ছুটির ঘণ্টা বাজলো। সময়মত ছাত্রছাত্রীরা স্কুল থেকে বের হয়ে যে যার বাড়িতে চলে গেল । কিন্তু একজন গেল না। অনেক খোঁজাখুঁজির পর তাকে অচেতন অবস্থায় পাওয়া গেল স্কুলের বাথরুমে। এই দুঃখজনক ঘটনাটি ঘটেছে সাতক্ষীরার কালীগঞ্জ উপজেলার দক্ষিণ শ্রীপুর ইউনিয়নের ফতেপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। গত বৃহস্পতিবার আড়াইটার দিকে স্কুল ছুটি হয়। স্বাভাবিক নিয়মেই স্কুলের ছাত্রছাত্রী ও শিক্ষকরা ছুটির পর যার যার বাড়িতে চলে যায়। স্কুল ছুটির মুহূর্তে ফতেপুর গ্রামের অরেবিন্দু দাসের ছেলে লিয়ন দাস (১১) ছিল বাথরুমে। ছুটির ঘণ্টার সঙ্গে সঙ্গে পিয়ন বিদ্যালয়ের দরজা জানালা বন্ধ করে দেন। এসময় বাথরুমে আটকা পড়ে যায় লিয়ন দাস। দুপুর থেকে সন্ধ্যা বিদ্যালয় ছুটির পর লিয়ন বাড়িতে না ফেরায় খোঁজাখুঁজি শুরু করে লিয়নের পরিবার। কোথাও খোঁজ মিলছিল না লিয়নের। পরিবারের লোকজন কান্নায় ভেঙে পড়েন। আত্মীয়-স্বজন বন্ধুদের কারো সঙ্গে নেই লিয়ন। অবশেষে রাত সাড়ে ১০টার দিকে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক গোলাম রব্বানীর কাছে গিয়ে হাজির হন লিয়নের পরিবার। পরে স্কুলেরে ভেতর বাথরুম থেকে লিয়নকে দীর্ঘ ৮ ঘণ্টা পর অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। এটা স্বস্তির বিষয় যে শেষ পর্যন্ত লিয়নকে খুঁজে পাওয়া গেছে এবং তার শারীরিক অবস্থায়ও এখন অনেকটাই ভাল। তবে এই ঘটনা বেশ কিছু বিষয় সামনে নিয়ে এসেছে। সেগুলো হচ্ছে একজন ছাত্রের প্রতি স্কুল কর্তৃপক্ষের দৃষ্টিভঙ্গি। ছুটির পর স্কুলে তালা লাগানো হবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু কেউ কোথায় আটকা পড়ে আছে কিনা সেটি ভালোভাবে দেখা করা উচিত ছিল। আটকা পড়া লিয়ন এ যাত্রায় প্রাণে বেঁচে গেছে। কিন্তু সে কী পরিমাণ ভয় পেয়েছে, তার ওপর দিয়ে আসলে কী বয়ে গেছে সেটি কি একবার ভাবা যায়! শিশুমনে যে আতঙ্ক দেখা দিল তার কী হবে? এই ট্রমা সারতে কদিন লাগবে কে জানে। এটা মনে রাখা প্রয়োজন, ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা এত বিচার বুদ্ধি রাখে না যে তারা নিজেদের নিরাপত্তা নিজেরাই নিশ্চিত করতে পারে। এজন্য দায়িত্বশীল হতে হবে স্কুল কর্তৃপক্ষকে। ছাত্রছাত্রীদেরও নিরাপত্তাসহ বিভিন্ন বিষয় সচেতন করে তুলতে হবে। অন্যপ্রতিষ্ঠানকেও এই ঘটনা থেকে শিক্ষা নিতে হবে। শিক্ষার মূলভিত্তি প্রাথমিক শিক্ষা। এখানে প্রতিটি পদক্ষেপেই যত্নশীল হতে হবে। যে জাতি শিশুদের পরিচর্যা করে না, তাদের আগামী দিনের যোগ্য নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে সচেষ্ট থাকে না সেই জাতির কাঙ্খিত উন্নতি কোনো দিনই সম্ভব নয়। শিশুদের প্রতি যেন কোনো অবস্থায়ই অবহেলা প্রদর্শন করা না হয় সেটি নিশ্চিত করতে হবে। লিয়নের আটকা পড়ার ব্যাপারে কারো কোনো গাফিলতি থাকলে সে ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে সবাইকে সচেতন ও দায়িত্বশীল হতে হবে। এইচআর/এমএস
Advertisement