এবার বাংলাদেশের কেতন উড়ছে মহাকাশে। দেশের প্রথম নিজস্ব ক্ষুদ্রাকৃতির কৃত্রিম উপগ্রহ (ন্যানো স্যাটেলাইট) ‘ব্র্যাক অন্বেষা’ মহাকাশে উৎক্ষেপণের জন্য প্রস্তুত। ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যোগে বাংলাদেশের তিন শিক্ষার্থী তৈরি করেছেন বাংলাদেশের প্রথম এই ন্যানো স্যাটেলাইট ‘ব্র্যাক অন্বেষা’। যেটি আগামী মে মাস থেকে মহাকাশে ঘুরে বেড়াবে। দেশের প্রথম এই ন্যানো স্যাটেলাইট তৈরি করা দলের নাম ‘সেঞ্চুরিয়ানস’। সেই গর্বিত দলের তিন সদস্য হলেন- জাপানের কিউশু ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজিতে (কিউটেক) অধ্যয়নরত রায়হানা শামস ইসলাম অন্তরা, আবদুল্লা হিল কাফি ও মায়সূন ইবনে মনোয়ার। ২০১৫ সালে তারা ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ইলেকট্রিকাল অ্যান্ড ইলেক্ট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং ডিপার্টমেন্ট থেকে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করে উচ্চ শিক্ষার জন্য পাড়ি জমিয়েছেন জাপানে।দেশের প্রথম ন্যানো স্যাটেলাইট তৈরি করা ‘সেঞ্চুরিয়ানস’ দল জাপান থেকে ফেসবুকের মাধ্যমে স্যাটেলাইট সম্পর্কে জানাচ্ছেন জাগো নিউজকে। আলাপচারিতার চুম্বক অংশ তুলে ধরছেন মাহবুবর রহমান সুমনজাগো নিউজ : প্রথমে আপনাদের কাজ করার শুরুর গল্প শুনতে চাই-সেঞ্চুরিয়ানস : ২০১১ সালের কথা, তখন আমরা সবে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষে পড়াশোনা শুরু করেছি। সেই সময় আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি দল যুক্তরাষ্ট্রে নাসার লুনাবোটিকস মাইনিং (খনন করতে পারে এমন রোবট তৈরি) প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়। বড়দের এই সাফল্য আমাদের মন ছুঁয়ে যায়। এছাড়া আগে থেকেই আমাদের আগ্রহ ছিল রোবটবিজ্ঞানে। তারপর আমরা যুক্ত হই বিশ্ববিদ্যালয়ের রোবটিক্স ক্লাবে। ক্লাবে যোগ দেয়ার আগে আমাদের একসঙ্গে কাজ করা হয়নি। এরপর থেকেই তিনজনের একসঙ্গে পথচলা শুরু। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক রোবট প্রতিযোগিতাগুলোয় আমরা দল হিসেবে অংশ নিতাম। একসঙ্গে চলতে চলতে আমরা ‘সেঞ্চুরিয়ানস’ হিসেবে পরিচিতি পাই।জাগো নিউজ : ন্যানো স্যাটেলাইট সম্পর্কে জানলেন কীভাবে?সেঞ্চুরিয়ানস : ২০১৩ সালের আগস্ট মাসে আরিফ স্যার আমাদের ইউনিভার্সিটিতে আসেন। স্যারের সেমিনারে প্রথম ন্যানো স্যাটেলাইট সম্পর্কে জানতে পারি। ওইদিন আরিফ স্যার চলে যাওয়ার পর আমরা আমাদের সুপারভাইজার খলিল স্যারকে আমাদের আগ্রহের কথা জানাই। এরপর স্যারদের চেষ্টায় মায়সূন আর কাফি মিলে কিউটেকে যায় ইন্টার্নশিপের জন্য আর অন্তরা যায় কানসাট লিডারশিপ ট্রেনিং প্রোগ্রামে। এর পরেই আমাদের আত্মবিশ্বাস দৃঢ় হয় এবং আমরা মাস্টার্স করতে জাপানে আসি।