড়িয়েছে। শুধু তাই-ই নয়। তিন বছর পরও দেখা গেল, আরশিনগরের পাঠক চাহিদা কমেতো না-ই, বরং আগের চেয়ে বেড়েই চলেছে। এটি মূলত একটি স্বপ্নযাত্রার শুরু। আরশিনগরের পর লিখলাম অন্দরমহল। এটির বিষয়ে পাঠকই ভালো বলতে পারবেন। ১৮০০ শতাব্দীর আবহে এক জমিদার পরিবারের কল্পিত গল্প নিয়ে এই উপন্যাসের প্রতি পাঠকের আগ্রহ আমাকে হতভম্ব করে দিয়েছে। শুধু বাংলাদেশ নয়, কলকাতাতেও। তারপর মানবজনম। পাঠকই বলুক, মানবজনমের গল্প। জাগো নিউজ : বাংলা সাহিত্য নিয়ে আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী?সাদাত হোসাইন : কোন পরিকল্পনা নেই। স্রেফ গল্প বলতে চাই। আমার মাথাভর্তি গিজগিজ করছে অজস্র গল্প। আমার মনে হয় যত গল্প আমার বলার আছে, আমার হাতে তত বেশি সময় নেই। এজন্য যত বেশি সম্ভব আমি গল্প বলতে চাই। জাগো নিউজ : যেহেতু আপনি একজন চলচ্চিত্র নির্মাতা। সে হিসেবে শিল্প-সাহিত্যের কোন শাখা আপনাকে বেশি টানে? সাদাত হোসাইন : আমাকে গল্প বলার সব মাধ্যমই টানে। কিন্তু যেহেতু আমি অল্প আধটু সিনেমা নির্মাণ করতেও জানি, সুতরাং এই শাখায়ও আমি গল্প বলতে চাই। সম্প্রতি বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি আয়োজিত জাতীয় স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র উৎসবের শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্রকারের পুরস্কারটিও আমি পেয়েছি। এটি আমাকে সিনেমাতেও গল্প বলার ক্ষেত্রে খুব অনুপ্রাণিত করেছে। জাগো নিউজ : শিল্প-সাহিত্যের এ কণ্টকাকীর্ণ পথচলায় আপনার অনুপ্রেরণা-সাদাত হোসাইন : আমি বলি, আমার ফ্রাস্ট্রেশনই আমার ইন্সপায়ারেশন। আরেকটা বিষয়, সেটি হল, অনুভূতিপ্রবণতা, সংবেদনশীলতা। শিল্পী হতে গেলে এর কোন বিকল্প নেই। এর বাইরেও এই কণ্টকাকীর্ণ পথচলায় আমাকে আরেকটি জিনিস অনুপ্রেরণা দেয়, তা হলো, অন্যের অর্জনে আনন্দিত হবার ক্ষমতা। পরশ্রীকাতরতাহীনতা। অন্যের অর্জন আমাকে কখনও ঈর্ষান্বিত বা পরশ্রীকাতর করে না, বরং অনুপ্রাণিত করে। মনে হয়, চেষ্টা করলে আমিও পারব। সেই মুহূর্ত থেকে আমি আমার চেষ্টাটা বাড়াই। আমার মনে হয়, ইট হেল্পস মি আ লট।  জাগো নিউজ : প্রচারবিমুখ থেকে সাহিত্যচর্চার সার্থকতা কতটুকু? সাদাত হোসাইন : এটা একদমই ব্যক্তিগত ভাবনা। আমি প্রচারবিমুখ বলে জগতের সবাইকে প্রচারবিমুখ হতে হবে, আমি যদি এটা ভাবি, তাহলে সেটি বোকামি ছাড়া কিছুই নয়। আর আমি প্রচার পছন্দ করি বলে জগতের সকলে প্রচার পছন্দ করবেই, এমন নয়। তবে আমার একটা ব্যক্তিগত পর্যবেক্ষণ বা অভিজ্ঞতা রয়েছে। তাতে আমি শিল্প, সাহিত্য, সংস্কৃতিতে প্রচারবিমুখ কাউকে দেখিনি। সাহিত্য বা শিল্প যদি সৃষ্টি হয়, স্রষ্টা তার সেই সৃষ্টি দেখিয়ে আনন্দ পাবেন, সেটিই তো স্বাভাবিক! ধরুন আমি কোন উপন্যাস লিখছি, সেটি যদি আমি পাঠকের সামনে না-ই আনি, তাহলে কিন্তু সেটি আমার লেখার দরকার-ই নেই। বা লিখলেও বই ছাপানোর দরকার নেই। সেটি আমি রেখে দিতে