দেশজুড়ে

নরসিংদীতে বিষমুক্ত বেগুন চাষে আগ্রহী কৃষকরা

নরসিংদীতে বিষমুক্ত বারি বিটি জাতের বেগুন চাষে সফলতা পেয়েছে চাষিরা। ফলন ভালো এবং কীটনাশক না লাগায় বারি বিটি জাতের বেগুন চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছেন তারা।প্রচলিত বেগুন চাষে ফল ও ডগা ছিদ্রকারী পোকা দমনে সপ্তাহে দুই থেকে তিনবার কীটনাশক প্রয়োগ করতে হয় চাষিদের। কীটনাশক প্রয়োগের কারণে কৃষকদের শারীরিক ও অর্থনৈতিক ক্ষতির পাশাপাশি পরিবেশেরও ভারসাম্য নষ্ট হয়। কিন্তু জিন প্রকৌশল পদ্ধতিতে উদ্ভাবিত বারি বিটি জাতের বেগুন ফল ও ডগা ছিদ্রকারী পোকার আক্রমণ প্রতিরোধী হওয়ায় কীটনাশক ব্যবহার করতে হয় না।এই মৌসুমে নরসিংদীতে বারি বিটি জাতের বেগুন চাষে সফলতা পেয়েছে চাষিরা। গবেষণাগারে পরীক্ষার পর মাঠ পর্যায়ে দেশে এই প্রথম এ জাতের আবাদ শুরু হয়েছে। ফলন ভালো হওয়ায় ও কীটনাশকের খরচ না হওয়ায় বারি বিটি জাতের বেগুন চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছেন কৃষকরা।নরসিংদীর শিবপুরের বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের সরেজমিন গবেষণা বিভাগের উদ্যোগে উপজেলার চারটি প্লটে বারি বিটি জাতের বেগুনের আবাদ করেছে চাষিরা। প্লটগুলোতে বারি বিটি বেগুন-৩ নয়নতারা ও বারি বিটি বেগুন-৪ কাজলা আবাদ করা হয়।বৈলাব গ্রামের কৃষক ইব্রাহিম মিয়া ১০ শতাংশ জমিতে বারি বিটি জাতের বেগুন চাষ করেছেন। জমিতে গিয়ে দেখা যায়, প্রতিটি গাছে গাছে ঝুলছে বেগুন। গাছের সরু ডালে বেশি বেগুন ধরায় ভেঙে পড়ার উপক্রম হয়েছে। বাঁশের কঞ্চি দিয়ে গাছগুলোকে বেঁধে রাখা হয়েছে।কৃষক ইব্রাহিম জানান, তিন বছর ধরে তিনি বেগুন চাষ করছেন। অন্যান্য বছর ফল ও ডগা ছিদ্রকারী পোকা এবং সাদা পোকার জন্য সপ্তাহে পাঁচ দিন কীটনাশক প্রয়োগ করতেন। এ বছর বারি বিটি জাতের বেগুন চাষ করার পর ফল ও ডগা ছিদ্রকারী পোকার জন্য কোনো কীটনাশকের প্রয়োজন হয়নি। এমনকি সাদা পোকা দমনে মাত্র তিনবার কীটনাশক প্রয়োগ করেছেন।তিনি বলেন, `গত বছর বেগুন চাষ কইর্যা বিষের পিছনে লাইগ্যা থাকতে হইছে কিন্তু এবার জমিতে বিষ না লাগায় সময় বেঁচেছে। তিন মাসে জমি থেকে প্রায় ৮০ মণ বেগুন ৩০ হাজার টাকায় বিক্রি করছি। আশা করছি সব মিলাইয়্যা পুরো মৌসুমে ৬০ হাজার টাকার মতো বিক্রি হবে।`এদিকে ফলন ভালো হওয়ায় ও কীটনাশকের খরচ বাঁচায় বারি বিটি জাতের বেগুন চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছে স্থানীয় কৃষকরা। কৃষক কাদির মিয়া বলেন, গত বছর এককানি জমিতে বেগুন চাষ করে শুধু বিষই দিয়েছি ৭০ হাজার টাকার। তাই তেমন লাভ না হওয়ায় এ বছর বেগুন চাষ করিনি। বিষের টাকা বাঁচাতে আগামী বছর বারি বিটি বেগুনের আবাদ করবেন বলে তিনি জানান।বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট সূত্রে জানা যায়, বেগুন চাষে ৩০ থেকে ৭০ ভাগ ক্ষতি হয় শুধু ডগা ও ফল ছিদ্রকারী পোকার কারণে। কীটনাশক প্রয়োগ করেও পোকা দমন না হওয়ায় কৃষকরা আশানুরূপ ফলন থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট ২০০৫ সালে আমেরিকার কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয়ে বিজ্ঞানীদের সহযোগিতায় বিটি বেগুন আবিষ্কার করেন, যা ফল ও ডগা ছিদ্রকারী পোকার আক্রমণ প্রতিরোধী। ফল ও ডগা ছিদ্রকারী পোকা বেগুন গাছে ও ফলে আক্রমণ করলে পোকার শ্বাসনালি আক্রান্ত হয়ে মারা যায়। তবে এই সবজি মানবদেহের ক্ষতি করে না, যা অনেক পরীক্ষা-নিরীক্ষায়ও প্রমাণিত হয়েছে। বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের শিবপুর সরেজমিন গবেষণা বিভাগের ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. আসাদুজ্জামান বলেন, দীর্ঘ ৯ বছর গবেষণার পর জিন প্রকৌশল পদ্ধতির মাধ্যমে এ পর্যন্ত বিটি বেগুনের চারটি জাত অবমুক্ত করা হয়েছে। আরো পাঁচটি অবমুক্তের অপেক্ষায়। ইতিমধ্যে কৃষকরা বারি বিটি জাতের বেগুন চাষে সফলতা পাওয়ায় স্থানীয় কৃষকদের মধ্যে এ জাতের বেগুন চাষে আগ্রহ বেড়েছে।এমজেড/আরআইপি 

Advertisement