জাতীয়

নতুন কৌশলে আসছে স্বর্ণ

স্বর্ণ চোরাচালানে নতুন কৌশল হাতে নিয়েছেন চোরাকারবারীরা। বেশির ভাগ সময়ই দুবাই ও সিঙ্গাপুর থেকে স্বর্ণ আসলেও এবার জোন পরিবর্তন করে হংকং থেকে ভুয়া ঠিকানায় আসছে স্বর্ণের চালান। এছাড়া চোরাকারবারীরা সুন্দরী নারী ও সময়ের ক্ষেত্রে গভীর রাতকে এ কাজের উপযুক্ত বলে বেছে নিচ্ছেন। সম্প্রতি কয়েকটি ছোট-বড় স্বর্ণের চালান আটকের পর শুল্ক বিভাগ ও শুল্ক গোয়েন্দা বিভাগ সূত্রে এমনই তথ্য মিলেছে।জানা গেছে, হযরত শাহজালাল (রহ.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর দিয়ে ভুয়া ঠিকানায় আসছে স্বর্ণের চালান। তবে চোরাকারবারীরা আগেই সমন্বয় করে থাকেন যে কখন কোথায় কিভাবে স্বর্ণের চালান পাঠানো হবে। এ কারণে চালান যদি ধরাও পড়ে তাহলে ঠিকানা ভুয়ার কারণে তারা থেকে যাচ্ছেন ধরা ছোঁয়ার বাইরে।অপরদিকে, গোয়েন্দা বিভাগের নজরদারি এড়াতে সময় হিসেবে বেছে নেয়া হচ্ছে গভীর রাতকে। এসময় কৌশলে শুল্ক বিভাগ ও শুল্ক গোয়েন্দা বিভাগের নজরদারি এড়িয়ে পার হচ্ছে স্বর্ণের চালান।গোয়েন্দা বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, সম্প্রতি স্বর্ণের চালান পার করতে সুন্দরী নারীদের ব্যবহার করা হচ্ছে। দেখতে স্মার্ট, পরনে জিন্স প্যান্ট ও স্টাইলিস্ট জ্যাকেট রয়েছে এমন নারীদের ব্যবহার করা হচ্ছে এ ক্ষেত্রে।গত মঙ্গলবার শাহজালাল বিমানবন্দরে হেঁটে গ্রিন চ্যানেল পার হওয়ার সময় মাহমুদা হোসাইন (পাসপোর্ট নম্বর- এএ ০০৮৯৩৭৫) নামে এক সুন্দরী নারীকে সন্দেহবশত: চ্যালেঞ্জ করে শুল্ক গোয়েন্দা সদস্যরা। পরে তার জুতার ভেতরে বিশেষ কৌশলে লুকানো ১ কোটি ২২ লাখ টাকা মূল্যের ৪টি স্বর্ণের বার উদ্ধার করা হয়। যার ওজন ২ কেজি ৪৪ গ্রাম। পরে তাকে আটক করে মামলা দিয়ে পাঠানো হয় থানা হেফাজতে। সেখান থেকে ডিবিতে।নতুন আরেকটি কৌশল হচ্ছে, বিমানবন্দরের কয়েকটি গেইট দিয়ে একই সঙ্গে কয়েকটি চালান পার করানোর চেষ্টা। একটি চালান আটক হলেও যেন আরও দুটি চালান নির্বিঘ্নে পার হয় সেই কৌশল নিয়েছেন কারাবারীরা। একদিকে আটকের খবরে গোয়েন্দা বিভাগের এক কেন্দ্রীক নিরাপত্তা ও তল্লাশি জোরদার হলে কৌশলে অন্য গেইট দিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছেন চোরাকারবারীরা।গত মঙ্গলবার যখন সুন্দরী ওই নারীকে আটক করা হয় তখন বিমানবন্দর থেকে বিপুল পরিমাণ স্মার্ট ফোনও জব্দ হয়। এসব ফোনের বাজারমূল্য ১০ লাখ টাকা। যুক্তরাষ্ট্র থেকে আসা ডিএইচএল কুরিয়ার সার্ভিসের একটি পার্সেল থেকে ফোনগুলো উদ্ধার করা হয়। দেওয়ান আসাদুজ্জামান নামে এক ব্যক্তি যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফোনগুলো পাঠিয়েছেন। প্রাপকের ঠিকানায় লেখা দেওয়ান কায়সার জামিল।ঠিকানা দেয়া হয়েছে, উত্তরার ১১ নম্বর সেক্টরের ১৯ নম্বর সড়কের ১৫ নম্বর বাসা। তবে সংশ্লিষ্ট ঠিকানায় প্রাপক কায়সার জামিলের অস্তিত্ব মেলে নি।সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে হংকং থেকে আসা একটি কার্গো বিমানের (সিএক্স ৪৯) আনা কাঠের বাক্স থেকে ১২ কেজি ওজনের একটি স্বর্ণের চালান আটক করে শুল্ক গোয়েন্দা সদস্যরা। এর আনুমানিক বাজার মূল্য ৬ কোটি টাকা।এ ব্যাপারে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতারের মহাপরিচালক ড. মইনুল খান জানান, হংকং থেকে আসা ক্যাথি প্যাসিফিক এয়ারওয়েজের কার্গো বিমান থেকে স্বর্ণের বার উদ্ধার করা হয়। গুলশানে জারা ইন্টারন্যাশনাল নামে একটি প্রতিষ্ঠানের ঠিকানায় এ মালামাল পাঠিয়েছে হংকংয়ের গ্লোবাল ইন্টারন্যাশনাল নামের একটি প্রতিষ্ঠান। তবে গুলশানে খোঁজ নিয়ে জারা ইন্টারন্যাশনাল নামে কোনো প্রতিষ্ঠানের অস্তিত্ব খুঁজে পায় নি শুল্ক গোয়েন্দা সদস্যরা। এ থেকে ধারণা করা হচ্ছে ভুয়া ঠিকানা দিয়ে বেশ কয়েক মাস ধরে স্বর্ণ পাচার করছে আসছে একটি চক্র।তিনি আরও বলেন, কার্গো বিমানটিও শাহজালালে এসেছে কৌশলে। প্রথমে সিঙ্গাপুর এরপর হংকং। হংকং থেকে বাংলাদেশে পৌছায় কার্গো বিমানটি। কিছুদিন আগেও একই কায়দায় শাহজালাল বিমানবন্দরে আসা ৪৩ কেজি ও ১২ কেটি ওজনের দুটি স্বর্ণের চালান জব্দ করা হয়।তিনি বলেন, ভুয়া ঠিকানায় স্বর্ণের চালানটি আসলেও প্রেরক পাঠিয়েছে কমার্সিয়াল হলোগ্রামে। সুতরাং তদন্ত ও নজরদারি অব্যাহত থাকলে এধরণের স্বর্ণের চালান ও জড়িত সংশ্লিষ্টদের আটক করা সম্ভব বলেও উল্লেখ করেন তিনি।জেইউ/এএইচ/পিআর

Advertisement