অর্থনীতি

মুরগির দাম পাগলা ঘোড়া

মাংস ব্যবসায়ীদের ডাকা ধর্মঘটের কারণে রাজধানীর বাজারগুলোতে গরু ও ছাগলের মাংস পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে বেড়ে গেছে ফার্মের মুরগির চাহিদা। যার সুযোগ নিচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। সপ্তাহের ব্যবধানে ব্রয়লার মুরগির দাম বেড়েছে কেজিতে ২০ থেকে ৩০ টাকা। আর ডিম পাড়া কক মুরগির দাম বেড়েছে কেজিতে ১৫ টাকার উপরে। অতিরিক্ত খাজনা আদায় ও চাঁদাবাজি বন্ধসহ চার দফা দাবিতে সোমবার থেকে রাজধানীর মাংস ব্যবসায়ীরা গরু-ছাগলের মাংস বিক্রি বন্ধ রেখেছেন। মাংস ব্যবসায়ী সমিতির তথ্য অনুযায়ী, মাংস বিক্রির জন্য ঢাকা মহানগরে প্রতিদিন প্রায় আড়াই হাজার গরু-মহিষ এবং প্রায় পাঁচ হাজার ছাগল জবাই করা হয়। মাংস বিক্রি বন্ধ রাখায় বিপাকে পড়েছেন রাজধানীবাসী। বিশেষ করে যারা মাংস ফ্রিজে মজুদ রাখেন না তারা বেশি বিপাকে পড়েছেন। মেহমান আপ্যায়নে পড়ছেন বিড়ম্বনায়। আর যাদের বাসায় মেয়ে জামাই বা মেয়ের শশুরবাড়ির আত্মীয় আসছেন তারা পড়ছেন বিব্রতকর পরিস্থিতিতে। এক প্রকার বাধ্য হয়েই ব্রয়লার অথবা কক মুরগি দিয়ে ঘরোয়া অনুষ্ঠানের আয়োজন করতে হচ্ছে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই বেড়ে গেছে ফার্মের মুরগির চাহিদা, যার সুযোগ নিয়ে ফার্মের মুরগির দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।বৃহস্পতিবার রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা যায়, গরু-ছাগলের মাংস বিক্রির দোকান খালি পড়ে আছে। কোন কোন মাংস ব্যবসায়ী দোকানে বসে খোশগল্প করে সময় কাটাচ্ছেন। আবার কোথাও কোথাও দোকানের মধ্যে মাংস ব্যবসায়ীরা বসিয়েছেন তাসের আড্ডা। এমনই এক তাসের আড্ডা দেখা যায় ধলপুর বাজারে। যেখানে পাশাপাশি ৫টি মাংসের দোকান রয়েছে, যার সবকটিতে বিক্রি বন্ধ। তবে দুটি দোকানের মধ্যে জড়ো হয়ে তাস খেলতে দেখা যায় মাংস ব্যবসায়ীদের। তাসের আড্ডার মধ্যেই কথা হয় মাংস ব্যবসায়ী আলামিনের সঙ্গে। তিনি বলেন, কসাইরা ধর্মঘট ডেকেছেন তাই মাংস বিক্রি বন্ধ। গত রোববার থেকেই মাংস বিক্রি বন্ধ রয়েছে। আগামী সোমবারের আগে গরু-খাসির মাংস বিক্রি করা হবে না। এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, আমরা আমাদের দাবি আদায়ে নেতাদের নির্দেশ অনুযায়ী মাংস বিক্রি বন্ধ রেখেছি। যাদের বাসায় মেহমান আসবে তারা মুরগির মাংস দিয়ে আপ্যায়ন করবেন। মুরগির মাংস বিক্রিতে নিষেধ নেই। যাত্রাবাড়ীর বাসিন্দা আমেনা বেগম বলেন, গতকাল (বুধবার) বাসায় মেয়ে-জামাইসহ ছোট নাতি-নাতনি এসেছে। জামাই ও নাতি-নাতনিরা গরুর মাংস খেতে ভালোবাসে। কিন্তু পরপর দুইদিন বাজারে গিয়ে কোন গরুর মাংস পাইনি। দোকানদাররা বলছেন মাংস বিক্রি বন্ধ। ফলে বাধ্য হয়ে ফার্মের মুরগি দিয়ে মেয়ে-জামাইকে আপ্যায়ন করতে হচ্ছে। রামপুরার বাসিন্দা আনোয়ার হোসেন বলেন, শুক্রবার বাসার সবাই মিলে একটু ভালো-মন্দ খাই। তাই প্রতি বৃহস্পতিবার ব্রয়লার মুরগি কিনি, কারণ শুক্রবার দাম একটু বেশি থাকে। গত সপ্তাহে বৃহস্পতিবার ব্রয়লার মুরগি কিনেছিলাম ১৩০ টাকা কেজি দরে। আজ তা বেড়ে হয়েছে ১৬০ টাকা। এক সপ্তাহের ব্যবধানে দাম বেড়েছে ৩০ টাকা। কারণ জানতে চাইলে দোকানদাররা বলেন, গরু-খাসির মাংস বিক্রি বন্ধ তাই দাম একটু বেশি। এদিকে যাত্রাবাড়ী, মানিকনগর, রামপুরা বাজারে ফার্মের মুরগি ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত সপ্তাহের বুধ-বৃহস্পতিবার ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হয়েছে ১২৫ টাকা থেকে ১৩০ টাকা কেজি দরে। ডিম পাড়া লাল কক মুরগি বিক্রি হয়েছে ১৬০ থেকে ১৬৫ টাকা কেজি দরে। বৃহস্পতিবার ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ১৫৫ থেকে ১৬০ টাকা এবং কক মুরগি ১৭৫ টাকা থেকে ১৮০ টাকা কেজি দরে। সপ্তাহের ব্যবধানে দাম এতো বাড়ার কারণ কি জানতে চাইলে যাত্রাবাড়ী বাজারের ব্যবসায়ী আমিনুর হোসেন বলেন, মঙ্গলবার থেকে মুরগি বেশি দামে কিনে আনতে হচ্ছে, তাই বিক্রিও করতে হচ্ছে বেশি দামে। মূলত গরু-খাসির মাংস বিক্রি বন্ধ থাকার কারণেই দাম বেড়েছে। আমাদের ধারণা গরু-খাসির মাংস বিক্রি শুরু হলে দাম আবার কমে যাবে। গত ১২ ফেব্রুয়ারি ৬ দিনের ধর্মঘটের ডাক দিয়ে মাংস ব্যবসায়ী সমিতির মহাসচিব রবিউল ইসলাম অভিযোগ করেন, গাবতলী গরুর হাটের ইজারাদাররা সরকারি নির্দেশনা উপেক্ষা করে ইচ্ছামতো খাজনা আদায় করছেন। সরকার গরুপ্রতি ৫০ টাকা ও মহিষপ্রতি ৭০ টাকা ইজারা নির্ধারণ করলেও ইজারাদারা তা মানছেন না। ইজারাদাররা কখনও ৫ হাজার টাকা, ২ হাজার টাকা আবার ২০০ টাকাও নেন। এ বিষয়ে সিটি কর্পোরেশনে চার থেকে পাঁচশ’অভিযোগ করা হয়েছে। কিন্তু সিটি কর্পোরেশন সমাধানের কোনো উদ্যোগ নেয়নি। এমএএস/ওআর/পিআর

Advertisement