খেলাধুলা

রোববার পড়ন্ত বিকেলে হঠাৎ বদলে গেছে উইকেট!

হায়দরাবাদ টেস্টে কী হবে? কি করবে মুশফিকের দল? ম্যাচ বাঁচাতে পারবেন টাইগাররা? শেষ দিন ৭ উইকেট হাতে রেখে পুরো ৯০ ওভার কাটিয়ে দেয়া সম্ভব হবে? নানা কৌতূহলি প্রশ্ন। জল্পনা-কল্পনার ফানুস আকাশে। চতুর্থ দিন শেষে খেলার যা অবস্থা, তাতে অতি বড় বাংলাদেশ সমর্থকও জয়ের কথা ভাবছেন না। ক্রিকেটীয় বোধ-বুদ্ধি এবং যুক্তিতে জয়ের চিন্তা আসার কথাও না। কারণ বাংলাদেশকে ভারত যে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছে, সেটা ইস্পাতের মতো কঠিন। হিমালয় সমান উচ্চতার। টাইগারদের সামনে টার্গেট ৪৫৯।  টেস্ট ক্রিকেটের ১৪০ বছরের দীর্ঘ ইতিহাসে চতুর্থ ইনিংসে এতো রানের টার্গেট সামনে রেখে জিতেনি কোনো দল। টেস্টে চতুর্থ ইনিংসে সবচেয়ে বেশি রান তাড়া করে জয়ের রেকর্ডটি ওয়েস্ট ইন্ডিজের। ২০০৩ সালে সেন্ট জোন্সে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ৪১৮ রানের টার্গেট ছুঁয়ে ফেলে বিশ্বরেকর্ড গড়ে ক্যারিবীয়রা। এর আগে ও পরে চতুর্থ ইনিংসে আরও বেশি রান কেরার রেকর্ড আছে বেশ কিছু। কিন্তু ওই সব ক্ষেত্রে চতুর্থ ইনিংসে ব্যাট করে জেতার রেকর্ড নেই কারোই। তার চেয়ে বড় কথা- আগামীকাল শেষ দিন মুশফিক বাহিনীকে জিততে হলে করতে হবে ৩৫৬ রান। হাতে আছে ৭ উইকেট। এ রকম কঠিন সমীকরণ সামনে রেখে ড্র’ই হতে পারে সর্বোত্তম ফল। তাই বাংলাদেশ ভক্ত ও সমর্থকরা এক বুক আশা নিয়ে ড্রয়ের অপেক্ষায়। বলার অপেক্ষা রাখে না মুশফিকের দলও নিশ্চয়ই পরাজয় এড়ানোর চেষ্টাই করবে।কিন্তু সে কাজটিও কি সহজ হবে? নাহ, কোনোভাবেই সহজ নয়। জয়ের আশা থাকুক বা না-ই থাকুক; ব্যাটসম্যানরা জয়ের কথা ভেবে রানের পেছনে না দৌড়ালেও পঞ্চম বা শেষ দিন উইকেটে দাঁড়িয়ে থাকাও কঠিন। এদিকে আজ শেষ বিকেলে আরও একটি চিন্তার আলামত মিলেছে। আগের তিন দিনের মতো হায়দরাবাদের রাজীব গান্ধী স্টেডিয়ামের পিচ আজও প্রায় সারা বেলাই ছিল ব্যাটিং বান্ধব। কিন্তু শেষ আধ ঘণ্টায় তা স্পিনারদের দিকে ঝুঁকতে শুরু করেছে। পিচের চরিত্র খুব যে পাল্টেছে; তা নয়। যে উইকেটে সাকিব, মিরাজ, তাইজুল, অশ্বিন ও রবীন্দ্র জাদেজাদের মতো কোয়ালিটি স্পিনারকেও বল ঘুরাতে ঘাম ঝরাতে হয়েছে, রোববার পড়ন্ত বিকেলে সেই পিচে বল ঘুরতে শুরু করেছে। বোলারদের বুটের স্পাইকে যে ক্ষতগুলো হয়েছে, তাতে পড়ে কিছু ডেলিভারি স্বাভাবিকের চেয়ে একটু বেশি বিপজ্জনকভাবে লাফিয়েও উঠছে। সেই আচমকা লাফিয়ে ওঠা ডেলিভারি কেড়ে নিয়েছে মুমিনুল হকের সম্ভাবনাময় ইনিংসকে। অফস্পিনার রবিচন্দ্রন অশ্বিনের তেমনই এক ডেলিভারিতে অফস্টাম্পের বাইরে পরাস্ত মুমিনুল হক ক্যাচ দিয়ে ফিরেছেন স্লিপে। পড়ন্ত বিকেলে স্পিনারদের বল যখন সাপের মতো ঘুরছিল, তখন চোখ চিকচিক করছিল ভারত অধিনায়ক বিরাট কোহলির। তার চোখ-মুখ বলে দিচ্ছিল, ভেতরে সৃষ্টি সুখের উল্লাস। কারণ বিরাট কোহলি জেনে-বুঝেই বাংলাদেশকে ফলোঅনে না পাঠিয়ে নিজেরা দ্বিতীয়বার ব্যাটিংয়ে নেমে পড়েন। সেটা মুলত দুটি চিন্তায়। এক বোলারদের খানিক বিশ্রাম দেয়া। আর মূল হলো আরও বেশি সময় ব্যাটিং করে উইকেটে আরও বেশি ক্ষত তৈরি করা। সেই লক্ষ্য পূরণ হয়েছে। রোববার শেষ ঘণ্টায় স্পিনাররা বাড়তি টার্ন পেয়েছেন। আজ বাংলাদেশের যে তিন উইকেটের পতন ঘটেছে, তার সবগুলোই জমা পড়েছে দুই স্পিনার অশ্বিন (দুটি) ও জাদেজার পকেটে (একটি)। ধরেই নেয়া যায় সোমবার (পঞ্চম দিন) অশ্বিন ও রবীন্দ্র জাদেজার বল লাটিমের মতো ঘুরবে। তাই বলেই দেয়া যায়, প্রথম ইনিংসে যেমন বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের সাথে মূল লড়াই হয়েছে তিন ভারতীয় পেসার ভুবনেশ্বর, উমেশ যাদব ও ইশান্ত শর্মার মধ্যে। আর এবার শেষ ইনিংসে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের সামনে বাধা দুই ভারতীয় স্পিনার রবিচন্দন অশ্বিন ও রবীন্দ্র জাদেজা। মাহমুদউল্লাহ, সাকিব, মুশফিক, সাব্বির ও মিরাজরা ওই স্পিন আক্রমণ সামলাতে পারলেই কেবল বাংলাদেশের পক্ষে ম্যাচ বাঁচানো সম্ভব।  এনইউ/জেআইএম

Advertisement