সাতবছর বয়সী ছোট্ট শিশু তানহার চোখেমুখে রাজ্যের বিস্ময়। বিশ্ব মানচিত্রটি চক্রাকারে কয়েকবার ঘুরানোর পর নির্দিষ্ট একটি মহাদেশের ওপর হাতের আঙুল রাখছে সে। তার আঙুল রাখা ওই নির্দিষ্ট স্থানে স্পর্শ করে মহাদেশের নাম বলে দিচ্ছেন সামনে বসে থাকা মধ্যবয়সী এক ভদ্রলোক।তানহার বিস্ময়ের কারণ তার সামনে যিনি বসে আছেন তিনি দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী। দুচোখে একেবারেই দেখতে পান না। চোখে না দেখে স্পর্শ করে কীভাবে নির্ভুলভাবে মহাদেশের নাম বলে দিচ্ছেন তা শিশুটির চোখেমুখে বিস্ময়ের উদ্রেক করে। শুক্রবার সকালে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে জাগো নিউজের এ প্রতিবেদকের চোখে ধরা পড়ে এ দৃশ্য। ব্লাইন্ড এডুকেশন অ্যান্ড রিহ্যাবিলিটেশন ডেভেলপমেন্ট অরগানাইজেশন (বিইআরডিও) নামক একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের স্টলে বসে নিজ প্রতিষ্ঠানের পরিচিতি ও দৃষ্টি প্রতিবন্ধীরা কীভাবে পড়াশুনা করেন তার বর্ণনা দিচ্ছিলেন তিনি। তার নাম শের আলী। গ্রামের বাড়ি মানিকগঞ্জের সিঙ্গাইরে। তিনি বিইআরডিও নামক প্রতিষ্ঠানটিতে শিক্ষকতা করেন। তিনি জানান, তাদের প্রতিষ্ঠানটি মিরপুর রূপনগরে অবস্থিত। এ প্রতিষ্ঠানটি সম্পূর্ণ বিনামূল্যে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের শিক্ষাদানের সুযোগ প্রদান করে থাকে। দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের জন্য এখানে বিনা খরচে থাকা ও খাওয়ারও সুব্যবস্থা রয়েছে। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটিতে ৩০ জন দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী পড়াশুনা করছে। তাদের কার্যক্রম সম্পর্কে সাধারণ মানুষকে জানাতে বাংলা একাডেমির বইমেলায় স্টল নিয়েছেন। প্রতিষ্ঠানটির আয়ের উৎস সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, অনেক বিত্তবান মানুষের সার্বিক অনুদানে প্রতিষ্ঠানটি পরিচালিত হয়।শের আলী জানান, সাধারণ মানুষ চোখে দেখে পড়লেও দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীরা ব্রেইল (স্পর্শ ) পদ্ধতিতে শিক্ষাগ্রহণ করে থাকেন। প্রতিষ্ঠানটির স্টলে শের আলীর সামনে সত্যজিত রায়ের ‘বাদশাহী আংটি’ নামক একটি বই রাখা ছিল। বইটির পাতা উল্টিয়ে তিনি পড়তে শুরু করেন। সাধারণ দৃষ্টিতে কিছু ডট ডট ফোটা ছাড়া সব কিছু সাদা খাতার পাতা বলে মনে হবে। কিন্তু এখানেই ব্রেইল পদ্ধতিতে বিভিন্ন অক্ষর লেখা রয়েছে বলে জানান তিনি। অঙ্ক কীভাবে করেন জানতে চাইলে তিনি কিছু লোহার টুকরো দেখিয়ে জানান, এখানে এক থেকে দশ পর্যন্ত অক্ষর রয়েছে। একই লোহার টুকরোকে সোজাভাবে ধরলে এক অক্ষর আবার উল্টো করে ধরলে আরেক অক্ষর বোঝায়। তিনি জানান, দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীরা অন্যের সাহায্য নিয়ে খাতায় লিখে বোর্ড পরীক্ষা দেয়। এসএসসি পরীক্ষার সময় অষ্টম শ্রেণির ও এইচএসসির সময় দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী তার বদলে খাতায় লিখে। দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী প্রশ্ন দেখে বলে আর তা শুনে সহায়তাকারী খাতায় লিখে। শের আলী বলেন, ‘চোখে দেখতে না পারলেও তারা (দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীরা) মনের চোখ দিয়ে দেখেন।,এমইউ/জেডএ/এমএস
Advertisement