১৯৯৬ সালের শেয়ার কেলেঙ্কারির ঘটনায় দায়ের করা মামলাগুলোর মধ্যে ৮টি মামলা পুনরুজ্জীবিত করার উদ্যোগ নিচ্ছে এ সংক্রান্ত বিশেষ ট্রাইব্যুনাল। মামলাগুলো কী অবস্থায় আছে তা জানতে চেয়ে ইতোমধ্যে হাইকোর্ট বিভাগের রেজিস্ট্রার বরাবর চিঠি দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ট্রাইব্যুনাল।মামলাগুলো হলো- দোহা সিকিউরিটিজ, অলিম্পিক ইন্ডাস্ট্রিজ ও সিকিউরিটিজ কনসালটেন্টস লিমিটেড, এইচএমএমএস ফিন্যান্সিয়াল কনসালটেন্সি অ্যান্ড সিকিউরিটিজ, ফার্স্ট ক্যাপিটাল সিকিউরিটিজ, ইমতিয়াজ হোসেন অ্যান্ড কোং, আমান সী ফুডস ইন্ডাস্ট্রিজ এবং এপেক্স ফুডসের শেয়ার কেলেঙ্কারি সংক্রান্ত।বর্তমান ক্ষমতাসীন সরকার ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় আসার চার মাসের মধ্যে শেয়ারবাজারে ভয়াবহ কেলেঙ্কারির ঘটনা ঘটে। এক শ্রেণির অসাধু চক্র ওই সময় কৃত্রিমভাবে শেয়ারের দাম বাড়িয়ে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের শত শত কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়। সর্বস্ব হারান হাজারো ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারী। অভিযোগ ওঠে ওই শেয়ার কেলেঙ্কারির অসাধু চক্রের সঙ্গে উল্লেখিত ৮টি প্রতিষ্ঠানের কর্ণধররা জাড়িত। এর পরিপ্রেক্ষিতে ১৯৯৯ সালে প্রতিষ্ঠানগুলোসহ কারসাজির সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য আমিরুল ইসলাম চৌধুরীর নেতৃত্বে গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের ওপর ভিত্তি করে মামলাগুলো করা হয়। শেয়ারবাজার সংক্রান্ত মামলা নিষ্পত্তিতে বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠনের পর ২০১৫ ও ২০১৬ সালে মামলাগুলো দায়রা জজ আদালত থেকে ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তরিত হয়। এরমধ্যে ট্রাইব্যুনালে সর্বশেষ স্থান্তরিত মামলাটি হলো সিকিউরিটিজ কনসালটেন্টস লিমিটেড সংক্রান্ত। প্রতিষ্ঠানটিসহ এ মামলার আসামিরা হলেন- এম জে আজম চৌধুরী, শহীদুল্লাহ এবং প্রফেসর মাহবুব আহমেদ। ২০১৪ সাল থেকে মামলাটির বিচারকাজ স্থগিত রয়েছে। ইমতিয়াজ হোসেন অ্যান্ড কোং মামলাটি স্থগিত রয়েছে ২০১১ সাল থেকে। প্রতিষ্ঠানসহ এ মামলার আসামি এর মালিক ইমতিয়াজ হোসেন। ইমতিয়াজ হোসেন মারা যাওয়ার কারণে ২০১০ সালে তার পক্ষে মামলাটি খারিজ করার আবেদন করা হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে আদালত মামলাটি স্থগিত করে। পরবর্তিতে ২০১৫ সালে মামলাটি দায়রা জজ আদালত থেকে বিশেষ ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তরিত হয়। এইচএমএমএস ফিন্যান্সিয়াল কনসালটেন্সি অ্যান্ড সিকিউরিটিজের শেয়ার কেলেঙ্কারির মামলায় প্রতিষ্ঠানটিসহ আসামির তালিকায় রয়েছেন- ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) ট্রেকহোল্ডর শরিফ আতাউর রহমান, আহমেদ ইকবাল হাসান, মোস্তাক আহমেদ সাদেক, হেমায়েত উদ্দিন আহমেদ এবং সৈয়দ মাহবুব