স্বীকৃতি মানুষকে সম্মানীত করে, অনুপ্রাণিত করে, উদ্যমী করে তোলে। সেই ভাবনা থেকেই যুগে যুগে দেশে দেশে গুণী মানুষদের রাষ্ট্রীয়ভাবে নানা স্বীকৃতির প্রথা চলে আসছে। বাংলাদেশেও বেশ কিছু রাষ্ট্রীয় পদক আছে নানা অঙ্গনের মানুষদের সম্মান জানাতে। তারমধ্যে অন্যতম একটি একুশে পদক। প্রতিবারের ন্যায় এবারেও ঘোষিত হয়েছে একুশে পদক জয়ীদের নাম। এবছর রোববার (১২ ফেব্রুয়ারি) সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয় সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে ১৭ জন ব্যক্তির একুশে পদক প্রদানের সরকারী সিদ্ধান্তের তথ্য জানানো হয়। ২০ ফেব্রুয়ারি ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আনুষ্ঠানিকভাবে একুশে পদক দেবেন।ঘোষিত হয়েছে শিল্পকলায় এবারে পদক পেতে যাচ্ছেন সিলেটের প্রবীণ লোকসংগীত শিল্পী সুষমা দাস। তার আগে একই বিভাগে একুশ পদক লাভ করেন সুষমার অনুজ পণ্ডিত রাম কানাই দাশ। রামকানাই ২০১৪ সালে একুশে পদক পান। দুই ভাই বোনের একুশে পদক পাওয়ার ঘটনা বিরল! সুষমা দাস ১ মে ১৯৩০ (১৩৩৬ বাংলা) সালে সুনামগঞ্জ জেলার শাল্লা থানার পুটকা গ্রামে স্বনামধন্য সংগীত পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেন। তার পিতা রসিক লাল দাশ ও মা দিব্যময়ি দাশ। বাবা-মা দুজনই গান লিখতেন এবং গাইতেন। তিনি বাবা-মার সাথে মাত্র ৭ বছর বয়সে ছোট বেলা থেকেই ধামাইল এবং বাউল গান করতেন।১৩৫২ সালে শাল্লা থানার চাকুয়া গ্রামে তার বিয়ে হয় প্রাণনাথ দাসের সাথে। বিয়ের পর গ্রামীণ মেয়েলী আসরে ধামাইল, কবি গান ও বাউল গানের পাশাপাশি হরি জাগরণের গান, গোপিনী কীর্তন, বিয়ের গান সহ ভাটি অঞ্চলে প্রচলিত লোকজ ধারার সকল অঙ্গের গান গেয়ে এলাকায় একজন নন্দিত শিল্পী হিসাবে খ্যাতি অর্জন করেন তিনি। জীবনের দীর্ঘকাল নিজ গ্রামেই কেটেছে সুষমা দাসের।১৯৭২ সালে ছোটভাই পণ্ডিত রামকানাই দাশ এই গুণী সংগীতশিল্পীকে সিলেটে নিয়ে আসেন। ভাইয়ের অনুপ্রেরণায় তিনি সিলেট বেতারে অডিশন দেন এবং নিয়মিত সংগীতশিল্পী হিসেবে লোকসংগীত পরিবেশন করেন। পাশাপাশি বিভিন্ন অনুষ্ঠান মঞ্চে গান করারও সুযোগ সৃষ্টি হয় তার। বর্ষবরণ, বসন্ত উৎসবসহ বৃহত্তর সিলেটের বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি অনুষ্ঠানে সংগীত পরিবেশন করেন তিনি। বাংলাদেশ বেতারে তিনি প্রায় সহস্রাধিক গান পরিবেশন করেন।জাতীয় রবীন্দ্র সংগীত সম্মিলন পরিষদের সভাপতি বেগম সুফিয়া কামালের আমন্ত্রণে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমিতে জাতীয় রবীন্দ্র সম্মেলনের অষ্টম বার্ষিক অনুষ্ঠান মালায় লোকগীতি অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করে রাধারমণের গান পরিবেশন করেন সুষমা দাস।ঢাকার শিল্পকলা কর্তৃক আয়োজিত ‘লোকসংগীত উৎসব’ অনুষ্ঠানটি উদ্বোধন করেন তিনি এবং ২০১১ সালের ১৬ মার্চ ছায়ানট কর্তৃক আয়োজিত ওয়াহিদুল হক স্মারক ‘দেশঘরের গান’ অনুষ্ঠানটি উদ্বোধন ছাড়াও অনুষ্ঠানে তিনি পিতা রসিক লাল দাশ ও রাধারমণ দত্তের গান পরিবেশন করেন।সুষমা দাস রাধা-রমন দত্তের গান, বাউল শাহ আবদুল করিমের গান, কালাশাহ, দুর্বিন শাহ, গীতিকবি গিয়াস উদ্দিন আহমদ, হাসন রাজাসহ বহু মরমী কবি ও সাধকের গান গেয়ে থাকেন।চার পুত্র ও এক কন্যার জননী সুষমা। বর্তমানে তিনি সিলেট নগরীর আখালিয়া হালদার পাড়া, মজুমদারপল্লী, ১০নং ভাড়া বাসায় বসবাস করেন।অপরদিকে, সুষমার ভাই রামকানাই দাশের জন্ম ১৯৩৫ সালের ১৫ এপ্রিল। একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় বিভিন্ন শরণার্থী শিবিরে গান গেয়ে সবার মনোবল সমুন্নত রাখার কাজ করেছেন রামকানাই দাশ। ২০১৪ সালে একুশে পদক পাওয়া পণ্ডিত রামকানাই দাশ একই বছরের ৫ সেপ্টেম্বর মৃত্যুবরণ করেন।একই পরিবারে দুই একুশে পদক জয়ীকে পেয়ে গর্বিত সিলেটবাসী। নানা সাংস্কৃতিক সংগঠণ থেকে চলছে সুষমা ও তার ভাই রামকানাইকে মরনোত্তর সংবর্ধনার নানা প্রস্তুতি। এলএ
Advertisement