পারি আমার মগজে, ভাবনায় বা পাণ্ডুলিপিতে। কিন্তু যেহেতু সেটি আমি ছাপাচ্ছি, বাজারে আনছি, সেহেতু আমি চাইছি বইটি কেউ পড়ুক। মানুষের মাঝে ছড়িয়ে যাক। সুতরাং প্রচারটা স্বাভাবিক। আরেকটি বিষয়, আপনার একটা ক্ষমতা আছে, লেখার ক্ষমতা। এটি বিশেষ কিছু। এটি পাঁচজনের ভাবনা, অনুভূতিতে আলোড়ন তৈরি করতে পারে। তাহলে এটা কিন্তু আপনার দায়ও যে এটিকে সেই পাঁচজনের কাছে পৌঁছে দেয়া। আমি এটাকে বলি স্রষ্টার প্রতি দায় শোধ। কারণ এই ক্ষমতাটা স্রষ্টা আর সবাইকে দেননি, যেহেতু আপনাকে দিয়েছেন, সুতরাং আপনার দায়িত্ব হচ্ছে এটি ছড়িয়ে দেয়া। আপনার কাছে আলোর মশাল আছে, অথচ আপনি বাইরে অসংখ্য মানুষ অন্ধকারে নিমজ্জিত রেখে আপনি আপনার সেই আলোর মশালটিকে দ্বাররুদ্ধ করে রাখলেন। এটি কোন কাজের কথা নয়। আর এখন বিজ্ঞাপনের, বিপণনের, বাজারের যুগ। সময় পাল্টেছে। এখানে প্রচার ছাড়া আপনি আপনার শিল্প, সাহিত্য এমনকি সংস্কৃতিকেও ছড়িয়ে দিতে পারবেন না। বরং প্রচারবিমুখতা আপনাকে বিস্মৃতিতে তলিয়ে দেবে। এর কারণ এই সময়। এখন এই সময়ের সঙ্গে আজ থেকে কুড়ি, চল্লিশ, একশ’ বা হাজার বছরের আগের চিন্তা করলে হবে না। খেয়াল করে দেখবেন, অতীতের যাদের উদহারণ টেনে বলবেন তারা প্রচারবিমুখ ছিলেন, তাদের সেই সময়ের ঘটনা ঘেঁটে দেখুন, তারাও সেই সময়ের, সেই পরিস্থিতির এবং সুযোগ-সুবিধানুসারে সম্ভাব্য সর্বোচ্চ প্রচারটাই করেছিলেন। এটাই বাস্তবতা। কেউ অস্বীকার করলে সেটি তার ব্যক্তিগত ভাবনা। জাগো নিউজ : আপনার বেস্টসেলার বই আপনাকে কেমন পুলকিত করে? সাদাত হোসাইন : পাঠক বই কিনছে, এটি যে কোন লেখককে শিহরিত করে। আমি বয়সে তরুণ। এটি আমার জন্য বিশাল প্রাপ্তি। আমি আল্লাহর কাছে কৃতজ্ঞ তিনি আমাকে এই প্রাপ্তি দিয়েছেন। এটি নিঃসন্দেহে আমাকে আনন্দিত করে। তবে সবচেয়ে বেশি যেটি করে সেটি হল অনুপ্রাণিত। প্রচণ্ড অনুপ্রেরণা পাই। যখন অটোগ্রাফের লম্বা লাইনে কিশোর তরুণ তরুণী থেকে শুরু করে আমার বাবার বয়সি, বা তার চেয়েও বেশি বয়সের কাউকে বই হাতে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখি, তখন বুকের ভেতরটা থরথর করে কেঁপে ওঠে। মনে হয় আমাকে মাটিতে থাকতে হবে। একদম মাটিতে। আমাকে হাঁটতে হবে চোখ নিচু করে। আমাকে কথা বলতে হবে শান্ত ও সহজ ভাষায়। আমাকে এই ভালোবাসার ঋণ শোধ করতে হবে। জাগো নিউজ : আপনার লেখালেখির সাফল্যে অন্যের ঈর্ষা আপনাকে বিব্রত করে কি?সাদাত হোসাইন : একদম না। তবে কষ্ট দেয়। সেটি এই কারণে যে যারা করেন, তারা আমার কাছে আসতে পারেন, তাদের যদি আমার লেখা ভালো না লাগে, সেটি বলতে পারেন। আমার ভুল-ত্রুটিগুলো শুধরে দিতে পারেন। কিন্তু তারা সেটি না করে পরচর্চায় মশগুল থাকেন। এটি আমাকে কষ্ট দেয়। জীবনে সময়ের চেয়ে মূল্যবান আর কী আছে? আমি যদি তাদের কারো কাছে গিয়ে বলি, আমাকে দশ লাখ টাকা দিবেন, এমনি এমনি? এই টাকা আমি আর আপনাদের কখনো ফেরত দিতে পারব না। তারা