ব্যাংক আওয়ার শেষ তাতে কি। ব্যাংকের জমাকৃত টাকা রাত-দিন যখন প্রয়োজন উঠানোর জন্য অটোমেটেড মেশিন বা এটিএম ব্যবহার করে মানুষ টাকা উত্তোলন করে। কিন্তু এটিএম কার্ডের মাধ্যমে পানি প্রাপ্তি ভাবাই কঠিন।এ বিষয়টি ছিল অনেকের অজানা। সেই অজানা কাজটি এখন সম্পন্ন হয়েছে দাকোপের চালনা পৌরসভায়। পৌরবাসীর সুপেয় পানির অভাব দূর করার জন্য ওয়াটার এইডের কারিগরি সহায়তায় এইচএসবিসি ব্যাংকের সিএসআর (কর্পোরেট সামাজিক দায়বদ্ধতা) ফান্ড থেকে উন্নয়ন সংস্থা রূপান্তর রিভার্স অসমোসিস প্লান্টটি তৈরি করেছে। প্লান্ট স্থাপনের জন্য ২৫ লাখ এবং প্লান্টের গৃহনির্মাণের জন্য ৬ লাখ মোট ৩১ লাখ টাকা ব্যয় হয়েছে। চালনা পৌরসভা কর্তৃপক্ষ ভবনটি তৈরির টাকা দিয়েছে। বাকি অর্থ রূপান্তরের মাধ্যমে দিয়েছে এইচএসবিসি ব্যাংক। এখন পৌরবাসী মাত্র ৪০ পয়সা লিটার দামে বিশুদ্ধ পানি পান করতে পারছেন। জানা যায়, এই প্লান্ট ছাড়াও রূপান্তর দাকোপ উপজেলাতে আরও ৫টি পানির প্লান্ট স্থাপন করা হয়েছে। যেখান থেকে হাজার হাজার মানুষ সুপেয় পানি পান করার সুযোগ পাচ্ছে।সেই আবাদ মহল থেকে উপকূলের এই দাকোপবাসীর প্রথম এবং প্রধান সমস্যা ছিল সুপেয় পানির। তারপর সিডর, আইলার মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ এ এলাকার মিষ্টি পানি প্রাপ্তির প্রাকৃতিক উৎস্যগুলোকে একেবারে নষ্ট করে দেয়।সরেজমিনে চালনা পৌরসভার ওয়াটার এটিএম বুথটি পরিদর্শনকালে কথা হয় কাঠমিস্ত্রি গোপল বিশ্বাসের সঙ্গে। তিনি বলেন, এটিএম কার্ডের মাধ্যমে যখন তখন পানি সংগ্রহ করতে পারছি। এটা আমাদের জন্য কত উপকার হয়েছে তা বলে বুঝাতে পারবো না। পানি আছে কিন্তু সুপেয় পানির খুব অভাব। এখন থেকে সুপেয় পানি পান করতে পারবো। স্কুলছাত্র বাঁধন মন্ডল ও সাক্ষর সাহা জানায়, ২০০ টাকা দিয়ে কার্ড করেছি। পড়ার ফাঁকে প্লান্ট থেকে বিশুদ্ধ পানি সংগ্রহ করে নিয়ে মাকে সাহায্য করি। এখন থেকে বিশুদ্ধ খাবার পানি পাব এটা আমাদের সৌভাগ্য। শিউলী মেডিকেল হলের মালিক মামুনুর রশীদ বলেন, মাত্র ৪০ পয়সায় ১লিটার মিনারেল ওয়াটার পাচ্ছি, এটা কল্পনা করা যায় না। বিশুদ্ধ পানির অভাবে পৌরবাসী পূর্বে নানা পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত হয়েছেন। এই বিশুদ্ধ পানি পান করলে পানিবাহিত রোগ হবে না। পরিদর্শনকালে দেখা যায়, ১০লিটার ১৫ লিটার এবং ৩০ লিটারের ৩টি পয়েন্টে পানি পাওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে। যে যতটা নিতে চান তাকে সেই বুথের সুইচ চেপে কার্ড পাঞ্চ করতে হবে।ওয়াটার এটিএম বুথের কেয়ারটেকার মো. আমিরুল শেখ জানান, পানি নেয়ার জন্য খুব সকালে এবং বিকালে ভিড় একটু বেশি হয়। ইতোমধ্যে কার্ড সংগ্রহ করেছেন শতাধিক গ্রাহক। ৬০০ গ্রাহককে কার্ড দেয়া হবে। তিনি আরও জানান, কার্ড দিয়ে কীভাবে পানি সংগ্রহ করতে হয় তা গ্রাহকদের শিখিযে দেয়া হচ্ছে। একবার দেখলে পরে তার আর সমস্যা হচ্ছে না।এটিএম ওয়াটার প্লান্ট সম্পর্কে রূপান্তরের প্রকল্প ব্যবস্থাপক (পিএম) মো. জাহিদুর রহমান রহমান বলেন, কার্ডটি এটিএম বুথের নির্দিষ্ট স্থানে স্পর্শ করলে ব্যালান্স জানা যাবে।এরপর গ্রাহক নির্দিষ্ট বোতাম চাপলে পানি পড়বে। নিচের নির্দিষ্ট স্থানে পাত্র রাখলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে পানি পড়ে পাত্র ভরে যাবে পরে এমনিতেই মেশিন বন্ধ হবে। রূপান্তর কর্তৃপক্ষ বলেন, প্লান্টটি রূপান্তর স্থাপন করেছে কিন্তু এটি পরিচালনার সার্বিক দায়িত্ব পৌর কর্তৃপক্ষের হাতে হস্তান্তর করা হয়েছে। এর পরিচালনার এখন সকল দায়িত্ব পৌর কর্তৃপক্ষের। কার্ডের মাধ্যমে যে অর্থ সংগ্রহ হচ্ছে তা দৈনিক ব্যাংকে জমা হচ্ছে। এই অর্থ প্লান্টটি রক্ষণাবেক্ষণ এবং সংস্কারের কাজে ব্যায় করা হবে। পৌর কর্তৃপক্ষ পরিবার যাচাই-বাছাই করে নির্ধারণ করবেন কোন পরিবারকে কতটুকু পানি সরবরাহ করা যাবে। আলমগীর হান্নান/এএম/আরআইপি
Advertisement