মতামত

বন্ধ হোক শিশুহত্যা

আবারো শিশুহত্যা। আবারো নির্মমতা। অমানবিকতা। এবার চাঁপাইনবাবগঞ্জে  সুমাইয়া খাতুন (৭) ও মেহজাবিন আক্তার (৬) নামে দুই শিশুর লাশ পাওয়া গেল। স্কুল থেকে বাড়ি ফিরে বাইরে খেলতে গিয়ে নিখোঁজ হয় তারা। এর দুদিন পর  মঙ্গলবার প্রতিবেশী এক ব্যক্তির বাড়ির শোবার ঘরে খাটের নিচে বস্তাবন্দী অবস্থায় তাদের লাশ পাওয়া গেছে। এ ঘটনা চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহরের নামোশংকরবাটীর ভবানীপুর-ফতেপুর মহল্লার। সুমাইয়া ভবানীপুর-ফতেপুর মহল্লার মিলন রানার মেয়ে ও পৌর এলাকার ছোটমণি বিদ্যানিকেতনের প্রথম শ্রেণির শিক্ষার্থী। সহপাঠী মেহজাবিন প্রতিবেশী আবদুল মালেকের মেয়ে। রোববার বেলা ১১টার দিকে স্কুল থেকে বাড়ি ফিরে বাইরে খেলতে যায় তারা। পরে আর বাড়ি ফেরেনি। নিখোঁজ শিশু দুটির সঙ্গে থাকা স্বর্ণালংকারের লোভে এমন ঘটনা ঘটানো হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। এই ঘটনায় মামলা হয়েছে। এখন দেখার পালা অপরাধীর কি শাস্তি হয়। শিশুহত্যার বিষয়ে আমরা পূর্বেও এই সম্পাদকীয় স্তম্ভে উদ্বেগ প্রকাশ করেছি। শিশুহত্যা তো বন্ধ হচ্ছেই না  বরং ক্রমাগত যেন তা বেড়েই চলেছে। এভাবে চলতে থাকলে পরিস্থিতি যে কোথায় গিয়ে ঠেকবে তা কি ভেবে দেখেছেন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। এ ব্যাপারে এখনই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার কোনো বিকল্প নেই। দুই শিশুর লাশ উদ্ধারের ঘটনা সমাজের অন্ধকার দিকটিকেই তুলে ধরছে। সামাজিক অবক্ষয় এমন এক পর্যায়ে চলে গেছে যে, সামান্য র্স্বণালঙ্কারের লোভেও শিশুর জীবন কেড়ে নেয়া হচ্ছে।এই অবস্থার উত্তরণ অত্যন্ত জরুরি।  সাম্প্রতিক শিশু হত্যার প্রেক্ষাপটে অপরাধ বিজ্ঞানীরা বলছেন, এটি অপরাধীদের এক ধরনের মানসিক বিকৃতির লক্ষণ। পাশাপাশি শিশুদের পরিবার বা পিতামাতাকে মানসিকভাবে চিরদিনের জন্য দুর্বল করে দেয়ার কৌশলও এটি। এছাড়া সমাজব্যবস্থায় পরিবর্তন আসছে। মানুষের সক্ষমতা বাড়ছে। একটি সমাজ যখন উন্নত সামাজিক ব্যবস্থার দিকে প্রবেশ করতে থাকে, তখন সমাজে বেশকিছু বিষয়ে পরিবর্তন আসতে থাকে। তার মধ্যে অন্যতম মানুষের আর্থিক সক্ষমতা। মানুষ আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হচ্ছে। চাহিদা আরও বাড়ছে। পরিবর্তিত সমাজব্যবস্থায় যারা পিছিয়ে থাকে তাদের মধ্যে জেদ, মন কষাকষি, ক্ষোভ, না পাওয়ার আকুতি, আফসোসসহ নানা ধরনের মানসিক সমস্যা দেখা দেয়। এতে করে তারা নানা অপরাধকর্মে জড়িয়ে পড়ে।অপরাধের কারণগুলো চিহ্নিত করে তার প্রতিকারের ব্যবস্থা করতে হবে। সমাজে শিশুহত্যা চলতে থাকলে সামাজিক শৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা রক্ষা করা কঠিন হয়ে পড়বে। যে সমাজে শিশুরা নির্ভয়ে, নির্বিঘ্নে বেড়ে উঠতে পারে না-সেই সমাজের উন্নয়ন, অগ্রগতি আশা করাও বৃথা। আর কেবল দালান, কোঠা, রাস্তাঘাটের উন্নতি করলেই চলবে না মানসিক বিকাশ না ঘটলে মানবিকতারও উন্মেষ ঘটবে না। সংস্কৃতিবিমুখ, মূল্যবোধহীন একটি সমাজব্যবস্থায় কোনো কিছুই আশা করা যায় না। লোভ-লালনা, প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তির বিষয় যখন বড় হয়ে ওঠে তখনই মানবিকতা লোপ পায়। অপরাধ দমনে অপরাধীর শাস্তির পাশাপাশি এমন একটি সমাজ তথা রাষ্ট্রব্যবস্থা কায়েম করতে হবে যেখানে বৈষম্যহীনভাবে সবাই যার যার  অধিকার ভোগ করতে পারে। বিশেষ করে শিশুর বাসযোগ্য একটি সমাজ প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এ ব্যাপারে সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা নিয়ে এগুনোর কোনো বিকল্প নেই।এইচআর/আরআইপি

Advertisement