জাগো নিউজ : বাংলাদেশের প্রথম স্বপ্নের ন্যানো স্যাটেলাইট মহাকাশে উড়াতে যাচ্ছেন- কেমন লাগছে আপনাদের?সেঞ্চুরিয়ানস : সব জায়গা থেকে এত প্রশংসা পাচ্ছি যে প্রশংসা পেতে পেতে অনুভূতি প্রকাশের ভাষা হারিয়ে ফেলেছি।জাগো নিউজ : আপনাদের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী?সেঞ্চুরিয়ানস : আমরা জাপানে এসে স্যাটেলাইটের ব্যাপারে বিস্তারিত শিখেছি। তারপরই এই ন্যানো স্যাটেলাইটটি তৈরি করেছি। এখন আমরা চাই- দেশে ফিরে আরেকটি স্যাটেলাইট তৈরি করতে। আমাদের দেশে এসব ব্যাপারে অনেক ছেলেমেয়ে আগ্রহী। তাদেরকে সঙ্গে নিয়ে আমরা এই কাজ করতে চাই।জাগো নিউজ : বাংলাদেশে তো ন্যানো স্যাটেলাইট তৈরির মত ল্যাব বা সুযোগ-সুবিধা নেই-সেঞ্চুরিয়ানস : হ্যাঁ, আমাদের দেশে স্যাটেলাইট তৈরির জন্য যেমন ল্যাব সুযোগ-সুবিধা দরকার তেমন ল্যাব নেই। এছাড়া ন্যানো স্যাটেলাইটটি ওড়ানোর আগে বেশকিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষার প্রয়োজন হয়। আমাদের দেশে আপাতত এমন কোন সুযোগ-সুবিধা নেই। তবে আমাদের সবার যেটা আছে সেটা হল শেখার আগ্রহ। আমরা অনেক ছোট ভাইবোনদের ফোন পাই যারা বিভিন্ন বিষয়ে আমাদের প্রশ্ন করে এবং নিজেদের প্রোজেক্ট শেষ করেও দেখায়। আমাদের ইচ্ছা আছে- স্যাটেলাইট গবেষণায় লাগে এমন ল্যাব ও প্রয়োজনীয় উপকরণের ব্যবস্থা করার জন্য কর্তৃপক্ষকে একটি প্রস্তাব দেব। ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় এমন সুযোগ-সুবিধা সম্পন্ন ল্যাব তৈরির ব্যাপারে আগ্রহও দেখিয়েছে। আমরা সবাই মিলে চাইলে বাংলাদেশে বসেই একদিন স্যাটেলাইট তৈরি করতে পারবো।জাগো নিউজ : ‘ব্র্যাক অন্বেষা’ তৈরিতে আপনাদের কতদিন সময় লেগেছে?সেঞ্চুরিয়ানস : এই প্রজেক্ট নিয়ে আমরা ২০১৫ সালের অক্টোবরে কাজ শুরু করেছি। তবে সম্প্রতি এই উপগ্রহ মহাকাশে উৎক্ষেপণের জন্য জাপান অ্যারোস্পেস এক্সপ্লোরেশন এজেন্সির (জেএএক্সএ) কাছে হস্তান্তর করেছি। কিন্তু কতটা সময় ব্যয় হয়েছে তা সঠিক বলতে পারছি না। কাজ করতে করতে আমাদের ঘুম পেলে আমরা ল্যাবে বিছানা পেতে ঘুমিয়ে পড়তাম।জাগো নিউজ : দেশের প্রথম ন্যানো স্যাটেলাইট তৈরি করায় জাগো নিউজের পক্ষ থেকে আপনাদের অভিনন্দন ও শুভকামনা।সেঞ্চুরিয়ানস : জাগো নিউজ এবং আপনাকে ধন্যবাদ।এসইউ/পিআর
Advertisement