দিনাজপুরের খানসামার কাচিনিয়া বাজারে উত্তরাঞ্চলের সবচেয়ে বড় রসুনের হাট বসছে । গত কয়েক দশক ধরে এই রসুনের হাটটি বসছে। দিন যত যাচ্ছে এর পরিচিতি ততই বাড়ছে। এলাকার মানুষের মতে রাস্তার দু ধারে প্রায় ১০ কিলোমিটার লস্বা এই রসুনের হাটটি সপ্তাহের শুক্রবার ও মঙ্গলবার ফজর থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত চলছে রসুনের হাট।রাজধানীসহ দেশের, রাজশাহী, রংপুর, বগুড়া, লালমনি হাট, গাইবন্ধা, ঠাকুরগাঁও, পঞ্চগড়, নীলফামারী ও সিরাজগঞ্জ, চট্রগ্রাম,সিলেটসহ বিভিন্ন এলাকার রসুন ব্যবসায়ীরা কাচিনীহাটের রসুনের মেলায় রসুন কিনতে আসে।দিনাজপুর জেলার খানসামা উপজেলায় গত কয়েক দশক ধরে রসুন চাষ হচ্ছে ব্যাপক হারে। এ ধারাবাহিকতায় প্রতি বছরের ন্যায় এবারও প্রচুর পরিমাণে রসুন চাষ হয়েছে এই উপজেলায়। রসুনের এই ভোরা মৌসুমে প্রতি বছরের ন্যায় এবারো কাচিনিয়া হাটে রসুন বেচা কেনার হাট বসে। এই হাটটিকে কেউ কেউ রসুনের মেলা বলে থাকে। কেননা রসুন তোলা থেকে শুরু করে রসুনের বীজ বপন করার সময় পর্যন্ত রসুন চাষের এলাকার এ হাটটিতে প্রচুর পরিমাণে রসুন বেচাকেনা হয়ে থাকে। পাশাপাশি উপজেলার বৃহত্তম ব্যবসা কেন্দ্র পাকেরহাটেও রসুন বেচাকেনা চলে।বাংলাদেশে রসুন চাষে উল্লেখযোগ্য স্থানগুলোর অন্যতম হলো খানসামা উপজেলার ভাবকী ইউনিয়নের গারপাড়া, রামনগর, গুলিয়াড়া, কাচিনিয়া, দেউলগাঁও এবং মারগাঁও সহ বেশ কিছু এলাকায় প্রচুর পরিমাণে রসুন চাষ হয়।উপজেলায় কৃষি অফিস সূত্র জানায়, এ বছর রসুন চাষের লক্ষমাত্রা ৪৫০ হেক্টর জমিতে নির্ধারণ করা হলেও এবার লক্ষ মাত্রার দ্বিগুন রসুন চাষ হয়েছে ৮৯০ হেক্টর জমিতে।শীতের শুরুতে এবং মাঝ খানে কিছু কিছু রসুনক্ষেত কৃমি ও কোল্ড ইনজুড়িতে আক্রান্ত হলেও নানা ওষুধ প্রয়োগে শেষ পর্যন্ত এসব রসুনক্ষেত রক্ষা হয় এবং রসুনের বাম্পার ফলন হযেছে। বর্তমানে রসুনের দাম কম থাকায় শুকনা অবস্থায় প্রতি কেজি ৩০ টাকা করে ১২`শ টাকা প্রতি মণ রসুন বিক্রি হচ্ছে।হাসিমপুর গ্রামের রসুন চাষী মহির উদ্দিন, গোয়ালডিহি গ্রামের বাবলু রহমান ও নেছারুল ইসলাম, গারপাড়া গ্রামের আবুল কালাম এবং রামনগর গ্রামের দেল্লু রহমানের সাথে কথা হলে তারা বলেন, এ বছর বীজ রসুনের বাজার মূল্য বেশি হওয়ায় প্রতি একর জমিতে বীজ, সার, বপন, হাল চাষ, নিড়ানী ও অন্যান্য খরচ হয়েছে প্রায় ৬০ হাজার টাকা। যা বিগত বছরগুলোর চেয়ে প্রায় দেড়গুণ বেশি। কিন্তু ফলনও ভালো হওয়ায় তা পুষিয়ে গেছে। প্রতি একর জমিতে রসুন উৎপাদন হয়েছে কমপক্ষে ৮০ মণ। যার বর্তমান বাজার মূল্য ৯৬ হাচার টাকা। একরে ৬০ হাজার টাকা খরচ হলেও কৃষকের লাভ হয়েছে ৩৬ হাজার টাকা। ফলে কৃষকেরা রসুন চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছে । সে কারণে প্রতি বছর এই উপজেলায় রসুন চাষ প্রতিবছর বৃদ্ধি পাচ্ছে।কথা হয় সিলেট থেকে আসা রসুন ব্যবসায়ী আমানুল্লাহ এবং সিরাজগঞ্জ থেকে আসা জাকির হোসেনের সাথে। তারা জানায় প্রতি বছর রসুনের এই মৌসুমে তারা রসুন কেনার জন্য কাচিনিয়া বাজারে আসে। তারা শুধু উত্তরাঞ্চল নয় দেশের কোথাও রসুনের এত বড় বাজার দেখেননি। খানসামা উপজেলার রসুনের মান ভাল ও দাম কম হওয়ায় তারা প্রতি বছর রসুন কিনতে এখানে আসে । তাছাড়াও এখানে চাঁদাবাজ নেই। তারা স্বাচ্ছন্দে রসুন কিনতে পারেন।এমজেড/পিআর
Advertisement