মুর্শেদ। ২০০৫ সাল থেকে স্থগিত মামলাটি দায়রা জজ আদালত থেকে ২০১৫ সালে বিশেষ ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তরিত হয়। ফার্স্ট ক্যাপিটাল সিকিউরিটিজের শেয়ার কেলেঙ্কারির মামলাটি ২০১৫ সালে দায়রা জজ আদালত থেকে বিশেষ ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তরিত হয়। প্রতিষ্ঠানটিসহ মামলার আসামিরা হলেন- রিজওয়ান বিন ফারুক ও এমকেএম মহিউদ্দিন। দোহা সিকিউরিটিজের শেয়ার কেলেঙ্কারির মামলার আসামির তালিকায় রয়েছে প্রতিষ্ঠানটি এবং এর মালিক একেএম শামসুদ্দোহা। ২০০৩ সাল থেকে স্থগিত মামলাটি ২০১৫ সালে দায়রা জজ আদালত থেকে বিশেষ ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তরিত হয়েছে। অলিম্পিক ইন্ডাস্ট্রিজের শেয়ার কেলেঙ্কারির মামলার আসামির তালিকায় প্রতিষ্ঠানটিসহ রয়েছেন এর পরিচালক মোহাম্মদ ভাই এবং আজিজ মোহাম্মদ ভাই। ২০১৩ সাল থেকে স্থগিত মামলাটি বিশেষ ট্রাইবুন্যালে স্থানান্তরিত হয়েছে ২০১৫ সালে। আমান সী ফুডস ইন্ডাষ্ট্রিজ ও এপেক্স ফুডস মামলায় আসামির তালিকায় রয়েছেন জাফর আহমেদ ও জহুর আহমেদ। জাফর আহমেদ প্রতিষ্ঠান দুটির চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) এবং জহুর আহমেদ ভাইস চেয়ারম্যান ও উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক। ২০১৫ সাল থেকে স্থগিত থাকা মামলা দুটি একই বছরে বিশেষ ট্রাইবুন্যালে স্থানান্তরিত হয়। ট্রাইবুন্যালের একটি সূত্র জানিয়েছে, বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠনের পর ১৯৯৬ সালের শেয়ার কেলেঙ্কারি নিয়ে ১৩টি মামলা এসেছে। এরমধ্যে একটির রায় হয়েছে, দুটি বাতিল হয়েছে এবং দুটি বিচারাধীন রয়েছে। আর বাকি ৮টি মামলা চালু করতে কার্যকরী ভূমিকা রাখতে পারেনি মামলার বাদি বিএসইসি। মামলাগুলোর সর্বশেষ অবস্থা জানতে ট্রাইবুন্যাল নির্দেশ দিলেও বাদীপক্ষ কিছুই জানাতে পারেনি। যে কারণে ওই ৮টি মামলা পুনরুজ্জীবিত করতে ট্রাইব্যুনাল নিজেই উদ্যোগ নিয়েছে।যোগাযোগ করা হলে বিএসইসির প্যানেল আইনজীবী মাসুদ রানা খান জাগো নিউজকে বলেন, হাইকোর্ট বিভাগের রেজিস্ট্রারকে চিঠি দেয়া হবে কি না সেটি ট্রাইবুন্যালের বিষয়। তবে মামলাগুলো চালু করতে অ্যাটর্নি জেনারেল, হাইকোর্ট বিভাগের রেজিস্ট্রার এবং সংশ্লিষ্ট আইনজীবীদের সঙ্গে নিয়মিতভাবে যোগাযোগ করা হচ্ছে। বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র সাইফুর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ট্রাইবুন্যাল নিজ উদ্যোগে মামলাগুলো সচল করতে হাইকোর্ট বিভাগে চিঠি দিলে দিতে পারে। এটি ট্রাইবুন্যালের ব্যাপার, এ বিষয়ে আমাদের কিছু জানা নেই। তবে মামলাগুলো সচল করতে আমাদের পক্ষ থেকে প্রচেষ্টার কোনো ঘাটতি নেই। আমরা উদ্যোগ নিচ্ছি না এমন অভিযোগ সঠিক না। আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই আমরা প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।এমএএস/এনএফ/পিআর
Advertisement