দেবেন? নিশ্চয়ই দিবেন না। অথচ কী অদ্ভুত! শুধু দশ লাখ না, শত সহস্র কোটি টাকার চেয়েও দামি একেকটা মুহূর্ত, অথচ সেই মহামূল্যবান সময়গুলো তারা কী অকাতরেই না আমার পেছনে সমালোচনা করে নষ্ট করছেন। এটা খুব অবাক লাগে আমার! কী দরকার? তারচেয়ে এই সময়ে তারা কিন্তু অন্য কোন সৃষ্টিতে মনোযোগী হতে পারতেন। সময়টা প্রডাক্টিভ কিছুতে কাজে লাগাতে পারতেন। তাই না? শুধু শুধু তাদের জীবনের মহামূল্যবান সময় নষ্ট করছেন তাদের দৃষ্টিতে ‘অগুরুত্বপূর্ণ’ একজন মানুষের পেছনে! কী অদ্ভুত দ্বান্দ্বিক আচরণ!আর, যখন এইসব কথা বা ঈর্ষা বা পরচর্চায় মন খারাপ হয়, কষ্ট হয়, তখন ওই যে অটোগ্রাফের লম্বা সারিতে দাঁড়িয়ে থাকা নানান বয়সের মানুষ, তাদের মুখের কথা, চোখের কথা, দৃষ্টির কথা ভাবি। ভেবে ভেবে আনন্দে ডুবে যাই। মনে হয়, এইসব ভালোবাসার কাছে জগতের আর সকল ঘৃণা, সকল ঈর্ষা, সকল পরশ্রীকাতরতা, সবকিছু তুচ্ছ। তুচ্ছাতিতুচ্ছ।জাগো নিউজ : কেউ কেউ বলছেন, এই সময়ের তরুণরা মানসম্পন্ন সাহিত্য লিখছেন না। এছাড়া আপনার বই পাঠকমহলে তুমুল জনপ্রিয় হলেও সমালোচকরা বলছেন ভিন্ন কথা। এটি আপনি কিভাবে দেখছেন? সাদাত হোসাইন : সমালোচকরা কি বলছেন তা নিয়ে আমি একদমই উদ্বিগ্ন নই। সমালোচকদের কাজই সমালোচনা করা। তারা করতে থাকুন। আর আমি লিখতে থাকি। আমি সাধারণ পাঠকের, সাধারণ মানুষের গল্পকার হতে চাই। অসাধারণ, অভিজাত পাঠকের অভিজাত সাহিত্যিক হতে চাই না। তারা যদি আমাকে গ্রহণ করেন তো ভালো, না করলেও ক্ষতি নেই। আমি বরং চাই একজন অতি সাধারণ মানুষ, যার হয়তো কেবল অক্ষরজ্ঞান আছে, তিনিও যেন আমার গল্প পড়ে সেই গল্পে নিজেকে খুঁজে পান। নিজের অনুভূতিকে স্পর্শ করতে পারেন। তার কোন একাকী সন্ধ্যা, বা মেঘলা বিকেলে, বা মন খারাপের রাত্তিরে তিনি যেন আমার লেখা পড়ে কেঁদে বুক ভাসান, বা বুকে জমা অসহ্য কষ্টগুলোকে হাওয়ায় ভাসিয়ে দিতে পারেন। হাসতে পারেন। আমি চাই কোন খুপড়ি ঘরেও আমার বই থাকুক। আমার বই পড়ে, পাঠোদ্ধার করতে যেন কাউকে বিশাল জ্ঞানী, আঁতেল, বা বুদ্ধিজীবী হতে না হয়। যেন কাউকে সাহিত্যের তুখোড় বোদ্ধা হতে না হয়। যেন একজন অতি সাধারণ মানুষও আমার গল্প বুঝতে পারে, আমি তা-ই চাই। কেবল বড় বড় অভিজাত লাইব্রেরি বা শুধু বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নয়, আমি সাধারণের গল্পকার হতে চাই। সুতরাং কোন সমালোচক আমার গল্পকে অ-গল্প বা অ-সাহিত্য বলল, সস্তা বলল, তা নিয়ে আমি মোটেই ভাবিত নই। কোন সমালোচক আমার লেখাকে অসাহিত্য বললে সেটি যেমন অসাহিত্য হয়ে যায় না, আবার আমি যদি কোন সমালোচকের সাহিত্যকে অ-সাহিত্য বলি, তাহলেও সেটি অ-সাহিত্য হয় না। কারণ সাহিত্যে ডিক্টেটরশিপের জায়গা নেই। সাহিত্য অবশ্যই ভাবনার বিকেন্দ্রীকরণের। এখানে ভাবনার অসংখ্য কেন্দ্র থাকবে। এখানে অমুক স্ট্যান্ডার্ড, তমুক স্ট্যান্ডার্ড এমন সেন্ট্রালাইজড ভাবনা বরং বিপজ্জনক।এসইউ/আরআইপি

Advertisement